শুধুমাত্র তামিল সিনেমাতে নয়, মণিরত্নম ভারতীয় সিনেমায় উজ্জ্বল নাম। কল্পনার নিরিখে নির্মম বাস্তবকে তিনি তুলে ধরেছেন সবসময়। আজ তাঁর জন্মদিনে চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক তাঁর সেরা দশটি সিনেমার তালিকায়:
১) মৌন রাগম
দিব্যা চন্দ্রমৌলিকে নিয়ে ১৯৮৬ সালে তৈরি হয় রোম্যান্টিক ড্রামা মৌন রাগম। প্রেমিকের মৃত্যুর পর দিব্যার অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ করানো হয়। ছবিতে দেখানো হয়েছে অতীত ও বর্তমানের মাঝে পড়ে দিব্যার অন্তর্দ্বন্দ্ব। বক্স অফিসে সাড়া ফেলেছিল এই ছবি।
২) নায়াগাম
১৯৮৭ সালে মুক্তি পাওয়া এই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন কমল হাসান। বম্বের অপরাধ জগতের ডন বরদারাজন মুডালিয়ারকে নিয়ে তৈরি এই ক্রাইম ড্রামা। ছবিতে তুলে ধরা হয়েছিল একজন সাধারণ মানুষ এক দুর্নীতিগ্রস্ত পুলিশ অফিসারের বিরূদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে কীভাবে আইনকে হাতে তুলে নেয়। মারিয়ো পুজোর উপন্যাস গডফাদার থেকে অনুপ্রাণিত এই ছবি। এই ছবির ঝুলিতে রয়েছে অনেকগুলো জনপ্রিয় পুরস্কারও।
৩) রোজা
১৯৯২ এ মুক্তিপ্রাপ্ত এই ছবির কথা কে না জানে? এখনও ছবিটা দেখার জন্য আলাদা করে জেনারেশন ভাগ করতে হয় না বোধহয়। এই রোম্যান্টিক থ্রিলারে সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে ডেবিউ করেছিলেন এ.আর. রহমান। তামিলনাড়ুর গ্রামের এক সাধারণ মেয়ে স্বামীর অপহরণের পর তাঁকে ফিরিয়ে আনতে মরিয়া। দেশপ্রেমের এক আলাদা সংজ্ঞা তৈরি করে এই ছবি। ছবিতে অভিনয় করেছিলেন অরবিন্দ স্বামী, মধু, পঙ্কজ কাপুর। জাতীয় পুরস্কার পাওয়া এই ছবি তামিল, তেলুগু এবং হিন্দি বক্স অফিস কাঁপিয়েছিল পুরোদমে।
৪) কান্নাথিল মুথামিত্তল
এই বিখ্যাত তামিল ছবিটির অন্য নাম অ্যা পিক অন দ্য চিক। ২০০২ সালে টোরোন্টো ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে দেখানো হয়েছিল ছবিটি, আর. মাধবন অভিনীত একটি মিউজিক্যাল ওয়ার ড্রামা। একটি বাচ্চা মেয়ে শ্রীলঙ্কা যাবে তার জন্মদাত্রী মায়ের খোঁজে। কিন্তু শ্রীলঙ্কায় তার মা কোনও জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। এ.আর. রহমান সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন এই ছবিরও। একটি বিশেষ ভূমিকায় ছবিতে দেখা মেলে নন্দিতা দাসের।
৫) বম্বে
বাবরি মসজিদ ধ্বংসের সময়কাল নিয়েই তৈরি ছবি, ডিসেম্বরের ১৯৯২ থেকে ১৯৯৩-এর জানুয়ারির প্রেক্ষাপটেই মূলত। দৃশ্যায়িত হয়েছে বম্বের দাঙ্গাও। ছবির গানের জনপ্রিয়তা বক্স অফিস জনপ্রিয়তার একটি অন্যতম কারণ। বম্বে ছবিতেই দেখা গিয়েছিল অরবিন্দ স্বামী ও মণীষা কৈরালা জুটিকে। ১৯৯৬ এই ছবি জাতীয় পুরস্কারও পায়।
