কণীনিকা বন্দোপাধ্যায় ফিরছেন বড়পর্দায়। তাঁকে বেশ গুরুত্বপূর্ন চরিত্রে দেখা যেতে চলেছে সুকন্যা ছবিতে। যেখানে তিনি অভিনয় করছেন মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর ভূমিকায়। হঠাৎ এহেন ছবিতে কেন? কিংবা মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করতে গিয়ে কোনও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলেন তিনি?
সুকন্যা ছবিটি দেখাবে কীভাবে রাজ্যের একজন মুখ্যমন্ত্রী নিজের লড়াইয়ের মাধ্যমেই রাজ্যের অন্যান্য মেয়েদের ক্রমাগত এগিয়ে যাওয়ার কথা বলছেন। সেরকম একটি গুরুত্বপুর্ন চরিত্রে অভিনয় করে তাঁর অনুভূতি কেমন হল, সেটা জানতেই ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার তরফে ফোন গিয়েছিল অভিনেত্রীর কাছে। আজকে তাঁর চূড়ান্ত ব্যস্ততা। একেই ছবি রিলিজ। তিনি নিজের ব্যস্ত শিডিউল থেকেই ফোনের মাধ্যমে উত্তর দিলেন।
মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করে কেমন লাগল তাঁর? এই নিয়ে তিনি জানালেন, "দেখো, মাটি থেকে উঠে এসে উনার জার্নি, তারপর মুখ্যমন্ত্রী হওয়া এবং তারপর কীভাবে তিনি অন্য মেয়েদের টেনে তুলেছেন সেটা নিয়েই গল্প।" তাঁর চরিত্রে অভিনয় করা নেহাতই সহজ ঘটনা নয়। একটি চরিত্রকে পর্দায় ফুটিয়ে তুলতে যথেষ্ট ভাবতে হয়। আর সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকায়। তিনি কোনও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন? সাফ জবাব কণীনিকার। বলছেন...
"না, একদম না। এটা উনার বায়োগ্রাফি না। উনার আদলে শুধু একটা গল্প। একদম ফিকশনাল একটা চরিত্র। মানুষ যদি রাজনৈতিক মনোভাব মাথায় না নিয়ে যায়, তাহলে আশা করছি দর্শকদের খারাপ লাগবে না। কিন্তু, বর্তমানে রাজ্যের যা পরিস্থিতি। আমি একেবারেই উনার কোনও কপি করিনি। আমার নিজের মতো করে অভিনয় করার চেষ্টা করেছি। কোনরকম প্রস্থেটিক ব্যবহার করা হয়নি। শুধুমাত্র, সাদা শাড়ি আর হাওয়াই চটি দিয়েই তো দিদির ব্যাখ্যা হয়না। উনাকে ব্যাখ্যা করতে গেলে আরও অনেককিছু করতে হয়। যেগুলির কিছুই করা হয়নি। আমি উনার মত করে কথাও বলি নি পর্যন্ত। হ্যাঁ, গল্পটা উনাকে ধরেই।"
কন্যাশ্রী প্রকল্প পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এমন একটি প্রকল্প, যা গ্রামে গঞ্জে এমনকি দরিদ্র পরিবারের কন্যা সন্তানদের ভবিষ্যত উজ্জ্বল করতেই চালু করা হয়েছিল। যাতে, তাঁরা নিজেদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে, তাঁদের যেন ভবিষ্যতের স্বপ্ন সত্যি হয়, উদ্যোগ ছিল এমনই। কিন্তু কণী এমন কোনও মেয়েকে দেখেছেন যার স্বপ্ন সত্যি হয়েছে এর কারণে? উত্তরে তিনি বললেন...
"আমি কোনও মেয়ের স্বপ্ন সত্যি হতে দেখিনি। কিন্তু, হ্যাঁ! আমি এরকম অনেক আলোচনা সভায় গিয়েছি। এর থেকে কে উন্নতি করবে আর কে অবনতি করবে, সেটা নির্ভর করে মানুষের ওপর। কন্যাশ্রীতে কী হয় আমি সেটাও ঠিক করে জানি না, স্কলারশিপের মত হয়তো। কিন্তু, আদৌ সকলেই সেই টাকা শিক্ষায় লাগায় কিনা, এই নিয়ে আমার জ্ঞান নেই। সত্যিই যদি ভাল কাজে লাগায়, তাহলে খুবই ভাল। অনেকেই মোবাইল কিনে সেই টাকা খরচ করতেই পারে। খারাপ দিক থাকতেই পারে। আমি ভাল দিক ধরেই নিলাম, যে গ্রামের মেয়েরা পড়াশোনা করছে সেই টাকায়। লক্ষ্মীর ভান্ডার পেয়ে যেমন মানুষ কাজ করা বন্ধ করে দিচ্ছে, সেটা হলে মুশকিল। সাধারণ মানুষ হোক বা আমরা গ্ল্যামারাস জগতের মানুষ বলে যারা বিবেচনা করেন যে অনেক পয়সার অধিকারী। এমনটা নয়, মাসের শেষে EMI দিতে গেলে আমাদের ভাবতে হয়। এমন অনেক আর্টিস্ট আছেন যারা না খেতে পেয়ে মারা যাচ্ছেন।"
পাশাপাশি অভিনেত্রী আরও জানালেন, "আমি আসলে, এই পক্ষপাতিত্বে নেই যে খাটবো না, কিন্তু বাড়িতে বসে টাকা পাব। আমরা কেউ কম না। যে মহিলা বাড়ির কাজ সামলাচ্ছেন, সংসারের রান্না করছেন, তিনি কিন্তু দুপুরের দিকে অন্য কাজ করতে পারেন। সেটা নিয়ে যদি কিছু করা যেত, আমি খুশি হতাম। কিন্তু, এই কন্যাশ্রী এবং লক্ষ্মীর ভান্ডার এসব নিয়ে খুব একটা বলার নেই। বাকি মহিলারা এগুলোকে কীভাবে ব্যবহার করছে আমার সেই নিয়ে আইডিয়া নেই।" কিন্তু, এই চরিত্রে অভিনয়, তাঁকে কটাক্ষের পড়তে হলে? এখানেও তাঁর জবাব, "আমি একজন অভিনেত্রী, কেবল অভিনয় করেছি। তাঁর যাত্রাপথ দেখানো হয়েছে। গল্পটা ভীষণ ভাল। দিদি হয়তো অনেকটা পজিটিভ চিন্তা নিয়েই এই প্রকল্প শুরু করেছিলেন বলেই আমার বিশ্বাস।"