শক্তি সামন্তর সহকারী পরিচালক থেকে বাংলা সিনে-ইন্ডাস্ট্রির মোড় ঘোরানো পরিচালক প্রভাত রায়। মুম্বই থেকে টালিগঞ্জের স্টুডিওপাড়ায় পা রেখে যেমন পরপর কমার্শিয়াল হিট উপহার দেন। তেমনই শ্বেতপাথরের থালা’, ‘লাঠি’র মতো ছবির জন্য পরিচালকের ঝুলিতে এসেছে জাতীয় পুরস্কারও। টলিউডে বহু নবাগত অভিনেতা-অভিনেত্রীরা আজ'হিট' নায়ক-নায়িকা হয়েছেন প্রভাতের দৌলতেই। মুম্বইয়ের সুবর্ণ কেরিয়ারকে অগ্রাহ্য করে কলকাতায় চলে এসেছিলেন বাংলার সঙ্গে আত্মিক টানে। জীবনে সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছেও বর্তমানে স্টুডিও পাড়া থেকে বিরতি নিয়েছেন পরিচালক।
স্ত্রী জয়শ্রী রায় চলে যাওয়ার পর আজ তিনি নিঃসঙ্গ। দিন দুয়েক আগেই আক্ষেপ করে বলেছিলেন, "ইন্ডাস্ট্রির কেউ খোঁজ নেয় না, সব অকৃতজ্ঞ।" আর সেই প্রভাত রায়ের জন্যই কিনা একসময়ে বিনা পারিশ্রমিকে গান গেয়েছিলেন সপরসম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর। তখনও তিনি সুপারহিট পরিচালক হয়ে ওঠেননি। পরিচালক হিসেবে সদ্য শিঁকে ছিঁড়তে চলেছেন।
১৯৮৩ সাল। মুক্তি পেল 'প্রতিদান'। কাস্টিংয়ে তুখড় সব অভিনেতা। ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়, নাসিরুদ্দিন শাহ, শর্মিলা ঠাকুর, রঞ্জিৎ মল্লিক, লিলি চক্রবর্তী তুখড় সব অভিনেতা-অভিনেত্রীরা। ছবির সুরকার ছিলেন বাপ্পি লাহিড়ি। সেই সিনেমাতেই প্লে-ব্যাক করার জন্য লতা মঙ্গেশকর প্রভাত রায়ের কাছ থেকে একটি টাকাও নেননি। কেন? তার নেপথ্যেও রয়েছে একটি মজার গল্প।
'প্রতিদান' করার আগে প্রভাত রায় ছিলেন মুম্বইয়ের তৎকালীন খ্যাতনামা পরিচালক শক্তি সামন্তর ডান হাত। সামন্তর সহকারী হিসেবে বহু সুপারহিট সিনেমার সহ-পরিচালনা করেছেন তিনি। আর শক্তি সামন্তর সুবাদেই লতার সঙ্গে পরিচয় হয় প্রভাতের। 'প্রতিদান'-এর 'মঙ্গলদীপ জ্বলে..' গানের রেকর্ডিংয়ের সময় স্টুডিওতে যখন লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে দেখা হয় প্রভাত রায়ের, লতাজি তাঁকে জিজ্ঞেস করেন- তুমি এখানে কী করছ? উত্তরটা দিয়েছিলেন বাপ্পি লাহিড়িই।
সুরকার বাপ্পি তখন কোকিলকণ্ঠীকে জানান যে, এটা প্রভাতের পরিচালনায় প্রথম ছবি। এরপরই লতা যেচে পরিচালকের কাছ থেকে গল্পটা জানতে চান। শুনে উনি খুব প্রশংসাও করেন। সেদিন রেকর্ডিং শেষ হওয়ার পর যখন প্রযোজক লতাজিকে টাকা দিতে গিয়েছিলেন, উনি সোজা বলে দেন- "না, একটা টাকাও আমি নেব না। একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর যাকে আমি চিনি, সে আজকে প্রথমবার নিজের ছবি পরিচালনা করছে। তাই এই টাকা নেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।”
উল্লেখ্য, প্রভাত রায় পরিচালিত 'প্রতিদান'-এর 'মঙ্গলদীপ জ্বলে..' গানটি লেখার নেপথ্যেও কিন্তু দারুণ এক কাহিনি রয়েছে। একদিন জুহু বিচে গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের সঙ্গে বেড়াতে গিয়েছিলেন প্রভাত। হঠাৎ গৌরীবাবু বলে বসেন- 'প্রভাত তোমার কাছে কাগজ আছে?' পরিচালক তখন হতভম্ব! ঘুরতে এসে পকেটে কাগজ-পেন কেন থাকবে? সেই প্রশ্নই ছুঁড়ে দিয়েছিলেন তিনি। তবে ইচ্ছে যখন চাগাড় দিয়েছে তখন শিল্পী সেটা পূরণ না করে আর যান কোথায়?
কথাতেই আছে- ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়। ব্যস অমনি সমুদ্রসৈকতে পড়ে থাকা সিগারেটের প্যাকেটে নজর যায় গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের। তৎক্ষণাৎ প্রভাতকে নির্দেশ- 'দেখ তো এই প্যাকেটটা বোধহয় খালি পড়ে আছে।' সেই প্যাকেট ছিঁড়েই গৌরীবাবু প্রথম 'মঙ্গলদীপ জ্বলে..' গানটার মুখরা ঝটপট লিখে ফেলেন। আর সেই গানটাই পরিচালক প্রভাত রায়ের পয়লা ছবি ‘প্রতিদান’-এর জন্য লতা মঙ্গেশকর রেকর্ড করেন। তাও আবার বিনি পয়সায়। সুপারহিট সেই গানের নেপথ্যে অবশ্য বাপ্পি লাহিড়ির কৃতিত্বও রয়েছে। গৌরীবাবুর লেখা গানে তিনিই সুর করেন। প্রবাদপ্রতীম সেই পরিচালকই আজ প্রচারের আড়ালে।