'ভবিষ্যতের ভূত' ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। যদিও ছবিটা মুক্তি পাওয়ার পর হল থেকে তুলে নেওয়া হয়। কিন্তু এই অভিনেতার কাছে বিষয়গুলো চেনা, স্পষ্ট কথা বলার জন্য মাশুলও গুনতে হয়েছে। এর আগেও তাঁর নাটকের শো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তিনি অভিনেতা কৌশিক সেন। দেশ-কাল-সংস্কৃতি নিয়ে কথা বললেন নাট্যকার-অভিনেতা।
'নগরকীর্তন' দেখলেন?
শেষ দশ বছরে আমার দেখা সেরা ছবি।
ঋদ্ধির অভিনয়...
ওর অভিনয় নিয়ে কিছু বলব না। সেটা মানুষ নিজেই দেখুন।
ছেলে নয়, অভিনেতা হিসাবে...
তার আগে দুজনের কথা একটু বলে নিই, ছবিটা কৌশিক (গাঙ্গুলি) ছাড়া আর কেউ বানাতে পারত না, এবং ঋত্বিক (চক্রবর্তী)। ও না থাকলে ঋদ্ধির পক্ষে এত ভাল অভিনয় করা সম্ভব হত না।
তবে ঋদ্ধির অভিনয় নিয়ে যদি বলতে হয় তাহলে, কোনও বিনয় না করে বলছি, ঋদ্ধি যেটা করেছে আমি পারতাম না।
আরও পড়ুন: ভবিষ্যত অনিশ্চিত, ‘ভূতের’ হানার মুখে অনীক দত্তের সিনেমা
আর 'ভবিষ্যতের ভূত'-এ কাজ করতে চাওয়ার পিছনে কারণ কী?
অনেকগুলো কারণ ছিল। প্রথমত তো অনীক দত্তর সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছে ছিল। তাছাড়াও চিত্রনাট্যে এত লেয়ারস আছে যেখান থেকে আমার সমাজটাকে চেনা যায়। মানুষের মজা পাওয়ার উপাদান আছে, কিন্তু শুধু বিনোদন নয়। কেবলমাত্র বিনোদন হলে রাজি হতাম না।
আপনার চরিত্রটা...
আমি যে চরিত্রটা করেছি তাঁকে ভীষণ চেনা যাবে। একজন রাজনৈতিক নেতা। তিনি কী করেন না করেন পরিস্কার বোঝা যাবে।
এখন তো বাংলা ছবিতে নানারকম বিষয় নিয়ে কাজ হচ্ছে।
আমার নিজের সবসময় মনে হয় নানানরকম বিষয় নিয়ে কাজ হলেও খুব সন্তর্পনে রাজনৈতিক জায়গাটা আমরা বাদ রাখি। কায়দা করে সেই চেষ্টা করা হয়। সেটা আমি মনে করি ঠিক নয়। ছবি তার রাজনৈতিক স্বরটা হারিয়ে ফেললে সেটা ভীষণ বেদনাদায়ক।
আরও পড়ুন, ‘ভবিষ্যতের ভূত’ দেখতে চেয়ে আগেই অনীক দত্তকে ই-মেল করেছিলেন রাজ্য গোয়েন্দা আধিকারিক
কৌশিক সেন স্পষ্টবক্তা, সেদিক থেকে এই চরিত্রটা কতটা মানানসই?
সেরকমভাবে দেখলে আমার চরিত্রটা নেগেটিভ। এই ধরণের ছবিতে একটা পলিটিক্যাল কনশাসনেস বা সচেতনতা কাজ করে। আর আমার মনে হয় একজন অভিনেতার কোনও রাজনৈতিক দলে যোগ দেওয়া উচিৎ নয়, তাহলে একটা চরিত্রকে দেখার খোলা চোখটা বন্ধ হয়ে যায়।
কৌশিক সেন কথা বললে সাধারণ মানুষ তো শুনবেন।
শুনবেন না! আমাদের এখানে রাজনৈতিক মঞ্চে যাঁরা যান, তাঁদের অধিকাংশই বিশ্বাস করে যান না। বিশ্বাস করে যাওয়ার সংখ্যাটা খুব কম, বেশিরভাগই যান সুবিধের জন্য। এইটা মানুষের কাছে প্রকট। সেই জায়গা থেকে আমার কথা দু-চারজন মানুষ হয়তো সিরিয়াসলি শোনেন, কারণ আমাকে কোথাও সুবিধে নিতে দেখা যায় নি। সুবিধে নিলে আমার জীবনটা অন্যরকম হতো (হাসি)।
আরও পড়ুন, ক্ষমতার বেড়াজালে ভূতপূর্ব মানুষের মূল্যায়ন ‘ভবিষ্যতের ভূত’
বিনোদনের ওপর রাজনীতির প্রভাব এখন কি আরও বেশি প্রকাশ্যে?
থিয়েটার বা সিনেমা, দুটো ক্ষেত্রেই আমার মনে হয়েছে আমরা যতই রাজনৈতিক দলগুলোকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাই, দোষটা তাদের নয়। এই দলগুলোকে ঘিরে একধরণের গোষ্ঠী তৈরি হয় যারা রাজনৈতিক প্রভাবটাকে ব্যবহার করে। দলগুলো অনেক বেশি পরিণত, একটা নাটক বা ছবিকে নিয়ে তারা ঝামেলা চায় না। সমস্যাটা তৈরি করে এই চারপাশের মানুষগুলো।
আমি তো থিয়েটারের ক্ষেত্রে অন্তত তাই দেখেছি। মাঝখানে থিয়েটারে যে খারাপ পরিবেশটা এসেছিল, তার কারণ যতটা না তৃণমূল, তার থেকে হঠাৎ 'তৃণমূল হওয়া' নাটকের লোকজনরা। ফলে আমাদের ধারণা হয় বুঝি কাজটা দল করছে, তা কিন্তু নয়। রাজনৈতিক দলের খেলাটা অনেক বড়।