একের পর এক সিঙ্গল স্ক্রিন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, সদ্য তালা ঝুলল মিত্রার দরজাতেও। অবধারিত প্রশ্ন ওঠেই, এবার তালিকায় আর কোন কোন হল? বিগত কয়েক বছরে উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতা মিলিয়ে বেশ কয়েকটি সিনেমা হল বন্ধ হয়েছে। এলিট, মেট্রো, চ্যাপলিন, মালঞ্চদের আভিজাত্য হার মেনেছে মাল্টিপ্লেক্সের আধুনিকতার কাছে। যে বাতিওয়ালা হলের আলোটা জ্বালিয়ে ঘরে ফিরতেন, সিনেমা দেখিয়ে তাঁর নিজের ঘরের বাতি জ্বালাবার সামর্থ্য হচ্ছে না। সুতরাং ঝুলছে নোটিস, বন্ধ হয়ে যাচ্ছে হল।
সম্প্রতি মিত্রা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর সেই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে। হাতিবাগানেই রয়েছে আরও তিনটি সিঙ্গল হল। আশঙ্কা, সেগুলোতেও তালা ঝুলবে না তো? টাকি শো হাউস, দর্পণা চললেও সেখানে খুব একটা মুক্তি পাচ্ছে না বড় ব্যানারের ছবি। সেই নিরিখে অবস্থা কিছুটা ভাল মিনারের, যদিও তা স্টার মাল্টিপ্লেক্সের তুলনায় নিতান্তই ম্লান। কলেজ পড়ুয়াদের কল্যাণে এককালে বেশ ভালই চলত বীণা, কিন্তু এখন সেখানে ছারপোকার বাস।
আরও পড়ুন: শেষবারের মতো বন্ধ হলো মিত্রা সিনেমা
শিয়ালদহের প্রাচী চলে ঠিকই, কিন্তু মাল্টিপ্লেক্সের আরাম এখনও দিতে পারে নি। ধর্মতলা চত্বরে কিছু হল থাকলেও, তাদের অবস্থাও তথৈবচ। রক্সি, নিউ এম্পায়ার, প্যারাডাইস, রিগাল, সবকটিই চলছে ঠিকই, কিন্তু অবস্থা ভাল নয় রিগালেরও।
দক্ষিণের তুলনায় এখনও উত্তরে সিঙ্গল স্ক্রিনে ছবি দেখার চল বেশি। অথচ দক্ষিণে নবীনা কিংবা প্রিয়ার মতো হলের অবস্থা অনেক ভাল। এতটাই, যে সদ্য হল সারাই করেছেন প্রিয়ার সর্বেসর্বা অরিজিৎ 'দাদুল' দত্ত। শহরের যেসব সিঙ্গল স্ক্রিন হল এখনও চলছে, সেগুলি কী এমন করছে যা বাকিরা করছে না?
প্রাচীর কর্ণধার বিদিশা জানালেন, "দর্শকের চাহিদা অনুযায়ী একটা ফুড কোর্ট তৈরি করেছি, খাবার সিট পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে আসা হয়। কম খরচে থ্রিডি স্ক্রিন করেছি। এতে দর্শক বাড়ছে। সাউন্ড সিস্টেমও ভাল করেছি। প্রত্যেকটা ছবির একটা ফ্যান বেস থাকে, তাদের কমর্ফটটা দিতে পারাটাই আসল।"
ওদিকে অরিজিৎ দত্ত বলেন, "জায়গার ওপর ছবির চলা না চলা নির্ভর করে। যেখানে হিন্দি ছবি চলার কথা, সেখানে বাংলা চলবে না। প্রিয়ায় তো প্রাইম টাইমে বাংলাও খুব ভাল চলে।"
নিয়মিত ছবি আসছে মেনকা, অশোকা, বসুশ্রী, অজন্তাতে। কিন্তু তাতে ব্যবসা যে খুব লাভজনক হচ্ছে, তা নয়। এক সূত্রের কথা অনুযায়ী, হিন্দি সিনেমায় কিছু ব্যবসা হলেও বাংলা ছবি চলছে না প্রায়। আবার একাংশের বক্তব্য, কিছু স্ক্রিন যদি ব্যবসা করতে পারে, তাহলে বাকিরা কেন পারছে না? কারণ হিসেবে যে যুক্তি সবচেয়ে আগে উঠে আসছে, তা হলো, অনেকে ব্যবসা হচ্ছে না বলেই হলের মেরামতি করছেন না।
সেই ভঙ্গুর দশা দেখে মুখ ফেরাচ্ছেন দর্শক। কিন্তু হল মালিকদের কথায়, "কর্মীদের পারিশ্রমিক দেওয়ার মতো ব্যবসাটাও যেখানে খুব কষ্টে হচ্ছে, সেখানে হল সারাইয়ের টাকা দেব কী করে?" যদি পকেটের রেস্ত থেকে করাও যায়, দিনের শেষে এই গ্যারান্টিও নেই যে খরচ করা অর্থটুকুও ফেরত আসবে, লাভ তো দূরের কথা। কিন্তু একেবারে ব্যবসা তুলে দেওয়ার কোথাও এখনই ভাবছেন না এই মালিকরা। সেটুকুই যা আশার আলো।