টেলিভিশন দিয়ে শুরু হলেও একটা সময় নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন একজন দাপুটে অভিনেত্রী হিসেবে। তিনি মানালি দে। জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন মৌরি হিসেবে। ধীরে ধীরে ইন্ডাস্ট্রিতে গোয়েন্দা হয়ে উঠতে পেরেছেন কী? 'গোরা ২' রিলিজ হতেই ঝুলি উজাড় করলেন মানালি।
অর্নাকে দেখে বোঝা যাচ্ছে সে খুব ধিট, যেটা ভেবে নেয় সেটাই করে, মানালি কী সেরকমই?
একদমই এক না। বিন্দুমাত্র কোনও মিল নেই। আমি একদম আলাদা। আর এহেন কোনও চরিত্র আমি আগে প্লে করিনি। আমায় কেউ ভাবেও নি এধরনের চরিত্রে। হয়তো বা শাহানা দি না থাকলে কেউ ভাবতেও পারত না। তাই, ওই মানুষটাকে ধন্যবাদ না দিলে চলে না। শুরুতে চরিত্রটা প্রসঙ্গে কিছুই বোঝা যাবে না। শেষ অবধি তো অপেক্ষা করতে হবে।
পুরুষ সেন্ট্রিক একটি সিরিজে নারী চরিত্রের এতটা সুন্দর চরিত্রয়ন, কী বলবে?
দেখো, সিরিয়াল হয় একটু মহিলাকেন্দ্রিক। কিন্তু বর্তমান সময়ে সিরিজ কিন্তু দু ধরনের হয়। পুরুষ তান্ত্রিক সমাজে মেয়েদের নিয়ে যে এত আলোচনা এটাই তো ভাললাগা। আর অবশ্যই, গোরা যেখানে সেখানে একজন পুরুষকে ভাবনা চিন্তা করার পরেও যখন দেখা যায়, মেয়েদের নিয়েও খুব সুন্দর একটা চরিত্রে প্রেজেন্ট করা হচ্ছে বা পুরুষ এবং নারী দুজনেই সমান দেখানো হচ্ছে। তখন বোধহয় সেটা একটা নিদারুণ ব্যাপার। আমাদের কাছে একটা জীত।
মানালি কি গোরার মত আদরে বাঁদর?
একদম না! আমি ছোটবেলা থেকে অনেক ভালবাসা পেয়েই বড় হয়েছি। কিন্তু আদরে বাঁদর একটুও না। যেখানে বাঁদরামি করলে কেউ বকবে না, আমায় বকা দেবে না, রাগ করবে না আমি সেখানে খুব বাঁদরামি করতে ভালবাসি। কিন্তু, যেখানে আঁচ পেয়ে যাবো সেখানে আমি একদম এই দুঃসাহস দেখাই না। ( হাসি )
সিরিয়াল দিয়ে শুরু, এখন ওয়েব সিরিজ...মানুষের কাছে তো আজও মানালি মৌরিই রয়ে গিয়েছে?
আমি জানো তো অনেক ছোটবেলা থেকে কাজ করি। আমি আগে শিশুশিল্পী হিসেবে কাজ করতাম। মানালির কাছে কিন্তু মৌরি প্রথম নয়। কিন্তু, এটা দিয়েই আমার পরিচিতি। আর মৌরি কী বলতো, আমার কাছে একটা অঙ্গের মত। আমায় সবাই মৌরি বলেই ডাকত। তারপর, আস্তে আস্তে নিজেকে মানালি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হয়ছে।
মানালির সঙ্গে হৃতিকের সম্পর্কটা ওরকমই টম অ্যান্ড জেরি?
টম অ্যান্ড জেরি কিনা জানি না, তবে হ্যাঁ আমি কিন্তু এর আগেও নীর ভাঙ্গা ঝড় সিরিয়ালে ঋত্বিকদার সঙ্গে কাজ করেছি। তখন আমি অনেক ছোট। আজ এতবছর পর আবার। তবে, অভিনয় করতে গিয়ে একবারের জন্য মনেই হয়নি যে উনি ঋত্বিক চক্রবর্তী। ভীষণ শান্তিতে কাজ করেছি। আর কী বলো তো, এক্তা চরিত্রে ঢুকে গেলে না আমাদের মনেই হয় না যে কোনও অসুবিধে হচ্ছে।
গোরার সঙ্গে থাকলে কি মানালি গোয়েন্দা হতে পারবে?
