Madam Sengupta Review: সুকুমারের 'আবোল তাবোলে' মিশে গেল রাজনীতির রং, ইনসাফের গল্প শোনাল 'ম্যাডাম সেনগুপ্ত'?

Madam Sengupta Review: ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত ফিরলেন ম্যাডাম সেনগুপ্ত হিসেবে, এবং, একদম অন্যরকমভাবে। ম্যাডাম সেনগুপ্ত এমন এক ছবি, যেখানে রয়েছে অনেক প্যাঁচ। সুকুমার রায়ের আবোল তাবোল রহস্যের ওপর…

Madam Sengupta Review: ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত ফিরলেন ম্যাডাম সেনগুপ্ত হিসেবে, এবং, একদম অন্যরকমভাবে। ম্যাডাম সেনগুপ্ত এমন এক ছবি, যেখানে রয়েছে অনেক প্যাঁচ। সুকুমার রায়ের আবোল তাবোল রহস্যের ওপর…

author-image
Anurupa Chakraborty
New Update
Film review Featured image copy

কেমন হল নতুন ছবি? পড়ুন রিভিউ... Photograph: (গ্রাফিক্স - অংশুমান মাইতি)

 'যে মা নিজের হাত দিয়ে সন্তানের মুখে ভাত তুলে দেয়, আর সেই হাতেই সন্তানকে দাহ করে...' - ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত ফিরলেন ম্যাডাম সেনগুপ্ত হিসেবে, এবং, একদম অন্যরকমভাবে। ম্যাডাম সেনগুপ্ত এমন এক ছবি, যেখানে রয়েছে অনেক প্যাঁচ। সুকুমার রায়ের আবোল তাবোল রহস্যের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত এই ছবি। এবং সোজা কথায়, কে সত্যি আর কে মিথ্যে, শেষ দৃশ্য অবধি বোঝা দায়।  এই গল্প ইনসাফের, এই গল্প এক মায়ের যিনি মেয়ের মৃত্যুশোক ঘায়েল, তাই মেয়ে থেকে এক আহত শেরনি হয়ে উঠেছে সে।

Advertisment

ছবি শুরু হয়, এক ভয়ংকর দৃশ্য দিয়ে। মেরে ফেলা হয়, ঋতুপর্ণা অর্থাৎ, অনুরেখা সেনগুপ্ত যিনি একসময় মেয়েকে সুশিক্ষা এবং দামী স্কুলে পড়াশোনার সুযোগ দেওয়ার জন্য তাঁকে কলকাতা থেকে মুম্বাই নিয়ে গিয়েছিলেন, সেই মেয়েটাকে কলেজের হোস্টেলে জলে ডুবিয়ে খুন করা হয়। মায়ের কাছেই খবর যেতে তিনি ফিরে আসেন কলকাতায়। এবং মেয়েকে জাস্টিস দিতেই নানারকম চেষ্টা চরিত্র করতে থাকেন। এদিকে, কলকাতায় ফিরে তাঁর সঙ্গে দেখা হয় পুরোনো বন্ধু, রঞ্জন অর্থাৎ রাহুল বোসের। মেয়েকে হারিয়ে বন্ধু যখন শোকার্ত ঠিক তখনই অনুরেখাকে সবরকম ভাবে সাহায্য করতে থাকে সে। ঋতুপর্ণা অর্থাৎ অনুরেখার মেয়ে অনন্যাই যে শুধু খুন হয় এমনটা না। বরং, একইরকমভাবে খুন হতে থাকে দু তিনজন মানুষ। এবং প্রতিটা খুনের শেষে রঞ্জনের অফিসের সামনে সুকুমার রায়ের আবোল তাবোলের চরিত্রের সঙ্গে মিল রেখে একেকটা সফট টয়। কোনওসময় আহ্লাদী তো কোনসময় বাবুরাম সাপুড়ে।

