হারিয়ে গেল শহরের আরও একটা সিঙ্গল স্ক্রিন হলের ঠিকানা, ঝুলল বন্ধের নোটিস। একটু হলেও কমে গেল থিয়েটার পাড়ার কোলাহলের মাত্রা। মাল্টিপ্লেক্সের দাপটে বন্ধ হয়ে গেল উত্তর কলকাতার হাতিবাগানের মিত্রা সিনেমা হল। টিকিট কাউন্টারে আর বিকোবে না ৫০ টাকা, ৭০ টাকার সিনেমা পাস। কেন বন্ধ হয়ে গেল মিত্রা? উত্তরটা একই। চলছে না, খরচ চালানো যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে এই কঠিন সিদ্ধান্ত নিলেন দীপেন্দ্র কৃষ্ণ মিত্র (মিত্রা সিনেমা হলের কর্ণধার)। বিগত দু'বছরে বন্ধ হয়ে গেছে শহরের কিছু বিখ্যাত সিনেমা হল, সেই তালিকায় এবার নাম জুড়ল মিত্রার। গত শনিবারই শেষ শো দেখানো হয়েছে এই হলে।
উত্তর কলকাতার ঐতিহ্যবাহী হলগুলোর অন্যতম মিত্রা। ১৯৬৩ সালে তৈরি এই হল বাংলার সিনেমার বহু চড়াই-উতরাইয়ের সাক্ষী। সত্যজিৎ রায় থেকে তপন সিনহা, সবার ছবি দেখিয়েছে ৮৮ বছরের পুরোনো এই প্রেক্ষাগৃহ। কর্ণধার দীপেন্দ্র কৃষ্ণ মিত্র বললেন, ''আমার ৭৫ বছর বয়স। শারীরিক অবস্থা ভাল নয়। আমি চাই না কর্মচারীরা আমার কারণে দুর্ভোগে পড়ুক। ওরা আমার সন্তানসম। ওদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করেই এই সিদ্ধান্তে আসি। তবে কেউ যদি হল নিয়ে চালাতে চায় আমার কোনও আপত্তি নেই। এখন আর সিঙ্গল হলে কেউ ছবি দেখতে আসে না। বিগত কয়েক বছরে খরচও ওঠেনি''।
আরও পড়ুন, রাজনীতিতে ভূতের উপস্থিতি: ভূতের ভবিষ্যত, ভবিষ্যতের ভূত এবং ভবিষ্যত সম্পর্কে অনীক দত্ত
১৯৩১ সালে চিত্রা নামে তৈরি হয়েছিল এই হল। স্বাধীনতার পর তার মালিকানা পান হেমন্তকৃষ্ণ মিত্র, আর তখন থেকে নাম হয় মিত্রা। বানিজ্যিক হোক বা শহুরে ছবি, সবার জন্যই মিত্রার অবারিত দ্বার। সম্ভবত, মিত্রার ইমারত গুঁড়িয়ে তৈরি হবে শপিং মল। থিয়েটারে শেষ দেখানো ছবি ছিল 'কেসরি'। মেট্রো, চ্যাপলিন, এলিট, মালঞ্চ-দের এবার দোসর মিত্রা। আর এই পতনের নিবার্ক সাক্ষী হয়ে থেকে গেল মিনার, দর্পণা, টকী শো হাউস।