Advertisment

নন্দিতা দাসের 'মান্টো' লেখককে চেনার আগ্রহ বাড়িয়ে দেবে

চরিত্রটার ইগো, হতাশা, ভালবাসা, পরিবারের প্রতি দায়িত্ববোধ, সামাজিক কতর্ব্য সবটা দেখাতে হয়েছে। একটা সময় মনে হবে, সত্যিই ঋত্বিক ঘটককে দেখছেন না তো পর্দায়?

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

সাদাত হুসেন মান্টোর ভূমিকায় নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী.

ছবি: মান্টো

Advertisment

অভিনয়ে: নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি, রসিকা দুগ্গল, দিব্যা দত্ত, তাহির রাজ ভাসিন, জাভেদ আখতার

রেটিং: ৪/৫

মান্টো ওরফে সাদাত হাসান মান্টোর গল্প মূলত সমাজের সত্যিটাকে সামনে আনে, সেই কবে সৎ থাকতে চাওয়া মানুষটি পরতে পরতে বুঝিয়ে দেন, তিনি আজও প্রাসঙ্গিক। এদেশের প্রখ্যাত উর্দু লেখক আলি সর্দার জাফরি বলেছিলেন, মান্টো সমাজের মধ্যে থাকা অপরাধের কথা সামনে আনেন, কিন্তু সেই তিনিই নাকি অবসিন বা অশ্লীল সাহিত্য সৃষ্টির অপরাধে অপরাধী, যা তখনকার সমাজের নিরিখে সাহিত্যই নয়। তবে আজ মান্টোর লেখা নয়, স্ক্রিনে মান্টো কতটা উজ্জ্বল, প্রসঙ্গ সেটা। কলকাতায় প্রথম স্ক্রিনিং হল পরিচালক নন্দিতা দাসের ছবি মান্টো-র।

Manto Press Meet Express Photo Shashi Ghosh মান্টোর সঙ্গে আমি নিজের অনেক মিল খুঁজে পেয়েছি, বলেছেন নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি

১৯৪৬ থেকে ১৯৫০, এই কয়েক বছরের মান্টোইয়াতকে পর্দায় তুলে ধরেছেন পরিচালক, প্রায় ছ'বছরেরে চেষ্টায়। ছবির শুরুতেই দেখা যায় মুম্বইয়ের প্রতি আকৃষ্ট এক তরুণকে। যিনি লেখকদের প্রগ্রেসিভ আন্দোলনের অংশ, সহযোদ্ধা ইসমত চুঘতাইয়ের সঙ্গে যাঁর পরিহাস ও সখ্যতার সম্পর্ক। যখন শ্যামের মতো বলিউডে উঠতি তারকা মান্টোর বন্ধু, যখন নিজের লেখার যোগ্য পারিশ্রমিক পেতেন লেখক, যখন তাঁর চিন্তাভাবনা নিয়ে কারও দ্বিমত ছিল না। ছিল কেবল শঙ্কা।

এরপরেই ছবিতে আসে ১৯৪৭ সাল, স্বাধীন ভারত, আর স্বাধীন মান্টো। কিন্তু লেখকের এই সাবলীল চলায় এবার কুঠারাঘাত আসতে চলেছিল। সারা মুম্বই অশান্ত হচ্ছে ধীরে ধীরে, শিল্পীরা বাক স্বাধীনতা হারাচ্ছেন। মান্টোকে বেছে নিতে হয় ভারত কিংবা পাকিস্তানের মধ্যে কাঁটাতারের এদিক বা ওদিক। অনিচ্ছাতেও চলে যেতে হয় পাকিস্তান, এই সবকিছুর সাক্ষী স্ত্রী সাফিয়া।

তাঁর কলম আরও ধারালো হতে শুরু করে, 'ঠান্ডা গোস্তের' মতো লেখা বেরোতে থাকে সেই ক্ষুরধার কলমের খোঁচায়। যা তাঁকে টেনে নিয়ে যায় আইন আদালতের প্রাঙ্গণে। মান্টোর লেখা নাকি অশ্লীল, তাকে নাকি সাহিত্যের মানদন্ডে তলানিতেই রাখতে হয়। মাদকাসক্ত মান্টো নিজের ফেলে আসা মুম্বইকে ভুলতে পারেননি কখনও, বরং মাঝে মাঝে ভুলে যেতে লাগলেন বাড়ির মানুষগুলোকে। ওদিকে অভিমানে চুঘতাইয়ের আসা একটা চিঠিও পড়তেন না, না লিখতেন অশোক কুমারকে। ততদিনে স্টার হয়ে গিয়েছেন তাঁর বন্ধু। সব মিলিয়ে নিজেই তলিয়ে যেতে থাকলেন, কিন্ত হার মানলেন না লেখায়।

Nawazuddin Siddiqui with Rasika Dugal in Manto. মান্টো ছবিতে নওয়াজউদ্দিন ও রসিকা দুগ্গল

ছবিতে নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি কে দেখে মনে হয়, মান্টো চরিত্রে আর কাউকে মানাতো না। পোশাকে তো একদম মানানসই তিনি। কিন্তু ফারাকটা হল গল্পে, যেন আরও দেখার আরও জানার স্পৃহা রয়ে গেল। রসিকা দুগ্গলের সাফিয়া মান্টোর মেরুদন্ড। পুরো ছবিটা জুড়ে সাফিয়া শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে মান্টোর পাশে। আর নজর কাড়লেন জাভেদ আখতার, দিব্যা দত্ত, রণবীর শোরে। একটা ছোট্ট চরিত্র গল্পের বাঁধন কতটা শক্ত করতে পারে, পরিচালক তা দেখালেন বটে।

মুম্বই ছেড়ে যাওয়া এবং স্বাধীন পাকিস্তানে মান্টোর বাস নিয়েই নন্দিতা দাসের মান্টো রচনা। তবে ছবিটা দেখে মনে হবে ২ ঘন্টার টাইমস্প্যানে ধরতে পরিচালককে অনেক, অনেক ঝক্কি পোহাতে হয়েছে। চরিত্রটার ইগো, হতাশা, ভালবাসা, পরিবারের প্রতি দায়িত্ববোধ, সামাজিক কতর্ব্য সবটা দেখাতে হয়েছে। একটা সময় মনে হবে, সত্যিই ঋত্বিক ঘটককে দেখছেন না তো পর্দায়?

Manto Nandita Das Movie Review Nawazuddin Siddiqui
Advertisment