একুশের বিধানসভা নির্বাচনের (West Bengal Assembly Election 2021) ‘এপিসেন্টার’ নিঃসন্দেহে নন্দীগ্রাম। সবুজ-গেরুয়া দুই প্রতিপক্ষ শিবিরের চোখ রাঙানিতে উত্তাল। ‘এ বলে আমায় দেখ তো ও বলে আমায়’। বিজেপি (BJP)-তৃণমূল (TMC) কেউ কাউকে এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে নারাজ! আবার ২০১১ সালে এই নন্দীগ্রামেই তৎকালীন ৩৪ বছরের বাম-শাসনের কবর খুঁড়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। আর সেই নন্দীগ্রামের (Nandigram) মাটি নিয়েই এবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) বিরুদ্ধে বাংলার মসনদ দখলের লড়াইয়ে বিদ্রোহ ঘোষণা করে ফেলেছেন পদ্ম-প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। তাঁর হয়েই এবার নন্দীগ্রামে প্রচারের ময়দানে নামতে চলেছেন 'মোদীর তারকা সেনাপতি' মিঠুন চক্রবর্তী (Mithun Chakraborty)।
৭ মার্চ ব্রিগেডের মঞ্চে দুই 'তৃণমূল-ছুট' নেতা শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে মিঠুন চক্রবর্তীর সখ্যতা অনেকেরই নজর কেড়েছিল। একে-অপরের সঙ্গে কানে কানে কথা বলছিলেন। কী বলছিলেন? কৌতূহল ছিল উপস্থিত অনেকেরই। পরে ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গিয়েছিল, অধিকারীকে নাকি মিঠুন বলছিলেন, দরজা তুমিই খুলেছো, নইলে বাকিরা সাহস পেত না! সেই সঙ্গে নাকি নন্দীগ্রামে শুভেন্দুর হয়ে প্রচারের ইচ্ছেওপ্রকাশ করেছিলেন মহাগুরু। মমতার বিরুদ্ধে প্রচারের সেই ইচ্ছেই সম্ভবত এবার পূরণ হতে চলেছে মিঠুনের।
বৃহস্পতিবার ‘তৃণমূলী ঝড়’ রুখতে ভোটপ্রচারের ময়দানে অবতরণ করেছেন মিঠুন। এদিন বাঁকুড়ায় (Bankura) ‘বাঙালিবাবু’র চপার নামতেই দেখা গিয়েছিল জনসুনামির ঢল! তবে এবার বিধানসভা ভোটের এপিসেন্টারে গিয়ে গেরুয়া তুফান তুলতে উদ্যোগী হয়েছেন মহাগুরু। পদ্ম শিবির ঘনিষ্ঠ সূত্রে খবর, এক সময়ে যাঁকে জননেত্রী বলে মান্যি করতেন মিঠুন, এবার সেই তিনিই যেন নন্দীগ্রামের নির্বাচনী লড়াইয়ে পরাস্ত হন, সেটাই চাইছেন সুপারস্টার।
প্রসঙ্গত, গতকালই মহাগুরু যখন শালতোড়া, কোশিয়ারির রোড শোতে ব্যস্ত ছিলেন, তখন মমতার একনিষ্ঠ সৈনিক হিসেবে নন্দীগ্রামে প্রচার সারেন সাংসদ-অভিনেতা দেব। মমতা সম্ভবত ফের একবার ২৮ কিংবা ২৯ তারিখ নাগাদ শেষবেলার প্রচার সারতে যাবেন নন্দীগ্রামে। আর সেই দিন বিজেপিও ময়দান ছাড়তে চাইছে না। বাঙালিবাবু আবেগকে হাতিয়ার করে রোড শোর আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মিঠুন এদিন গেরুয়া শিবিরের হয়ে মিছিলের পাশাপাশি মঞ্চে বক্তৃতাও দেবেন বলে জানা যাচ্ছে।
তবে নন্দীগ্রামে এই তৃণমূল-বিজেপি প্রচার যুযুধানে ভয়ে কাঁটা হয়ে রয়েছে প্রশাসনও। কারণ, এর আগে সেখানে প্রচারে গিয়ে পায়ে চোট পেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তারপর আবার, এদিন ঘনঘন প্রচার-রুট বদলানোর অভিযোগও উঠেছিল তৃণমূল সুপ্রিমোর বিরুদ্ধে। এবার নির্বাচন কমিশন আগেভাগেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, আগে থেকে নির্ধারিত প্রচার-রুট বদলাতে পারবেন না কেউ। তবে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তা মেনে নেবেন কিনা, সেটাই সংশয়। ফলে একই রুটে মমতা-মিঠুনের প্রচার মিছিল চললে সংঘাত অবধারিত। আর সেটাই এখন আশঙ্কার মূল কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।