কিংবদন্তি গায়িকা লতা মঙ্গেশকরের প্রয়াণে শোকস্তব্ধ গোটা দেশ। সেই অতীত থেকে বর্তমানের সুরের পাতায় সোনার অক্ষরে বেঁচে থাকবেন এই সন্মানীয় মানুষটি। তার সুরের কোনও শেষ নেই, তার সৃষ্টির কোনও অন্ত নেই। আজ হাজার স্মৃতি ভিড় করে আসছে সকলের মনেই, সহকর্মী থেকে পরিবার বেদনায় আকুল প্রত্যেকে। তাঁকে জীবন্ত সরস্বতী হিসেবে পুজো করতেন বর্তমানের সঙ্গীতশিল্পীরা। স্বভাবে শান্ত, এবং মিতভাষী সকলের প্রিয় লতাদিদি, ছোটবেলায় একরকম জেদ করেই স্কুল ছেড়েছিলেন! আগে জানতেন?
বোন আশা তখন ছোট্ট, মাস দশেকের। একেবারেই দিদি তাকে কাছছাড়া করতেন না। তাকে সঙ্গে নিয়েই স্কুলে গেছিলেন লতা। ওইটুকু শিশুকে কীভাবে ঢুকতে দিতেন স্কুলের ভেতরে?.... যথারীতি পথ আটকালেন স্কুলের শিক্ষক! বোন কে নিজের থেকে দূরে রাখতে হবে এই ভেবেই তিনি রেগে গিয়ে বাড়ি চলে এলেন, ব্যাস! এখানেই ইতি - আর স্কুলে চৌকাঠ পার করেননি।
এক সাক্ষাৎকারে গায়িকা জানিয়েছিলেন, তার যখন বছর চারেক বয়স বাড়ির দেখভাল করতেন ভিত্থল নামক এক ব্যক্তি, তাকেই দায়িত্ব দিয়েছিলেন মারাঠি শব্দ শেখানোর। যদিও, ছোটবেলায় নার্সারি স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। হাসতে হাসতেই সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, "একজন শিক্ষক ব্ল্যাকবোর্ডে গণেশের ছবি আঁকতেন, আর আমি সেটিকে দারুণ ভাবে নিজের খাতায় ফুটিয়ে তুলতাম, দশে দশ পেয়েছিলাম তার থেকে।” পরবর্তীতে বোন বাসন্তীর সঙ্গে মিলেই স্কুলে যাওয়া শুরু করেছিলেন।
নিজের সঙ্গে সঙ্গে বাবা দীননাথ মঙ্গেশকর কে নিয়েও দারুণ গর্ব করতেন লতা। যেখানেই যেতেন বাবার নাম করতে ভুলতেন না গায়িকা। ওই ছোট্ট বয়সে হিন্দোল, মালকাউন্স এর মত রাগ তুখোড় ভাবে গেয়ে ফেলতেন। বাবার হাত থেকে দৌড়ে পালিয়ে যেতেন। ভান করতেন পেট ব্যাথা কিংবা মাথা যন্ত্রণার, তবে রেহাই ছিল না। বাবার সামনে গান গাইতে রীতিমতো ভয় পেতেন ছোট্ট লতা। সবরকমের ভাষায় পারদর্শিতার সঙ্গে গান গেয়েছেন তিনি। হিন্দি শিখেছিলেন তুতো বোন ইন্দিরার কাছ থেকে, বাংলা শেখার সুযোগ হয়েছিল জনপ্রিয় পরিচালক বাসু ভট্টাচার্য্যের কাছ থেকে।
হাজারো পুরস্কার, খ্যাতি, সন্মান সবকিছুর ভিড়ে একজন অতি সাধারণ মানুষ হিসেবে নিজেকে রেখেছিলেন তিনি। সবাই তার আওয়াজ শুনে মুগ্ধ, কিন্তু নিজে কী বলতেন? বলতেন, "আমি যদি প্রতিভাধর হই, তাহলে সেই কৃতিত্ব ঈশ্বরের। আমার গান গাওয়া কোনও অলৌকিক ঘটনা কিংবা অসাধারণত্ব নয়! অনেকেই আমার থেকে ভাল গায়, হ্যাঁ বলতে পারেন আমি তাদের থেকে অনেক কিছু বেশি পেয়েছি। নাসরিন মুন্নির লেখা বই তথা সাক্ষাৎকারে নিজেই জানিয়েছিলেন গায়িকা।"