মাত্র ৩৫ বছরে সব শেষ, মৃত্যুর দিনই জাতীয় পুরস্কার যেতেন এই পরিচালক!

১৯৩৯ সালে শ্রীনগরে জন্ম নেওয়া আওতার কৌলের শৈশব ছিল অস্থিরতায় পরিপূর্ণ। বাবার নির্যাতনে তিনি কিশোর বয়সে বাড়ি থেকে বিতাড়িত হন এবং দিল্লির রেলওয়ে প্ল্যাটফর্মে রাত কাটাতে বাধ্য হন।

১৯৩৯ সালে শ্রীনগরে জন্ম নেওয়া আওতার কৌলের শৈশব ছিল অস্থিরতায় পরিপূর্ণ। বাবার নির্যাতনে তিনি কিশোর বয়সে বাড়ি থেকে বিতাড়িত হন এবং দিল্লির রেলওয়ে প্ল্যাটফর্মে রাত কাটাতে বাধ্য হন।

author-image
IE Bangla Entertainment Desk
New Update
de1

কে এই পরিচালক?

সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে পরিচালক অনুরাগ কাশ্যপ স্বীকার করেন, তিনি প্রায়ই চীন ও ইরানের চলচ্চিত্রকারদের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পান, যারা নানা রকম সরকারি বিধিনিষেধের মধ্যেও কাজ চালিয়ে যান। তিনি কোরিয়ান নির্মাতাদেরও প্রশংসা করেন, যাঁরা বয়স বাড়লেও নিজেদের সীমা ভেঙে নতুন দিগন্ত ছুঁয়ে চলেছেন। কাশ্যপ বিশেষভাবে উল্লেখ করেন ভারতীয় সমান্তরাল সিনেমার এক অবহেলিত প্রতিভা- আওতার কৃষাণ কৌলকে, যিনি মণি কৌল বা মৃণাল সেনের মতো গুরুত্ব পাননি। মাত্র ৩৫ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যু হয়, আর মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগেই তাঁকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত করা হয়েছিল।

Advertisment

১৯৩৯ সালে শ্রীনগরে জন্ম নেওয়া আওতার কৌলের শৈশব ছিল অস্থিরতায় পরিপূর্ণ। বাবার নির্যাতনে তিনি কিশোর বয়সে বাড়ি থেকে বিতাড়িত হন এবং দিল্লির রেলওয়ে প্ল্যাটফর্মে রাত কাটাতে বাধ্য হন। পরে স্থানীয় এক চা বিক্রেতার দোকানে কাজ শুরু করেন, সেখান থেকেই দিনে তিনবেলা খাবার পেতেন। ধীরে ধীরে হোটেলে চাকরি এবং পরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কাজ পান। নিউ ইয়র্কে পোস্টিংয়ের সময় তিনি সিনেমা নির্মাণ শেখেন এবং সংবাদমাধ্যমে কাজ করার অভিজ্ঞতাও অর্জন করেন।

১৯৭০ সালে তিনি ভারতে ফিরে আসেন, মার্চেন্ট-আইভরি প্রোডাকশনের 'বম্বে টকি' ছবিতে কাজ করতে। তাঁর একমাত্র পরিচালিত সিনেমা ছিল ২৭ ডাউন (১৯৭৪), যা রমেশ বক্সির উপন্যাস অঠারা সুরজ কে পাউধে অবলম্বনে নির্মিত। এতে অভিনয় করেছিলেন রাখি ও এম.কে. রায়না। একজন রেলকর্মীর, ট্রেনে দেখা হওয়া এক তরুণীর সঙ্গে সম্পর্কের কাহিনী ছিল, এই ছবির মূল সুর। সঙ্গীত পরিচালনা করেছিলেন পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া ও ভুবনেশ্বর মিশ্র, আর প্রোডাকশন ডিজাইনে ছিলেন সত্যজিৎ রায়ের সহযোগী বংশী চন্দ্রগুপ্ত। ছবিটি জাতীয় পুরস্কার জেতে সেরা পূর্ণদৈর্ঘ্য হিন্দি চলচ্চিত্র হিসেবে। 

Advertisment

আওতার কৌল ছিলেন গভীরভাবে পরিবারকেন্দ্রিক। শৈশবে বাবার নিষ্ঠুরতা সহ্য করলেও, তিনি পরবর্তী জীবনে পরিবারের জন্য নোঙর হয়ে উঠেছিলেন। মৃত্যুর খবর পেয়ে তাঁর মা, ভাইয়েরা এবং আত্মীয়রা এত সাংঘাতিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন, যা আজও ঘনিষ্ঠদের স্মৃতিতে আসে। বিশেষ করে তাঁর একদম ছোট ভাই, যিনি আওতারকে সাহায্য করতে ভারতীয় বিমানবাহিনীর চাকরি ছেড়েছিলেন, তাঁর মৃত্যুর পর, চরম মানসিক আঘাতে বিপর্যস্ত হন।

অভিনেতা এম.কে. রায়না তাঁর মৃত্যুতে বলেন, “নিউ ইয়র্কে প্রশিক্ষণ, সাহিত্য, সংগীত ও থিয়েটারের প্রতি তাঁর গভীর আগ্রহ তাঁকে মৌলিক কণ্ঠস্বর করে তুলেছিল। হাতে থাকা তিনটি স্ক্রিপ্ট যদি তিনি সম্পূর্ণ করতে পারতেন, তবে তিনি নিঃসন্দেহে ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে অন্যতম প্রভাবশালী নির্মাতা হতেন।" 

Bollywood Directors bollywood