আপনি'ই কী কেকে? আপনি' কি বাংলা, হিন্দি, তামিল, কান্নাড়, মারাঠি একাধিক ভারতীয় ভাষায় গান গেয়েছেন? হাম দিল দে চুকে সনম’ ‘ঝঙ্কার বিটস’, ‘বজরঙ্গি ভাইজান’ হয়ে অসংখ্য জনপ্রিয় গানের গায়ক কী আপনি'ই? এমন প্রশ্নের মুখোমুখি অনেকবার হতে হয়েছিল জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী কেকে'কে! কিন্তু কেন? লাজুক স্বভাবের কেকে বরাবরই মিডিয়ার থেকে নিজেকে দূরে রাখতেন।
মৃত্যুর কয়েকদিন আগেই সর্বভারতীয় এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই বলেছিলেন, 'সদ্যপ্রয়াত সঙ্গীতশিল্পী কেকে'। অসংখ্য অনুরাগীদের চোখের মণি কেকে। শুধু গানের জাদুতেই তার পরিচিতি আসমুদ্র-হিমাচলের। সেখানে কেমন দেখতে কেকে'কে একথা অনেকেই জানতেননা! এরজন্য অবশ্য কোন আক্ষেপ ছিলনা এই কিংবদন্তী শিল্পি'র। সাক্ষাৎকারে তিনি এমন ঘটনার জন্য অবশ্য অনুরাগীদের কোন দোষ দেননি কেকে। বরং এর জন্য তিনি নিজেকেই দায়ি করেছিলেন।
কেকে সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, 'আমি নিজেকে সব সময়'ই মিডিয়ার লাইম লাইটের বাইরে রাখতে চেয়েছি। সেজন্যই অনেকক্ষেত্রে অনুরাগীরা আমাকে চিনতে পারতেন না'। সঙ্গীতশিল্পী কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ ওরফে কেকে-র অকাল প্রয়াণে শোকস্তব্ধ আসমুদ্রহিমাচল।তাঁর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মঙ্গলবার গভীর রাতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লেখেন, “কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ, আমরা যাঁকে কেকে নামেই বেশি চিনি, তাঁর অকাল মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। ওঁর গান সব বয়সের শ্রোতাদের আবেগপ্রবণ করেছে। আমরা ওঁকে ওঁর গানের মধ্যে দিয়েই মনে রাখব। ওঁর পরিবারের সদস্য এবং অনুরাগীদের জন্য সমবেদনা জানাই। ওম শান্তি'!
কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ ওরফে কেকে-র আকস্মিক প্রয়াণে স্তম্ভিত দেশের সঙ্গীতমহল। কলকাতায় ২ দিনের জন্য শো করতে এসেছিলেন। মঙ্গলবার নজরুল মঞ্চে একটি অনুষ্ঠানে পারফর্ম করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। মঙ্গলবার গুরুদাস কলেজের ফেস্টে নজরুল মঞ্চে শো করছিলেন। সেখানেই খানিক অসুস্থ হয়ে পড়েন। বিরতিতে ব্যাক স্টেজে বিশ্রামও নেন। বলেনও, অনুষ্ঠানের আলো কমাতে। তবে অনুষ্ঠানে দিব্যি মাতিয়ে রাখেন হিন্দি-বাংলা গান গেয়ে। আর সেই শোয়ের পর হোটেলে ফিরে যেতেই অঘটন। অসুস্থ হয়ে পড়ে যান কেকে।
কেকে-র আকস্মিক প্রয়াণ কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না অনুরাগীরা। মাত্র ৫৩ বছর বয়স যাওয়ার নয়। এত গান, এত দরাজ গলা আর শোনা যাবে না, ভাবতেই পারছেন না সঙ্গীতমহলের দিকপালরা। ইতিমধ্যেই কলকাতায় এসে পৌঁছলেন প্রয়াত গায়ক কেকে-র স্ত্রী-পুত্র। বুধবার সকাল ৯টা নাগাদ কলকাতা বিমানবন্দরে নামেন কেকে-র স্ত্রী জ্যোতি এবং পুত্র নকুল। এয়ারপোর্ট থেকেই সোজা তাঁরা গাড়িতে করে চলে যান একবালপুরের সিএমআরআই হাসপাতালে।
আরও পড়ুন: এয়ারপোর্টে গান স্যালুটে বিদায় কেকে-কে, প্রয়াত গায়কের স্ত্রীর সঙ্গে কথা বললেন মমতা
এদিকে, আজ সকালে শুরু হয়েছে কেকে-র মরদেহের ময়নাতদন্ত। ময়নাতনন্তের পরই কেকে-র মরদেহ তুলে দেওয়া হবে স্ত্রী-পুত্রর হাতে। সম্ভবত আজই দেহ নিয়ে মুম্বইয়ে উড়ে চলে যাবেন কেকে-র স্ত্রী-পুত্র। পাশাপাশি, কেকে-র মৃত্যুতে শোকজ্ঞাপন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মঞ্চে থাকা স্পটলাইট বারবার বন্ধ করতে বলেছিলেন কেকে। তাঁর শরীরে যে একটা অস্বস্তি হচ্ছিল, সেটা অনেকেরই চোখে পড়ে। কেকের অনুষ্ঠানের পরিচালনার দায়িত্বে থাকা কেউ কেউ বলছিলেন, ‘এদিন মঞ্চে প্রচণ্ড ঘামছিলেন গায়ক। কিছুটা অস্বস্তিও বোধ করছিলেন’।
তারপরই শো’ শেষে হোটেলে ফেরার পথেই গাড়িতে শীত শীত ও অনুভব করেন কেকে। গাড়িতে হোটেলে ফেরার পথে গাড়ির এসিও বন্ধ করতে বলেন তিনি। হোটেলে ফিরে যাওয়ার পরই খানিক অসুস্থ হয়ে পড়েন। CMRI হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। এই ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে সঙ্গীত জগতে।