যাদের শয়নে স্বপনে সুকুমার রায়, তাঁদের কাছে গল্পের প্লট বোঝা একটু সহজ হবে। ম্যাডাম সেনগুপ্ত যখন মেয়ের খুনির খোঁজ করছেন, ঠিক তখনই দেখা যায় বারবার উঠে আসছে একটাই নাম, তিনি সাত্যকি সেন। কৌশিক সেন এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন। সম্পর্কে অনুরেখার স্বামী তিনি। এবং এই দারুন নাট্য রচয়িতা। মেয়ে অনন্যা তাঁর খোঁজ করতেই এসেছিলেন কলকাতায়। যেদিন রাতে অনন্যা খুন হন, সাত্যকি সেদিন ঘটনাস্থলেই ছিলেন। তাহলে কি বাবার হাতেই খুন হন মেয়ে? উঠবে প্রশ্ন। পরিচালক সুকুমারের ননসেন্সকে সামলে নিয়ে প্লট সাজিয়েছেন বটে, কিন্তু কিছু জায়গায় রহস্যের ভাঁজকে জগাখিচুড়ী বলে মনে হতে পারে।

আরেকজনের কথা না বললেই নয়। অনন্যা চট্টোপাধ্যায় রয়েছেন এই ছবিতে। এবং, যশোধরার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন তিনি। তিনিও বাংলার নাট্য দুনিয়ার এমন এক ব্যক্তিত্ব এই ছবিতে, যিনি সব পারেন। সব মানে সব! অনন্যা রাহুলের স্ত্রী এই ছবিতে। খুনের প্রথম থেকে শেষ, সবটাই অনন্যার সামনে হয়েছেন। এই ছবির এক অনন্য অংশ রঞ্জন এবং যশধরার ছেলে নীল, যে আসলে অনূরেখার মেয়ে অনন্যার খুব কাছের বন্ধুও বটে। তাঁর খুন হওয়ার পর থেকেই নড়েচড়ে বসে নীল। ছবির আসল উদ্দেশ্য সুকুমার রায়ের কবিতার সঙ্গে মিলিয়ে মিলিয়ে আসল খুনিকে ধরা। শেষ পর্যন্ত হলোও তাই। কিন্তু, শুরু থেকে শেষ, অনেকবার কিছু চরিত্রকে দেখে মনে হতে পারে, এই বোধহয় আসল খুনি। কিন্তু, শেষ অধ্যায়ে নাট্যমঞ্চ থেকে ক্ষমতা আর রাজনীতি সব এক হয়ে যাবে। ক্ষমতার লড়াই এবং অনিশ্চয়তা যে কী করতে পারে, সেটাই যেন পরিচালক সায়ন্তন ঘোষাল হাড়ে হাড়ে বুঝিয়েছেন।

Advertisment

আসা যাক অভিনয়ের প্রসঙ্গে। ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, ম্যাডাম সেনগুপ্ত হিসেবে নিজেকে জাস্টিফাই করার চেষ্টা করেছেন। তবে, সহজ ভাষায় তাঁকে বলে বলে গোল দিয়েছেন অনন্যা চট্টোপাধ্যায়। ভীষণ রুচিশীল এবং দারুণ সাবলীল স্ক্রিন প্রেজেন্সে অনন্যা মন ভরিয়েছেন। কৌশিক সেন, আবারও প্রমাণ করলেন কেন তিনি থিয়েটারের মানুষ। স্টেজে কেন তাঁর দিনযাপন, তা নিদারুণ বুঝিয়ে দিয়েছেন। নতুন প্রজন্মের মধ্যে নীল অর্থাৎ রৌনক, বেশ প্রাণবন্ত। যদিও, গল্পের প্লট টু মাচ ডার্ক এবং পোয়েটিক, অনেকেই খেই হারিয়ে ফেলবেন।

  • ছবির নামঃ ম্যাডাম সেনগুপ্ত 
  • পরিচালকঃ সায়ন্তন ঘোষাল 
  • অভিনয়েঃ  ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, রাহুল বোস, কৌশিক সেন, অনন্যা চট্টোপাধ্যায়, পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রমুখ 
  • রেটিংঃ ৩/৫ 
rituparna sengupta