রূপান্তরকামী বেশে অক্ষয় কুমার, লাভ জিহাদের উসকানি, হিন্দু সংগঠনের চোখ রাঙানির মাঝেই ওটিটি প্ল্যাটফর্ম হটস্টার-এ মুক্তি পেল 'লক্ষ্মী'। কেমন হল? লিখছেন সন্দীপ্তা ভঞ্জ।
পরিচালক- রাঘব লরেন্স
অভিনয়ে- অক্ষয় কুমার, কিয়ারা আডবানি, শরদ কেলকার, অশ্বিনী কালসেকার, আয়েশা রাজা মিশ্র, রাজেশ শর্মা
অক্ষয়.. অক্ষয়.. অক্ষয়... 'লক্ষ্মী' (Laxmii Review) সিনেমাটা দেখার পর শুধু এই নামটাই মাথায় আসে। রূপান্তরকামী বা সমকামী, এই শব্দগুলো নিয়ে হয়তো আমাদের সমাজে এখনও বহু প্রতিকূলতা রয়েছে। এই সিনেমা তাঁদেরই কথা বলে। অক্ষয় কুমার (Akshay Kumar) এখানে 'ট্রান্সজেন্ডার'-এর ভূমিকা অভিনয় করেছেন। এর আগে বলিউডের খিলাড়ি কুমারকে কখনও এরকম চরিত্রে দেখা যায়নি। তবে এই ছবিতে শাড়ি-চুড়ি পরিহিত অক্ষয় একেবারে সব বাঁধ ভেঙে দিয়েছেন। আজ্ঞে! দক্ষিণী ছবির রিমেক হলেও অক্ষয় এযাবৎকাল যে সব চরিত্রে অভিনয় করেছেন, 'লক্ষ্মী' ছবিতে তাঁর অভিনয় একেবারে ছাপিয়ে গিয়েছে। অনেকেই হয়তো 'ভুল ভুলাইয়া' দেখে অক্ষয় কুমারকে বিচার করবেন, তবে 'লক্ষ্মী' ছবিতে অক্ষয় নিজের স্বাক্ষর রেখে গিয়েছেন।
ওয়ান ম্যান শো...
পরনে লাল শাড়ি, হাতে চুড়ি। কপালে সিঁদুরে টিপ। এইরকম রূপে অক্ষয় কুমারকে এর আগে দেখা যায়নি। আর কোথাও গিয়ে অক্ষয় কুমারের এই রূপই ছবিটির ইউএসপি হয়ে উঠেছে। ছবি দেখতে দেখতে দর্শকদের হয়তো অনেক সময়েই বিরক্তির উদ্রেক হতে পারে, তবে গল্পটা একাই টেনে গিয়েছেন অক্ষয় কুমার। দুর্ধর্ষ ক্লাইম্যাক্স। এক রূপান্তরকাম বা ট্রান্সজেন্ডারের আত্মাই এই ছবির মূল চরিত্র। যে কিনা অক্ষয়ের চরিত্র 'আসিফ'-এর উপর ভর করে। দক্ষিণী সিনেমা দেখার পর তার হিন্দি রিমেক দেখে গোড়ার দিকে দর্শকের একঘেয়ে মনে হলেও সিনেমার শেষ দৃশ্যে অক্ষয় সব কিছুকে একেবারে ছাপিয়ে গিয়েছেন। 'ওয়ান ম্যান শো' বললেও ভুল হয় না বইকী! কারণ, এই পরাবাস্তব গল্পে আসিফ অর্থাৎ অক্ষয় কুমারের চরিত্রটি ছাড়া দক্ষিণী সিনেমার কাছে এই বলিউড রিমেকের উতরানো বেশ মুশকিল!
