চলতে চলতে মেরে ইয়ে গীত ইয়াদ রাখনা, কভি অলবিদা না কেহেনা .... সত্যিই যেন বিদায় জানানোর আজ মন নেই! একের পর এক সঙ্গীত জগতের নক্ষত্রপতন। আজ সকালেই আরব সাগরের তীর হতে খবর এল সকলের প্রিয় বাপ্পীদা আর নেই! দিনের শুরু যে এমন হবে ভাবতে পারেননি কেউই.... বাঙালি গতকালের শোক ভোলেনি এখনও তার মধ্যেই আজকের এই ঘটনা যেন পাহাড় সম যন্ত্রণায় ফেলে দিল।
বোম্বের ডিস্কো কাঁপানো সেই গান থেকে প্রেমিকের মনে আমরা অমর সঙ্গী, বাপ্পী লাহিড়ী (Bappi Lahiri) চিরকাল এভারগ্রীন। বাংলাকে ভোলেননি কখনই, তার রক্তে মজ্জায় ছিল নিজের নাড়ির প্রতি ভালবাসা, অনেকেই তাকে খুব কাছ থেকে চিনতেন আবার কেউ কেউ দুর হতেই তার সৃষ্টি তথা নিজস্বতাকে ভালবেসেছেন। গানের প্রতি উন্মাদনা, সুরের একদম ভিন্ন খেলায় মাতিয়েছেন গোটা ভারতবাসীকে..... জেনে নিন তার সম্পর্কে অজানা বেশ কিছু তথ্য.....
নিজের আসল নাম ছিল অলোকেশ লাহিড়ী, বাবা অপরেশ লাহিড়ীর হাত ধরেই এসেছিলেন স্বপ্ননগরীতে। দর্শকদের মন জয় করেন বাপ্পী নামে, সেই থেকেই ডিসকো কিংয়ের পরিচয় বাপ্পী লাহিড়ী।
সঙ্গীত ছিল পারিবারিক সূত্রেই, তবে সবথেকে বেশি মানতেন শ্রদ্ধেয় কিশোর কুমারকে। রক্তের সম্পর্ক ছিল না বটে, তবে কিশোরের মা বাপ্পী লাহিড়ীর মাকে নিজের মেয়ের মত দেখতেন। নিজের ছেলের থেকেও বেশি কিশোর কুমার তাঁকে ভালবাসতেন। ছোটবেলায় বেড়ে ওঠা, একসঙ্গে কাটানো মুহূর্ত স্মৃতি চারণ করতে একেবারেই ভূলতেন না, তাই তো কিশোরের মৃত্যুর পর একেবারেই নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলেন, সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সুরের জগতে আর থাকবেন না... পরে অবশ্য অনুরোধের বশেই সিদ্ধান্তে বদল আনেন।
সিলভার স্ক্রিনে এসেছিলেন মামা কিশোর কুমারের হাত ধরেই। 'বাড়তি কা নাম দাড়ি' ছবিতে ১৯৭৪ সালে অভিনয় করেন তিনি। স্বল্প হলেও নিজের অভিনেতা হিসেবে কারিগরি দক্ষতা বেশ দেখিয়েছিলেন।
নিজে যথাসাধ্য খেটেখুটে সুর দিতেন শব্দয়। চেষ্টা করতেন নতুনত্ব যাতে অবশ্যই থাকে, সেই কারণেই র্যাপার ড্রে এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তিনি। 'কলিয়ন কাঁ চমন' গানের নকল করতেই ২০০৩ এ কপিরাইটের পদক্ষেপ নেন তিনি। পরে অবশ্য আমেরিকান সেই র্যাপার বাপ্পীকে কৃতিত্ব দিতে একেবারেই ভোলেননি। হাসিমুখে তিনিও মাফ করে দিয়েছিলেন বটে!
শেষবার এর মত গানে প্রাণ দিয়েছিলেন ২০২১ সালে। আধ্যাত্মিক গান গণপতি বাপ্পা মরিয়া ট্র্যাকে গেয়েছিলেন শিল্পী অনুরাধা জুজু।
মুম্বাইয়ের বাসিন্দা হলেও আদতে বাঙালি বলে কথা। রাজনীতি থাকবে না সে আবার হয় নাকি! যোগ দিয়েছিলেন ভারতীয় জনতা পার্টিতে - ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে শ্রীরামপুর থেকে দাঁড়িয়েছিলেন, তবে হেরে যান প্রতিপক্ষ কল্যাণ বন্দোপাধ্যায়ের কাছে।
মাত্র তিন বছর বয়সেই তবলার বোল বুঝতে শুরু করেছিলেন তিনি। রীতিমত তবলার অভ্যাস করতেন, সঙ্গীতের আরাধনা করতেন, সঙ্গেই গবেষণা কম ছিল না তার। সুর তাল আর ছন্দে এতই মশগুল থাকতেন, বালিশেও তবলা বাজাতেন শিল্পী।
নিজের সুর ছাড়া অন্য কারওর গানে গাইতেন না, তবে ছেদ পড়েছিল সঙ্গীত পরিচালক বিশাল শেখরের ক্ষেত্রে। ২০০৬ সালে 'ট্যাক্সি নম্বর ৯২১১' সিনেমায় "বোম্বাই নগরিয়া" গাওয়ার পরই ঝড় উঠেছিল বলিউডের ময়দানে।
'গোল্ড ইস মাই গড'- বলতেন তিনি। সোনা ছাড়া সেভাবে কিছুই পড়তেন না। তবে এক ভক্ত যখন জানতে চান, তার অভিনব এই স্টাইলিং প্রসঙ্গে, জানিয়েছিলেন এলভিস প্রিসলির থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই এমন সাজতেন তিনি। চোখে কালো চশমা, অঙ্গে সোনা একেবারেই যেন রক আমেজে ভরিয়ে তুলতেন চারিদিক।
ছিল বিশ্ব রেকর্ড! গিনেস বুকে নাম তুলেছিলেন নিজের পারদর্শিতায়... এক বছরে ৩৩টি সিনেমায় ১৮০ টি গান? ভাবা যায়! অসম্ভব কে সম্ভব করার নামই ছিল বাপ্পী লাহিড়ী।