গায়ে মোড়া লাল শালু। রুদ্রাক্ষের মালা ঝুলছে গলায়। মেক-আপ রুমে বসে টুক-টাক করে মোবাইলে টাইপ করে চলেছেন 'বামাক্ষ্যাপা'! কী লিখছেন? উত্তর মিলবে 'দলছুটের কলম' বইতে। এবারের বইমেলায় বার্তা প্রকাশনীর স্টলে যা রীতিমতো হটকেকের মতো বিকোচ্ছে।
টেলিদর্শকদের কাছে তিনি প্রিয় 'সাধক বামাক্ষ্যাপা'। সপ্তাহ খানেক আগেই শেষ হয়েছে 'মহাপীঠ তারাপীঠ'। টেলিপর্দায় আর দেখা যাবে না বামাকে। অতঃপর ভক্তদের মন খারাপ। আর তার মাঝেই সুখবর দিয়েছেন সব্যসাচী চৌধুরী। প্রথমবার লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেই দারুণ সাফল্য। বইমেলায় হিট সব্যসাচীর 'দলছুটের কলম'।
বার্তা প্রকাশনীর স্টলে প্রবেশ করেই চোখে পড়ল রং-চঙে 'দলছুট'-এর মলাট। লেখক সব্যসাচী চৌধুরি। মিনিট দশেকের মধ্যেই ভীড়ে তিন-চারজন ক্রেতার প্রশ্ন- আচ্ছা 'দলছুট' বইটা হবে? প্রকাশক সৌরভ বিষাই জানালেন, "যা ছিল সব বেরিয়ে গেছে গত কয়েকদিনে, এখন আর মাত্র কয়েকটা বাকি।" দেরি না করে ক্রেতারাও ঝটপট কিনে ফেললেন। প্রথমবার লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেই নিদারুণ সাফল্যে উচ্ছ্বসিত সব্যসাচী।
বার্তা প্রকাশনীর প্রকাশক সৌরভ জানালেন, "বইমেলার জন্য মোট ৫০০টি কপি ছাপা হয়েছিল। গত কয়েকদিনেই ৪০০টির ওপর কপি বিক্রি হয়ে গিয়েছে। আশা করি, মেলার শেষ তিন দিনে বাকিগুলোও বিক্রি হয়ে যাবে।"
সব্যসাচী বললেন, সত্যি বলতে কী আমার বই লেখার কোনও ভাবনাই ছিল না। মজার ছলেই লিখতাম। মাঝেমধ্যে সেগুলোই সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করতাম। তবে আগেও প্রচুর লিখেছি, কিন্তু কোনওদিন নেটদুনিয়ায় শেয়ার করার কথা মনে হয়নি। সেসব লেখা আমার ঝুলিতেই থাকত। তবে গত দু'বছর ধরে ফেসবুকে আমার লেখালেখি দেখে অনেকেই প্রশংসা করেছেন। সেখান থেকেই বেশ কজন প্রকাশক আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে। তাঁরাই প্রথম প্রস্তাবটা রাখেন যে, সবকটা লেখা সংকলন করে একসঙ্গে যদি বইয়ের আকারে বের করা যায়। বার্তা প্রকাশনীর তরফেও প্রস্তাব আসে। প্রকাশক সৌরভের সঙ্গে কথা বলার পরই আমি সবুজ সংকেত দিই।
এত ব্যস্ততার মাঝেও লেখালেখি চালানোর বিষয়টা সব্যসাচীর কাছে একপ্রকার জলভাতের মতোই। অভিনেতার মন্তব্য, "'দলছুটের কলম' বইটির অধিকাংশ লেখার জন্মই আমার মেকআপ রুমে। কিংবা শটের ফাঁকে যখন সময় পেতাম লিখে ফেলতাম। আসলে লেখার বিষয়টা তো এখন আর শুধু কাগজ-কলমে নেই, উন্নত প্রযুক্তি। মোবাইলে টাইপ করেও লেখা যায়। তাই যখনই 'মহাপীঠ তারাপীঠ'-এর সেটে সময় পেতাম লিখে ফেলতাম। আবার শটের ডাক পড়লে চলে যেতাম। এভাবেই পুরো বইটা লেখা।"
প্রকাশক সৌরভ যখন জানিয়েছিলেন যে পাঁচশো কপি ছাপানো হবে, তা শুনে তো সব্যসাচীর হতবাক হওয়ার জোগাড়! খানিক সন্দিহান হয়েই অভিনেতা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছিলেন, "এত বই কেউ কিনবে?" তবে বইমেলায় 'দলছুটের কলম'-এর বিক্রির হার দেখে 'বামা' সব্যসাচীর আক্ষেপ, "এখন মনে হয় আরও কপি ছাপলেই বোধহয় ভাল হত।" তবে এই বিষয়ে প্রকাশক সৌরভ বিষাই আশ্বাস দিলেন যে, বইমেলার পরই 'দলছুটের কলম'-এর দ্বিতীয় সংস্করণ বের করা হবে। সব্যসাচীর লেখা বইয়ের বিক্রির হার দেখেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া।
অন্যদিকে, অভিনেতা-লেখক সব্যসাচী চৌধুরী কিন্তু প্রকাশক সৌরভ বিষাইকে অন্য প্রকাশনীর তুলনায় এগিয়ে রেখেছেন একটি বিশেষ বিষয়ে। বার্তা প্রকাশনী যুবপ্রজন্মের নবাগত লেখক-লেখিকাদের উদ্বুধ্ব করতে বাইশের বইমেলায় ১৩৬টি নতুন বই প্রকাশ করেছেন। যা কিনা এই বছর রেকর্ড সংখ্যক। আর সেই জন্যই সৌরভের হাতে নিজের কাঁচা ড্রাফ্ট তুলে দিতে দ্বিধা করেননি সব্যসাচী। যে 'দলছুটের কলম' এবারের বইমেলায় পাঠকদের ঝুলিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এমন সাফল্যে আবারও কি কলম ধরবেন সব্যসাচী? উত্তর, "সময়-সুযোগ পেলে নিশ্চয়।"
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন