ঝকঝকে মাল্টিপ্লেক্স, পপকর্ন-কোল্ড ড্রিংকস-সহযোগে নরম গদিতে ঠাসাঠাসি, পেল্লাই সাইজের সিনেপর্দা… এসবের যুগে সিঙ্গল স্ক্রিন সিনেমাওয়ালাদের হাহাকারটাই কোথায় যেন এক্কেবারে ব্রাত্য হয়ে গিয়েছে। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর 'সিনেমাওয়ালা' ছবিতে চিৎকার করে বলতে চেয়েছিলেন, তুলে ধরেছিলেন সেসব সিঙ্গলস্ক্রিন মালিকদের হাহাকারের কথা। কিন্তু ওই সময়ের ফের! কালের নিয়মে আবেগেও যে ভাঁটা পড়ে। বোঝে না সে ঐতিহ্য-নবীনের ফারাক। মাল্টিপ্লেক্সের ভিড়ে বর্তমানে সিনেমাহলগুলোরও সেই একই পরিস্থিতি। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে প্রায় দুশোটিরও বেশি সিনেমাহল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সেই খাতায় নাম লিখিয়েছে কলকাতার ঐতিহ্যবাহী মিত্রা সিনেমাহলও। যেখানে কিনা একসময় চলচ্চিত্র জগতের ডাকসাইটে নাম সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, তপন সিনহাদের যাতায়াত ছিল। সেই মিত্রা সিনেমাহলের অস্তিত্ব কলকাতার বুক থেকে এবার উবে যাচ্ছে, আর তা নিয়েই আবেগপ্রবণ পরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়।
Advertisment
বন্ধ হয়েছে অনেক আগেই। তবে জুন মাসে ভেঙে ফেলা হবে মিত্রা সিনেমাহলের বিল্ডিং। তার পরিবর্তে সেখানে মাথা তুলে গজিয়ে উঠবে ঝাঁ-চকচকে শপিং মল। ৮৩, কর্নওয়ালিস স্ট্রিট, অর্থাৎ আজকের ব্যস্ত হাতিবাগানের বিধান সরণি। রাস্তার পাশ দিয়ে এখনও গেলে দেখা যায় মিত্রা সিনেমাহল। কিন্তু কদিন পর সেই মায়ার স্মৃতি-বিজরিত কাঠামো আর দেখা যাবে না!
১৯৩১ সালে নেতাজি সিনেমাহলটির উদ্বোধন করেছিলেন। তারপর থেকেই প্রতি বছর সেখানে তাঁর জন্মদিনে ছবিতে মালা দেওয়া হত। তখন অবশ্য সিনেমাহলের নাম ছিল চিত্রা। তবে পরে তা পাল্টে হয় মিত্রা। সেই সিনেমাহল ভেঙে ফেলার খবরে স্বাভাবিকবশতই মুষড়ে পড়েছেন পরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-সহ সিনেজগতের আরও অনেকে।
সেই প্রেক্ষিতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় এক আবেগঘন পোস্ট শেয়ার করলেন শিবপ্রসাদ। যেখানে মিত্রার কর্ণধার দীপেন মিত্রর সঙ্গে একফ্রেমে দেখা যাচ্ছে 'হামি'র খুদে নায়ক ব্রতকে। পরমযত্নে সে সিনেমাদাদুর হাতে তুলে দিচ্ছে সন্দেশ। আবদার, 'ও সিনেমাদাদু একটু সন্দেশ খাও'। পরিচালকের আক্ষেপ, "মিত্রা বন্ধ হল, আর হবে না দুই প্রজন্মের এমন মিলন।"