Apsara Guhathakurta in Mrs Woman of the Universe: ডোমিনিকান রিপাবলিকে সম্প্রতি বসেছিল উওম্যান অফ দ্য উইনিভার্স পেজেন্ট। কলকাতার অপ্সরা গুহঠাকুরতা, যিনি মিসেস ইন্ডিয়া ইউনিভার্স খেতাব জিতে এসেছিলেন সংবাদের শিরোনামে, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক পেজেন্টের সেকেন্ড রানার-আপের স্থানটি অর্জন করেছেন। দেশে ফিরে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-র সঙ্গে একান্ত কথোপকথনে উঠে এল তাঁর মিসেস ইন্ডিয়া হয়ে ওঠার কথা ও সাম্প্রতিক পেজেন্টের খুঁটিনাটি। একজন বিবাহিত মেয়ে যখন এমন একটি কেরিয়ার বেছে নেন, তখন তাঁর প্রতি সমাজের মনোভাব কেমন হয়, সেই কথাও উঠে এল আলাপচারিতায়।
তোমাকে আরও একবার অভিবাদন জানাই, উওম্যান অফ দ্য উইনিভার্স কনটেস্টের গল্পটা একটু বলো, কেমন ছিল অভিজ্ঞতা।
আমাদের প্রথম দিন ছিল রিহার্সাল। দ্বিতীয় দিন সুইমওয়্যার রাউন্ড সকালে ও বিকেলে উইমেনস হিউম্যান রাইটস ফোরাম ছিল একটা যেখানে প্রত্যেক প্রতিযোগীকে মেয়েদের অধিকার নিয়ে একটা প্রেজেন্টেশন ও স্পিচ দিতে হয়েছিল। আমার কনসেপ্টটা ছিল সেলিব্রেট দ্য গডেস উইদিন। আমরা তো মা দুর্গাকে গডেস অফ স্ট্রেংথ অ্যান্ড কারেজ বলি। আমার মনে হয়, প্রত্যেক নারীর মধ্যেই মা দুর্গা আছেন। আমাদের মধ্যের সেই দেবীকে সেলিব্রেট করা উচিত। সেটাই আমি বলেছিলাম আমার স্পিচে। এর পরে তৃতীয় দিন সকালে ছিল ন্যাশনাল কস্টিউম রাউন্ড।
আমি পিয়ালি গঙ্গোপাধ্যায়ের বানানো একটা লেহেঙ্গা প্লাস শাড়ির কম্বো আউটফিট পরেছিলাম। ওই দিনই ট্যালেন্ট রাউন্ড ছিল বিকেলে। সেখানে প্রত্যেকেই তাদের মতো করে পারফর্ম করেছিল। আমি একটা সেমি-ক্লাসিকাল পারফর্ম করি। আমার পারফরম্যান্স এত ভালো লেগেছিল সকলের যে পরের দিন ফিনালে-তেও আমাকে আবার পারফর্ম করতে বলা হয়। আর ফিনালে-তে ছিল ইভনিং গাউন রাউন্ড। ওই গাউনটা বানিয়েছেন দিল্লির ডিজাইনার পল্লবী মোহন। এই উওম্যান অফ দ্য ইউনিভার্স কনটেস্টের উইনার হয়েছেন বুলগারিয়া থেকে, সেকেন্ড রানার-আপ রাশিয়া থেকে আর সেকেন্ড রানার আপ আমি।
আরও পড়ুন: দুঃস্থদের উপহার নুসরতের, অনন্য দীপাবলির উদযাপনে নায়িকা
তোমার এই মডেলিংয়ে আসার ইচ্ছেটা কি হঠাৎ নাকি আগেও মডেলিং করেছ?
স্কুল-কলেজ লাইফে মডেলিং করতাম। কিন্তু বাবা ঠিক রাজি হননি যে আমি এটাকে পেশা হিসেবে নিই। আমার বাড়িতে সবাই শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত। তাই বাড়িতে পড়াশোনাটা খুব ইম্পর্ট্যান্ট ছিল। বাবা-মা বলতেন যে তুমি পড়াশোনা শেষ করে আগে চাকরি করো। তার পরে তোমার যেটা ইচ্ছে হয় কোরো। আমি তাই পড়াশোনা করতে থাকলাম। মডেলিং ছেড়ে দিলাম। গ্র্যাজুয়েশনের পরে আমি স্কুলে পড়াতে শুরু করি। প্রথমে মহাদেবী বিড়লা শিশু বিহার, তার পরে গার্ডেন হাই স্কুলে ১০ বছর পড়িয়েছি। গার্ডেন হাই-তে জুনিয়র ও সিনিয়র সেকশনের ডান্স টিচারও ছিলাম। আমি ওড়িশি-তে মাস্টার্স করেছি আর ভরতনাট্যমেও ফর্মাল ট্রেনিং নিয়েছি।
তুমি যে বিয়ের পরে এলে মডেলিংয়ে তোমার স্বামী বা পরিবার নিশ্চয়ই খুবই সাপোর্ট করেন...
