না ফেরার দেশে চলে গেলেন জাতীয় কবি অরুণ চক্রবর্তী। শুক্রবার (২২ নভেম্বর) গভীর রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর চুঁচুড়ার ফার্ম সাইড রোডের বাড়িতে মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। বিখ্যাত লোকসংগীত লাল পাহাড়ির দেশে যা গানের জনক ছিলেন তিনি।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায় শারীরিকভাবে সুস্থই ছিলেন তিনি। শুক্রবার কলকাতার মোহরকুঞ্জে জঙ্গলমহল অনুষ্ঠানেও যোগ দেন। সেখান থেকেই কিছুটা ঠাণ্ডা লেগেছিল। কবির পুত্রবধূ সুদেষ্ণা চক্রবর্তী জানিয়েছেন, করোনার পর থেকেই তাঁর ফুসফুসে সমস্যা ছিল। শুক্রবার রাতে বাড়িতে হৃদরোগে আক্রান্ত হন। সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
লাল পাহাড়ির দ্যাশে যা—এই গানটি শোনেননি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দায়! তবে অনেকের কাছেই কিন্তু গীতিকার-সুরকারের নামটি অজানা। তাঁকে পরিচিতি এবং খ্যাতি এনে দিয়েছিল এ গান। তাঁর রচিত বেশ কিছু কবিতা পরে গান হয়ে লোকের মুখে মুখে ফিরেছে। দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও অরুণের পরিচিতি তৈরি করে দিয়েছে এই গান। অরুণ চক্রবর্তী এই গানের গীতিকারও। আর সুর দেন ঝুমুর শিল্পী সুভাষ চক্রবর্তী।
১৯৪৬ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর তাঁর জন্ম কলকাতার বাগবাজারে। ১৯৯০ সাল থেকে চুঁচুড়ায় থাকতেন তিনি। পেশায় ছিলেন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। তবে সরকারি চাকুরে অরুণ কুমার চক্রবর্তী পুরোদস্তুর কবি। লিখতে, পড়তে ও বলতে ভালোবাসতেন তিনি। শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে পাস করেছিলেন অরুণ। বাংলার লোকসংস্কৃতি নিয়ে চর্চা করতেন অরুণ। ঘুরতেন পাহাড়, জঙ্গল ও আদিবাসী এলাকায়।
একথা না বললেই নয়, যে ‘লাল পাহাড়ির’ সুরেই অমর হয়ে থাকবেন কবি। অরুণ চক্রবর্তী ছেড়ে গেছেন তাঁর স্ত্রী, দুই পুত্র, বৌমা এবং নাতি-নাতনিদের। তাঁর প্রয়াণে শেষকৃত্যে উপস্থিত হয়েছেন স্থানীয় বিধায়ক, শহরের বইমেলা কমিটির সদস্য এবং অন্যান্য বিশিষ্টজনেরা। এদিন সকালে চুঁচুড়ার বাসভবন সোনাঝুড়ি থেকে চুঁচুড়া শ্যামবাবুর ঘাট শ্মশান নিয়ে যাওয়ার পথে ঘন্টাখানেক চুঁচুড়া রবীন্দ্র ভবনে কবির মরদেহ শায়িত থাকে।
সেখানে প্রয়াত কবিকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে আসেন, শহরের প্রায় সমস্ত সাংস্কৃতিক মনোভাবাপন্ন মানুষ। ছিলেন সমস্ত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি , গণমাধ্যমের প্রতিনিধি থেকে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা। বাড়িতেই শ্রদ্ধা জানিয়ে এসেছিলেন চুঁচুড়া বিধায়ক অসিত মজুমদার। নিজের ফেসবুকে ছবি দিয়ে শ্রদ্ধা জানান, বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়।