/indian-express-bangla/media/media_files/2025/08/13/ch569490-2025-08-13-17-46-05.jpg)
কে এই অভিনেত্রী?
১৯৪৪ সালে মুম্বাইয়ে জন্ম নেয় সালমা বেগ, যিনি নাজ নামে বলিউডে পরিচিতি পান। মাত্র চার বছর বয়সে চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করে তিনি দ্রুতই ইন্ডাস্ট্রির সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত শিশু অভিনেত্রী হয়ে ওঠেন। 'বুট পলিশ' ছবিতে অভিনয়ের জন্য কান চলচ্চিত্র উৎসবে বিশেষ পুরস্কার পান, আর দেবদাস-এও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন তিনি। দিলীপ কুমার, রাজ কাপুর, নার্গিস, আশা পারেখসহ শীর্ষ তারকাদের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি।
কিন্তু সাফল্যের পেছনে লুকিয়ে ছিল এক অন্ধকার বাস্তবতা। নাজের পরিবার অর্থকষ্টে দিন যাপন করেছেন। আর তাঁর মা ছিলেন অতি উচ্চাভিলাষী ও অর্থলোভী। মঞ্চে নাচের মাধ্যমে নাজই হয়ে ওঠেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। পড়াশোনা বা বিশ্রামের সুযোগ ছিল না। রাজ কাপুর তাঁকে সুইজারল্যান্ডে পড়তে পাঠানোর প্রস্তাব দিলেও মা তা ফিরিয়ে দেন।
নাজের বাবা মির্জা দাউদ বেগ ছিলেন গল্পকার, তবে তেমন সফল হননি। পরে মা এক ক্যামেরাম্যানের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে বাবাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। নাজ বাবাকে দুই বছর দেখেননি। এই সময়েই তাঁর মনের ভেতর হতাশা জমতে থাকে।
নাজ স্টারডাস্টকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, "আমি পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিলাম, কারণ মা আমার জন্য সিনেমার কাজ নেওয়া বন্ধ করেননি আর বাবা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। মা আমার উপার্জনের ওপর এতটাই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিলেন যে তাঁর স্বাচ্ছন্দ্যের জীবন ছাড়তে চাননি। আমি ছিলাম খুব ছোট, বাবা-মাকে না বলতে পারিনি। আমার জন্য ছিল না কোনো খেলাধুলা, বন্ধু, পর্যাপ্ত ঘুম বা খাবার। শুটিং শেষে ক্লান্ত হয়ে ফিরলে তাঁরা নিজেদের ঝগড়ায় ব্যস্ত থাকতেন, আমার দিকে ফিরেও তাকাতেন না। কতবার যে না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছি, তার হিসাব নেই। এক গ্লাস দুধ দেওয়ার মানুষও ছিল না।"
নাজ বলেন, “আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিল, আমি শুধু একটু নিঃশ্বাস নেওয়ার জায়গা চেয়েছিলাম। সহ্য করতে না পেরে প্রথমবার আত্মহত্যার চেষ্টা করি। আমার আয়া প্রায়ই বলত, মানুষ কূপে ঝাঁপ দিয়ে জীবন শেষ করে। একদিন বাড়িতে একা থাকতে থাকতে আমি কূপের দিকে দৌড়ে যাই। ভাগ্যক্রমে আয়া দেখে ফেলে আমায় ফিরিয়ে আনে। তিনিই ছিলেন একমাত্র মানুষ, যিনি আমার যত্ন নিতেন।”
তিনি আরও বলেন, “আমার মা কী করেছিলেন? আমাকে জড়িয়ে ধরেননি, কাঁদেননি, বরং চড় মেরে চিৎকার করেছিলেন। আমি বিশ্বাসই করতে পারিনি। ওটা আমার মন ভেঙে দিয়েছিল। তারপরও পরিস্থিতি বদলায়নি- বরং আরও খারাপ হয়। একসময় বাড়ি থেকে পালিয়ে আবার কূপে ঝাঁপ দেওয়ার চেষ্টা করি, কিন্তু সেদিনও আয়া আমাকে বাঁচিয়ে দেয়।”
ব্যক্তিজীবনে নাজ ছিলেন গভীরভাবে আহত। দুইবার কূপে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু দুবারই তাঁর নার্স তাঁকে বাঁচান। প্রতিবারই মায়ের প্রতিক্রিয়া ছিল শীতল। যেন তাঁর কোনও যায় আসে না। সহানুভূতির বদলে গালাগাল ও মারধর। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর অভিনয়ের পাশাপাশি নাজ দক্ষিণ ভারতীয় অভিনেত্রীদের জন্য ডাবিং করতেন, যেমন শ্রীদেবীর ছবিতে বহুবার তিনি হিন্দি ভাষায় সংলাপ বলেছেন। তিনি সুব্বিরাজকে বিয়ে করে কিছুটা স্থির জীবন পেলেও আগের খ্যাতি আর ফিরে পাননি।
লিভারের দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতায় ৫১ বছর বয়সে নাজ মৃত্যুবরণ করেন। শেষ সময়ে তিনি কোমায় ছিলেন এবং শান্তিপূর্ণভাবে চলে যান। দুঃখজনকভাবে, তাঁর শেষকৃত্যে চলচ্চিত্র জগতের কেউ উপস্থিত ছিলেন না—যেন একসময়ের উজ্জ্বল নক্ষত্র নীরবে মিলিয়ে গেলেন আকাশ থেকে।