ছবি- আহারে মন
পরিচালক- প্রতীম ডি গুপ্ত
অভিনয়ে - পাওলি দাম, ঋত্বিক চক্রবর্তী, পার্ণো মিত্র, আদিল হুুুুসেন।
রেটিং- ৩/৫
রূপকথার গল্পরা যদি হঠাত করেই সামনে চলে আসে কেমন যেন মনটা ভাল হয়ে যায়। কিন্তু সেই রূপকথার গল্পগুলোর কোনও একটার ছন্দপতনে মন খারাপ হওয়াটাও স্বাভাবিক। 'আহারে মন' সেরকমই একটা গল্পগুচ্ছের বুনন।
চারটে গল্প সমান্তরালভাবে এগিয়ে চলে। প্রত্যেকটাই তাদের নিজস্ব ছাঁচে। ছবিটা শুরু হয় রমোলা আর মি. পাহাড়ির (আদিল-পাওলির) গল্প দিয়ে। একজন ইমিগ্রেশন অফিসার আদিল, আর পাওলি আসেন তাঁর কাছে রোম ঘুরতে যাওয়ার আগের ফর্মালিটি পূরণ করতে। এভাবেই আলাপ অচেনা মন ও একলা মনের। এরপরেই দেখা যায় ঋত্বিকের সঙ্গে সুজি কিউ অর্থাৎ পার্নো মিত্রের প্রেমের চিত্রনাট্য। অন্যের বাড়িতে চুরি করতে গিয়ে আলাপ হয় দুজনের। এরপর নানা জায়গায় হাতসাফ করার খেলায় বন্ধুত্ব গাঢ় হয়। জুটি বাঁধে পাগল মন ও খেয়ালি মন। চিত্রাঙ্গদার চরিত্রটি একজন ক্যান্সার রোগীর। যে সুপারস্টার দেবের প্রেমে পাগল। হ্যাঁ! আর অঞ্জন দত্ত এবং মমতাশঙ্করের সম্পর্কটা পরিণত অনুভূতির প্রকাশ। এই সব সম্পর্কের মধ্যেকার বাঁধনটাই এই ছবির ট্যুইস্ট। আর পরিচালকের মাস্টারমাইন্ড। প্রত্যেকটা গল্প আলাদা হয়েও একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে।
এতো গেল ছবির চিত্রনাট্য। এবার আশা যাক তার বিশ্লেষণে। ভাল অভিনয় দেখতে ছবিটা দেখা উচিত। অঞ্জন দত্তের ছাপোষা মানুষ হিসাবে পর্দায় আত্মপ্রকাশ মেনে নিতে বাধ্য করাবে তারঁ মধ্যে পরিচালক সত্ত্বার থেকে বেশি শক্তিশালী ওঁর অভিনয় প্রতিভা। ছবিতে পাওলির খুব একটা কিছু করার না থাকলেও পার্ণো মিত্রর অভিনয়ের জায়গা ছিল, ঋত্বিকের পাশে আরেকটু টাইট অভিনয় দরকার ছিল। নবাগতা চিত্রাঙ্গদা ভাল।
পাশাপাশি চারটে গল্পের মধ্যে তাল রাখতে সব থেকে বেশি জরুরি এডিট। এই ছবিতে সেই কাজে গলদ রাখেননি এডিটর। এক গল্প থেকে অন্য গল্পে যাওয়ার জাম্পকাট চোখে লাগেনি। বরং কখনও কখনও চিত্রনাট্যকে টানটান রেখেছে। ছবিতে গল্পগুলো বিভিন্ন সময় কালের আর যেহেতু প্রত্যেকটা সময়ের গল্প একে অপরকে নিয়ে, সময়টাকে এস্টাবলিশ করাটা প্রয়োজন ছিল। সেই জায়গাগুলোয় ফ্রেমের গ্রাফিক্স চোখের বালির মতো। বোঝা যাচ্ছিল ছবির বাজেট কম। তবে প্রতীম বিষয়টা যেভাবে সামলেছেন তাতে দৃশ্যগুলো দেখে নেওয়া গেছে। যোগ্য সংগত রেখেছেন নীল দত্ত। বিজিএম চিত্রনাট্যের টেনশনটা দর্শককে দিতে পেরেছে। এই প্রতিটা আলাদা আলাদা মনের কাহিনি তাদের মতো করে পরিণতি পেল কিনা সেটা জানার অপেক্ষায় আপনার অ্যাড্রিনালিনের ক্ষরণ ধরে রাখতে সক্ষম পরিচালক। আপনি একটু ইমোশনাল হলে মন ভাঙার দৃশ্যে খারাপ লাগতে পারে। মন থেকে নি:শব্দে বেরিয়ে আসতে পারে 'আহারে'।