৬) থালাপাথি (দলপতি)
মণিরত্নমের কল্পনাশক্তিকে স্যালুট না করে উপায় নেই। থালাপাথি অন্তত একথা স্বীকার করতে বাধ্য করেছে। ছবিতে অভিনয় করেছেন দুজন সুপাস্টার - রজনীকান্ত ও মাম্মুত্তি। তারকারা ছাড়াও বিখ্যাত এই ক্রাইম ড্রামার চিত্রনাট্য ছবির পুরোধা। মহাভারতের প্রেক্ষাপটে তৈরি এই ছবি দুর্যোধন ও কর্ণর সম্পর্কের টানাপোড়েন, বন্ধুত্ব, রাজনীতি নিয়ে কথা বলে। এই ছবির সঙ্গীত পরিচালক ইলাইয়ারাজা।
৭) ইরুভার
এম.জি. রামাচন্দ্রন ও করুণানিধির উপর তৈরি ইরুভার ছবিতে অভিনয় করেছেন ঐশ্বর্য রাই বচ্চন, মোহনলাল, প্রকাশ রাজের মতো অভিনেতারা। তামিল ভাষায় তৈরি এই পলিটিক্যাল ড্রামা অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়েছিল। এমনকি এই ছবির জন্য সাপোর্টিং অ্যাক্টর ও সিনেমাটোগ্রাফারের ঝুলিতে আসে জাতীয় পুরস্কারও।
৮) অঞ্জলি
নব্বইয়ের দশকের সেরা ছোটদের ছবিগুলোর মধ্যে একটা অঞ্জলি। রেবতি ও রঘুভরনকে দেখা গিয়েছিল মুখ্য চরিত্রে। মৃত্যুর মুখোমুখি মানসিক ভারসাম্যহীন শিশুর সঙ্গে তার পরিবারের ইমোশনাল সংঘাতকে ছবিতে দৃশ্যায়িত করেছেন মণি। এই ছবি তিন তিনটে জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডাব করা হয়েছিল তেলুগু ও হিন্দিতে।
৯) দিল সে
দিল সে ছবির নাম শুনলেই মনে পড়ে যায় সেই সাউন্ডট্র্যাক। ছবিতে আরও একবার এ.আর. রহমানের সুরের জাদুতে কাবু হয়েছিলেন দর্শক। শাহরুখ খান ও মণীষা কৈরালা অভিনীত এই ছবির চিত্রনাট্য দেখিয়েছিল একজন সাধারণ মানুষ ও একজন সন্ত্রাসবাদীর সম্পর্কের কাহিনি। শুধুমাত্র সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাই নয়, মণিরত্নম দেখিয়েছিলেন মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাত্রাও। এই ছবির সাহায্যেই বলিউডে পা রাখেন প্রীতি জিন্টা।
১০) যুবা
পরিচালকের তৈরি প্রথম হিন্দি ছবি যুবা। তামিল ছবি আয়থা এজুথুর হিন্দি ভার্সন। তিনটে আলাদা গল্পকে একই সুতোয় বেঁধেছেন তিনি। এই ছবিতেই প্রথমবার অভিষেক বচ্চন, বিবেক ওবেরয়, অজয় দেবগণ, করিনা কাপুর, রানি মুখোপাধ্যায় ও এষা দেওলের সঙ্গে কাজ করেন মণিরত্নম। পশ্চিমবঙ্গের ছাত্র নির্বাচনে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ কীভাবে গোটা প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে তাই দেখানো হয়েছে এই ছবিতে।
যদিও তাঁর তৈরি ছবিই বুঝিয়ে দেয় মণিরত্নমের পরিধি, তবুও শুধুমাত্র দশটা ছবির তালিকা দিয়ে মণিরত্নমকে ব্যাখ্যা করা দুস্কর।