হ্যাঁ! পারবে। কারণ যদি অর্নাকে দেখো তাহলে কিন্তু বোঝা যায় ও দারুণ বুদ্ধি ধরে। আর যদি ওর সঙ্গে ক্রমাগতই ঘুরতে থাকে তাহলে কিন্তু একথা সত্যি যে অর্না এবং মানালি দুজনেই গোয়েন্দা হতে পারত। কারণ, একথা সত্যিই যে অর্নাকে গোরা একটু হলেও ভয় পায়। গোরা যে গানের ছলে সমাধান করে এটা কিন্তু খুব প্রেসিয়াস। আর আমার অর্থাৎ মানালির এটা খুব পছন্দ।
মেয়েরা নাকি সংসারের জন্য দারুন গোয়েন্দা?
সে তো বটেই। আমাদের মা কাকিমাদের সময় থেকে আমরা দেখে আসছি। একথা একদম সত্যি। জামায় দাগ লাগা বল বা মুখে খাবার লেগে থাকা, মেয়েদের থেকে কোনও জিনিস লুকিয়ে রাখা যায় না। জীবনে সম্ভব না। তাই, আমার কাছে তো অবশ্যই মেয়েদের থেকে বড় গোয়েন্দা আর কেউ নেই। গোয়েন্দাগিরি মেয়েদের রক্তে। কিছু না কিছু তারা খুঁজে পাবেই।
গোরা তো মেয়েদের ভয় পায়, মানালি কাকে সবথেকে বেশি ভয় পায়?
আমি সেভাবে কাউকে খুব একটা ভয় পাই না জানো। হ্যাঁ, বাবাকে একটু আধটু ভয় পাই। কিন্তু সবথেকে বেশি যেটা ভয় পাই সেটা হল পরিস্থিতি। কোনও খারাপ ঘটনা বা সেটাকে কেন্দ্র করে যে জীবনের ওপর দিয়ে একটা ঝড়। সেটা কিন্তু আমি সত্যিই ভয় পাই। আর বাকি ব্যক্তিবিশেষ কোনও ভয় নেই।
সত্যি করে বলো, মেয়েদের মধ্যে কি কাউকে সন্দেহ করার বাতিক গোয়েন্দাদের থেকেও বেশি?
সন্দেহ জিনিসটা আমরা নিজেরাই জন্ম দি জানো। আমাদের মধ্যেই ঘুরপাক চলতে থাকে। আমি তো এসব কোনোদিন করি না। আমার মধ্যে আসেই না এসব। আমার স্বামী বল বা আমি, দুজনেই ইন্ডাস্ট্রির মানুষ। তবে, আজও মনে পড়ে না যে কেউ কারওর ফোন আজ অবধি চেক করেছি বলে। ফোন বেজে গেলেও আমরা একে অপরের ফোন ধরি না। আর বেশি সন্দেহ করলেও বিপদ জানো তো।
তোমায় যদি রহস্য সমাধানের জন্য গোরার দ্বারস্থ হতে হয়?
না না, আমি গোরার কাছেই যাবো। কারণ ও আমার খুব পছন্দের। আমি না হয়, ওর বাড়ির অতিথি হয়েই ঢুকেছি। কিন্তু, আমি গোরার কাছেই যাব। গোরা নিজে খুব উত্তেজিত, এটা আমার খুব পছন্দের।
ফেলুদা - শবর - ব্যোমকেশ এর থেকে গোরা কেন আলাদা?
আলাদা কিনা বলতে পারব না। তবে, আমরা যাদের রহস্যের চরিত্রগুলো সমাধান করতে দেখেছি তাদের খুব সিরিয়াস চরিত্রে দেখেছি। যেটা গোরা না। ওর সমাধানের ছক খুব আলাদা। স্টিরিওটাইপ নয় গোরা। মজা করে, ইয়ার্কি মারে। সব মিলিয়ে একটা অন্যরকম বিষয়।