হ্যাঁ, আমার হাজব্যান্ড সৌম্যজিৎ আমাকে সব রকম ভাবে সাপোর্ট করে, আমার সব কাজে উৎসাহ দেয়, কোনও কাজে বাধা দেয় না। আমার ছেলে ক্লাস ওয়ানে পড়ে এখন। ও যদিও ছোটবেলা থেকেই আমাকে দেখছে চাকরি করতে কিন্তু তার পরেও তো মন খারাপ হয় যখন কাজের জন্য বাইরে যেতে হয়। এই যেমন এই পেজেন্টে গিয়েছিলাম একদম একা। সৌম্যজিতও যেতে পারেনি। আমি যখন বাইরে যাই কাজে, আমার ছেলেকে আমার মা আর সৌম্যজিৎ, ওরা দুজনই মূলত সামলায়।
আরও পড়ুন: আইএএস হওয়ার ইচ্ছে ছিল, হয়ে গেলেন অভিনেত্রী
বেশ, তুমি একটু বলো যে মিসেস ইন্ডিয়া পেজেন্টে কীভাবে অংশ নিলে, নিজে থেকেই নাকি কেউ বলেছিলেন?
না একদমই হঠাৎ হয়েছিল। ফেসবুকে রেজিস্ট্রেশনের খবরটা দেখে আমি রেজিস্টার করে ফেলি। অডিশনে সিলেক্টেডও হয়ে যাই। তার পর কলকাতা অডিশনে ফাইনালিস্ট হলাম, মেন কনটেস্টে গেলাম-- এইভাবেই হল।
তুমি কি এখনও শিক্ষকতা করো?
না আমার একটা নেল স্টুডিও আছে। সেটাই এখন দেখাশোনা করি আর প্রফেশনাল গ্রুমিং কোর্স করাই। পেজেন্ট গ্রুমিং করাই। আগে নিয়মিত ডান্স পারফরম্যান্স থাকত। এখন একটু কমে গিয়েছে। আর এই যে পেজেন্টে গিয়েছিলাম ওদেরই একটা মিস পেজেন্ট হয়-- ওই পেজেন্টের জন্য আমাকে ইন্ডিয়া ও এশিয়ার ইন্টারন্যাশনাল ডিরেক্টর হিসেবে সিলেক্ট করা হয়েছে। এখন সেটা নিয়েও একটু ব্যস্ততা শুরু হয়ে যাবে। কারণ পেজেন্টটা হবে ২০২০-র সামারে। আর নভেম্বরে মিসেস ইন্ডিয়া আই অ্যাম বিউটিফুল পেজেন্টে আমি শো ডিরেক্টর হিসেবে থাকছি।
আচ্ছা আগে তো একটাই মিস ইন্ডিয়া বা মিসেস ইন্ডিয়া পেজেন্ট হতো, এখন তো প্রচুর পেজেন্ট হয়...
হ্যাঁ তা হয় কিন্তু ইন্ডিয়াতে সব পেজেন্টের কিন্তু ইন্টারন্যাশনাল টাই-আপ থাকে না। আমি যেটা জিতেছিলাম, মিসেস ইন্ডিয়া ইউনিভার্স-- ওটার ইন্টারন্যাশনাল টাই আপ ছিল বলেই কিন্তু আমি এই উওম্যান অফ দ্য ইউনিভার্স-এ যেতে পেরেছি।
এর পরে কি তোমার অভিনয়ে আসার ইচ্ছে রয়েছে?
সেটা ভীষণভাবেই রয়েছে। আমি একটু ভালো চরিত্রে অভিনয় করতে চাই। এর মধ্যে যে অফারগুলো এসেছিল, তার বেশিরভাগটাই ছিল হয় এক্সপ্লিসিট নয়তো আমাকে বলা হয়েছিল যে ইনহিবিশন ছাড়া অভিনয় করতে হবে। আমি ঠিক ওই ধরনের চরিত্রে কমফর্টেবল নই। কেমন একটা মনে হয় যে বিবাহিত মেয়ে মডেলিংয়ে আসছে বলেই যেন সবাই ধরে নিয়েছে সে সবকিছু করতে রাজি থাকবে। আমি যে সব মিটিংয়ে এমন একটা হাবভাব দেখেছি, সেখানে স্পষ্ট বলেছি যে কোনও কম্প্রোমাইজ, স্যাক্রিফাইজে আমি বিশ্বাসী নই আর বোল্ড সিন করতে রাজি নই। তার পরে যদি সুযোগ আসে তো হবে।