বিতর্ক
সিনেমার নায়ক অর্থাৎ অক্ষয় কুমারের চরিত্রের নাম এখানে আসিফ। যে কিনা এক হিন্দু মেয়ের প্রেমে পড়ে, তাকেই জীবনসঙ্গিনী করে। যার জেরে মেয়েটির পরিবার আসিফকে মেনে নিতে চায়নি প্রথমটায়। ঠিক এই বিষয়টি নিয়েই আপত্তি তুলেছিল হিন্দু সংগঠন করণি সেনা। তবে সিনেমার চিত্রনাট্যে সেভাবে বিষয়টি নজরই কাড়ল না। সমাজের কাছে ব্রাত্য তৃতীয় লিঙ্গ থেকে শুরু করে হিন্দু-মুসলিম দাম্পত্য সম্পর্ক, অন্যায়ের প্রতিবাদ... যাবতীয় বিষয় ছবির চিত্রনাট্যে হয়তো অন্য মাত্রা পেতে পারত, তবে কোথাও গিয়ে সব মশলা থাকলেও রান্নাটা আর ঠিক হল না। ট্রেলার, গান কোথাও গিয়ে আশা জাগিয়েও আশাহত করল বলেই মনে হল।
কোথায় দুর্বল?
অক্ষয় কুমার নজর কাড়লেও বেশ কিছু কারণে 'লক্ষ্মী' সিনেমাকে দুর্বল বলে মনে হয়েছে। প্রথমত, এই ছবি হরর-কমেডি ঘরানার। তবে এই সিনেমার হিন্দি রিমেকে ভয়ের উদ্রেক খুব একটা হয় না বললেই চলে। চিত্রনাট্যে কমেডির পাঞ্চলাইনও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য নয়! ছবির সেরকম কোনও সংলাপ হাসির উদ্রেক ঘটায়নি বিশেষ। অতঃপর 'লক্ষ্মী' সিনেমাকে হরর-কমেডি জঁরের বলার থেকে রিভেঞ্জ ড্রামা বলা অনেকটাই যুক্তিযুক্ত। কারণটা হয়তো কোথাও গিয়ে সিনেমার গল্প বলার ধরণ। অন্যায়ভাবে রিয়েল এস্টেট মাফিয়ারা এক কিন্নরের জমি দখল করে। আর ছলে-বলে-কৌশলে সেই জমি হাত করার চক্রান্তে লক্ষ্মী নামে সেই বৃহন্নলাকে খুন করে। প্রতিশোধে মত্ত লক্ষ্মীর আত্মা ফিরে আসে। সেই নিয়েই ছবির গল্প। দক্ষিণী ছবিটি দেখে থাকলে অনেকেরই হয়তো সেই গল্প জানা। তবে, এক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখ্য অক্ষয় কুমারের পারফরম্যান্স ছাড়া 'লক্ষ্মী' আলাদা করে বিশেষ নজর কাড়তে পারল না।
কেন দেখবেন?
লক্ষ্মী' সিনেমাটা দেখার একটাই কারণ অক্ষয় কুমারের অভিনয়। বৃহন্নলার ভূমিকায় অভিনয় করার চ্যালেঞ্জ নেওয়া কিন্তু চারটিখানি কথা নয়। তবে অক্ষয় সেটা করে দেখিয়েছেন। তাও আবার তাঁর ছক ভেঙে। অক্ষয় ছাড়া এই চরিত্র বলিউডের অন্য কোনও অভিনেতা ফুটিয়ে তুলতে পারতেন কিনা, তাতে সন্দেহ রয়েই যায়। কারণ, সব ছবিতেই চরিত্র নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে ভালবাসেন অক্ষয়। এবারও তার অন্যথা হল না। বেশ পারদর্শীতার সঙ্গে বৃহন্নলার চরিত্র ক্যামেরার সামনে ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি। স্ত্রীর ভূমিকায় কিয়ারা আডবানিও যথাযথ অভিনয় করেছেন। তাঁর পরিবর্তে অন্য কোনও অভিনেত্রীকে এই চরিত্রে কাস্ট করা হলেও মন্দ হত না। তবে উল্লেখ্য রাজেশ শর্মার অভিনয়। এছাড়া, অশ্বিনী কালসেকার ও আয়েশা রাজা মিশ্রর অভিনয় কোথাও গিয়ে একটু হলেও কমিক এলিমেন্ট যোগ করে চিত্রনাট্যে। বৃহন্নলার চরিত্রে অক্ষয় কুমারের অভিন