পর্দার 'মৃণাল সেন' চঞ্চল চৌধুরীকে নিয়ে একটি যতটাই মাতামাতি, 'গীতা সেন' মনামী কিন্তু একেবারেই পিছিয়ে নেই। পরিচালক মৃণাল সেনের জীবনে তাঁর যতটাই ভূমিকা ছিল, ছবির ক্ষেত্রে কিন্তু সৃজিত মুখোপাধ্যায় ঠিক ততটাই ভরসা করেছেন মনামী ঘোষকে। এরকম একটা গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র সঁপে দিয়েছিলেন অভিনেত্রী কাঁধে। দীর্ঘদিন ধরে আলোচনায় এই ছবি।
মৃণাল সেন বাংলা তথা ভারতীয় চলচ্চিত্রে এমন এক নাম, যিনি আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতীয় সিনেমাকে এক অন্য মাত্রা দিয়েছিলেন। জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত এই পরিচালকের সিনেমার ধাঁচ একদম অন্য। অঞ্জন দত্ত থেকে মিঠুন চক্রবর্তী, সকলের জীবনে মাস্টার অফ আর্ট হয়ে থেকেছেন তিনি। তাই যখন আজ তাকে নিয়ে তৈরি হচ্ছে একটি সিনেমা, তখন আপামার বাঙালির আনন্দের শেষ নেই। এবং এই সিনেমাতে নিজের অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে IE- বাংলার সঙ্গে কথা বললেন মনামী ঘোষ।
গীতা সেন, মানুষটিকে দেখা হয়েছে কোনোদিন সামনে থেকে?
না, সেই সৌভাগ্য আমার কোনদিন হয়নি। তবে এইটাই আশা রাখবো যে ওনার আশীর্বাদ নিশ্চয়ই এই চরিত্রটা সঙ্গে এবং আমার সঙ্গে থাকবে মানে, আমাদের এই ছবিটার সঙ্গে থাকবে। তবে সামনাসামনি দেখা না হওয়ার আক্ষেপ, সারা জীবন রয়ে যাবে।
গীতা সেন হওয়ার আগে কতটা মৃণাল সেনকে বুঝতে হয়েছিল মনামীকে?
কোন চরিত্র, বা যেকোনো চরিত্র করার আগেই তার এবং তার চারপাশে চরিত্র, মানে আমি তো মৃণাল সেনের স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেছি। কিন্তু এরকম চরিত্র করার আগে চারপাশের সমস্ত চরিত্রগুলোকে খুব ভাল করে বুঝে নিতে হয়। নাহলে, চরিত্রের সঙ্গে তোমার কী সম্পর্ক, তোমার কী কথোপকথন, তার কী প্রতিক্রিয়া সেটা বোঝানো মুশকিল হয়ে যায়। যতটা সম্ভব যতটা পসিবল আমার পক্ষে তাঁকে বুঝতে হয়েছে।
জীবনের অন্যতম সেরা চরিত্র হিসেবে কি মনামী দাগিয়ে দিতে পারে গীতা সেনের চরিত্রটিকে?
নিশ্চয়ই পারে, অবশ্যই পারে। আমার জীবনে আমি যে ধরনের চরিত্রগুলোতে অভিনয় করেছি। বা আমার জীবনে যে চরিত্রগুলি সেরা তার মধ্যে গীতা সেনের চরিত্রটি অন্যতম। কিন্তু এটা আমি আমার দিক থেকে বলছি, দর্শকদের বিষয়টা, আমি তাদের উপর ছেড়ে দিলাম। কিন্তু আমার করা চরিত্র গুলির মধ্যে গীতা সেন অন্যতম।
কোথাও গিয়ে মনে হয়েছিল গুরুদায়িত্ব পালন, এমন একটা চরিত্রে অভিনয় করা?
