Meher Afroz Shawon: চোখের সামনে সন্তান কেমন হুশ করে বড় হয়ে যায়। আর তার বড় হওয়ার পরেই আসতে ধীরে মায়ের কাছেও অতটাই বড় হয়ে ওঠে সে। শাওনের কাছেও তাঁর বড় ছেলে নিষাদের বেড়ে ওঠা ততটাই আবেগের। সন্তানকে প্রতিদিন একটু একটু করে বড় করে তোলার যে পথ, সেটা নেহাতই সোজা নয়। তাই তো ছেলেকে নিয়ে বড়সর একটা প্যারাগ্রাফ লিখে ফেলেছেন তিনি।
শাওন ছেলের একটি ছবি শেয়ার করেছেন সমাজ মাধ্যমে। তিনি লিখলেন... "২০০৭ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি আমার বড় ব্যাটা নিষাদ হুমায়ূনএর জন্ম। এ বছর বয়স ১৮ হবে, তাই নিয়ে উনার সে কি আনন্দ! ২ মাস ধরে থেকে থেকে নানা প্রশ্ন!! মা, ১৮ হলে আমি এডাল্ট হয়ে যাবো তাই না? তাহলে তো একা একা হাঁটতে যেতে পারবো, দোকানে যেতে পারবো। কিছু কিনতে হলে তোমার পারমিশন লাগবে না!”কখনও আবার দুশ্চিন্তা মিশ্রিত আত্মকথন। ১৮ হলে বাসার অনেকগুলা রেসপন্সিবিলিটি তো আমার নেয়া দরকার … মাআআআ, আমি কি কোনো একটা পার্ট টাইম জব করতে পারি?”
শাওন ছেলেকে তাঁর ১৮ বছর বয়সে কীভাবে চমকে দেবেন সেই নিয়েও লিখছিলেন। আগে থেকেই ভেবে রেখেছিলেন এভাবেই তাঁকে সারপ্রাইজ দেবেন। ছেলে বড় হলে, তাঁকে নিয়ে মায়ের অনেক ধরনের প্ল্যান থাকে। কিন্তু, সদ্য ১৮ বছরে পা দেওয়া সন্তানকে জীবনের ঠিক ভুল শিক্ষা দেওয়াও তো মায়ের কাজ। কিন্তু, সেদিন যে এমন এক ঘটনা ঘটবে, ছেলের জন্মদিন তো দূর, বরং তাঁকে হাজিরা দিতে হবে থানায়, ভাবেন নি তিনি। শাওন আরও লিখলেন...
"১৮ তম জন্মদিনে কি উপায়ে চমকে দেয়া যায় ভেবে রেখেছিলাম। তার প্রিয় মানুষগুলোকে সাথে নিয়ে কাটাতে চেয়েছিলাম ৭ ফেব্রুয়ারির পুরো দিনটি। ৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় সেই আয়োজন নিয়েই বন্ধুদের সঙ্গে কথা হচ্ছিল টেলিফোনে। নিষাদ এসে বলল “মা লিভিংরুমে কয়েকজন পুলিশ এসেছে, তোমার সাথে কথা বলতে চায়।” আমি বসার ঘরে গেলাম। সিভিল ড্রেসের একজন ভদ্রলোক, সাথে ২ জন ইউনিফর্ম পরা মহিলা পুলিশ, ১ জন সাধারণ পোশাকের উপর ‘Detective Branch’ লেখা জ্যাকেট পরা তরুণী দাঁড়িয়ে। ভদ্রলোক বললেন, ম্যাম আপনাকে একটু আমাদের সাথে ডিবি অফিসে যেতে হবে, আমাদের স্যার একটু আপনার সাথে কথা বলবেন। তারা সত্যিই গোয়েন্দা বিভাগের লোক কি না তা নিয়ে একটু বিভ্রান্ত হলাম এবং আইডি দেখতে চাইলাম। তিনি আমাকে তার পরিচয় নিশ্চিত করলেন এবং ১৫/২০ জন পুলিশের একটি দল সিঁড়িঘর থেকে আমার বসার ঘরে প্রবেশ করলো।"
একথা অনেকেই জানেন, সমাজ মাধ্যমে সক্রিয় তিনি। তাই তো, ইউনুস সরকারের বিরোধী মন্তব্য করেছিলেন বহুবার। বঙ্গবন্ধুর বাড়ি ধ্বংস হওয়ার কারণে যে পোস্ট করেছিলেন তিনি, সেই কারণেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। অভিনেত্রী সেদিনের ঘটনা প্রসঙ্গে লেখেন... "আমি পোশাক পরিবর্তন করে তাদের সাথে রওনা হলাম। পেছনে রেখে গেলাম আমার হতবিহ্বল ১৭ বছর ১১ মাস ২৯ দিন বয়সী নিষাদ আর ১৪ বছর ৫ মাস বয়সী তীক্ষ্ণ বুদ্ধি এবং ঠান্ডা মাথার ছেলেকে। গোয়েন্দা বিভাগের অফিসে কি কি হলো তা এই পোস্টের বিষয় না। এদিকে প্যানিক এ্যাটাক হওয়ায় একাধিক ঘুমের ওষুধ খেয়ে জন্মদিনের প্রথম প্রহর হাসপাতালে কাটে নিষাদ হুমায়ূনএর।"
ছেলের শারীরিক এবং মানসিক অবস্থা তখন ভয়ঙ্কর। পাশে বাবা নেই, মাকে নিয়ে গিয়েছে গোয়েন্দা বিভাগের অনেকেই। তাঁর জন্মদিন যেন সাংঘাতিক পরিস্থিতিতে ভেসে গেল। শাওন ছেলের উদ্দেশ্যে বলেন, "বাবা নিষাদ… ১৮ খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বয়স। ছোট ভাই নিনিত হুমায়ূন আর মা মেহের আফরোজকে নিয়ে ছোট্ট সংসারের যে বড় দায়িত্ব তুমি নিতে চাইছো, তার প্রস্তুতি তুমি প্রথম রাতেই নিয়ে নিলে। তারুণ্যের উজ্জ্বল আলোকিত জীবনের কঠিণ বাস্তবে তোমাকে স্বাগতম। নামের পেছনে হুমায়ূন পদবী থাকার আনন্দ যেমন আছে, তেমনি একাকিত্বের তীব্র বেদনাও আছে।"