ভীষণভাবে একটা গুরুদায়িত্ব মনে হয়েছিল। শুরু থেকেই একটা গুরুদায়িত্ব মনে হয়েছিল। শুধু এই চরিত্রে অভিনয় করা নয়। এটা মৃণাল সেনের বায়োপিক। সেখানে তার স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করাটা কঠিন একটা কাজ। চঞ্চলদার সঙ্গে অভিনয় করা একটা বড় পাওয়া। সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে এটা আমার প্রথম কাজ। তার থেকেও বড় কথা হচ্ছে সকলের আমার ওপর যে বিশ্বাস। হাসান দা, ফ্রেন্ডস কমিউনিকেশন তারা যে বিশ্বাস করে আমাকে এরকম একটা গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র দিয়েছিলেন, সেটা যেন আমি পূরণ করতে পারি এটাই ছিল একটা গুরুদায়িত্ব।
চঞ্চল চৌধুরী, মৃণাল সেনের ভূমিকায়। মৃণাল সেনকে সামনে থেকে দেখেছ কোনওদিন? দেখে থাকলে, দুজনের প্রেজেন্সে কোনও মিল পেলে?
মৃণাল সেনকে সামনাসামনি দেখার সুযোগ আমার হয়নি। উনি যখন ছিলেন আমি তখন ওনাকে পর্দায় দেখেছি। কিন্তু চঞ্চলদার সঙ্গে মিল পেলাম কিনা এই বিষয়ে বলতে হয় লুক ওয়াইজ অনেকটাই এক লেগেছে। যখন আমরা অভিনয় করি তখন তো আর সামনে মানুষটিকে সেইভাবে দেখার সুযোগ হয় না। তখন তো আমিও অভিনয় করছি। আর পুরো ছবিটা দেখার আমার সৌভাগ্য হয়নি। কিন্তু যখন ট্রেলারটা দেখলাম। এবং 'ও আলোর পথযাত্রী' গানটি শুরু হল এবং চঞ্চলদা দরজা খুলে বেরিয়ে এলেন, তখন তো এক ঝলকে মনে হলো মৃণাল সেনকেই দেখলাম।
তোমার পছন্দের পরিচালক কে, সত্যজিৎ রায় নাকি মৃণাল সেন?
আমার মনে হয় এরকম কিংবদন্তি পরিচালকের মধ্যে বাছাবাছির কোন জায়গায় নেই। তারা অত্যন্ত উঁচু মাপের মানুষ এবং পরিচালক।
মৃণাল সেন, অনেকে বলেন তাঁর সিনেমা বোঝা খুব কঠিন, তোমার কি তাই মনে হয়?
ব্যাপারটা ঠিক সেরকম নয়। যেখানে কঠিন সেখানে কঠিন যেখানে সহজ সেখানে সহজ।
একজন মানুষের বায়োপিক নির্মাণ করা নিতান্তই সহজ না, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, সবমিলিয়ে কতটা পারলেন?
( হাসি ) এই উত্তরটা আমি দেব না। কারণ আমার মনে হয় এই উত্তরটা দেওয়া আমার সাজে না।
কিছুদিন আগেই অঞ্জনদা কে দেখা গিয়েছে মৃণাল সেনের ভূমিকায়, কাকে বেশি নম্বর দেবে চঞ্চলদাকে নাকি অঞ্জন দত্ত?
প্রথম কথা হচ্ছে অঞ্জনদার ছবিটা আমার দেখা হয়নি। আর দ্বিতীয় কথা যদি আমি ছবিটা দেখতাম ও, তাহলে দুজনের মধ্যে নম্বর দেওয়ার জায়গা নেই। দুজনকে নম্বর দেওয়ার মতো যোগ্যতা এখনো আমার তৈরি হয়নি।
বর্তমানে কি সিনেমার ল্যাংগুয়েজ বা গল্প বলার ধরন পাল্টে গিয়েছে?
একদম পাল্টে গিয়েছে। ধরন পাল্টে গেছে। দর্শকের পছন্দ পাল্টে গিয়েছে। কারণ আমার মনে হয়, ফিল্ম মেকাররা যারা ছবি বানান তারা নানা রকম এক্সপেরিমেন্ট করছেন। এখন দর্শকের টেস্ট বদলে গেছে। প্রেডিক্ট করা খুব মুশকিল, যে তাদের কী পছন্দ হবে। কখনো হার্ডকোর কমার্শিয়াল পছন্দ করছেন আবার কখনো একটু অন্য ধরনের গল্প পছন্দ করছেন। তো বিভিন্ন রকম এক্সপেরিমেন্ট করে যাচ্ছেন গল্পের সাথে তাঁরা। ফলে, অনেকটাই বদল এসেছে।