ছবি: হ্যাপি পিল
পরিচালনা: মৈনাক ভৌমিক
অভিনয়ে: ঋত্বিক চক্রবর্তী, সোহিনী সরকার, পার্নো মিত্র, মীর, চন্দন সেন, ডলি বসু
রেটিং: ৩/৫
Happy Pill Movie Review: মন বড় অবুঝ। শুধু অবুঝই নয় অদ্ভুতও। ভাল-খারাপের মাঝে সারাক্ষণের দ্বন্দ, তাই মন ভাল রাখার ফর্মুলাকে চিত্রায়িত করেছেন পরিচালক মৈনাক ভৌমিক। সেই পদ্ধতি বাতলে দিচ্ছেন তাঁর নতুন ছবি ‘হ্যাপি পিলে’র মাধ্যমে। কিন্তু মৈনাক এই ফর্মুলার জন্ম দেননি, ‘প্লাসিবো’ চিকিৎসা পদ্ধতির বাঙালীকরণ করেছেন মাত্র। এবং ভালভাবেই করেছেন।
সিদ্ধার্থ ডাক্তার হতে গিয়ে হতে পারলেন না, বাবার ক্যানসারের চিকিৎসার টাকা জোগাড় করতে গিয়ে। অগত্যা বাবার মৃত্যুর পর রোজগারের একমাত্র পন্থা মিষ্টির দোকানটা। সেটার অবস্থাও নড়বড়ে। মা ডিপ্রেশনের রোগী, আর একমাত্র বোন সারাক্ষণ ফর্সা হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। এদিকে বাবার চিকিৎসার খরচের বোঝা বইতে গিয়ে বাড়ি-দোকান ব্যাঙ্কের কাছে জমা। ব্যাঙ্ক বলে দিয়েছে, যে কোনও দিন নিয়ে নেবে। এই অবস্থায় মাকে সুস্থ করে তুলতে সে আবিষ্কার করে মন ভাল রাখার ওষুধ হ্যাপি পিল। আর সিদ্ধার্থর বন্ধু পচাদা সেই পিল বিক্রির পরামর্শ দেয়। কিন্তু রেজিস্টার্ড নম্বর, মেডিক্যালের অনুমোদন ছাড়া দেশে এই সব বিক্রি তো দণ্ডনীয় অপরাধ। তাই শুরু হয় ডোনেশন নিয়ে ওষুধ দেওয়ার কাজ। ব্যস, রাতারাতি হিট এই হ্যাপি পিল। এদিকে শহরে এই পিলের দৌরাত্ম্য বাড়ায় তা নজরে আসে সাংবাদিক ইন্দ্রাণীর। একটা স্টোরি, ব্যস, তারকা হয়ে যায় হ্যাপি পিলওয়ালা। তারপর কী হয় সেটাই 'হ্যাপি পিলের' গল্প।
আরও পড়ুন, Movie review: ‘মাটি’-র টানে চিত্রনাট্যের বুনন আলগা
পরিচালক মানুষের বিশ্বাসে নাড়া দিয়েছেন, তাই প্রথমেই উল্লেখ করেছিলাম প্লাসিবোর কথা। এটা এমন এক চিকিৎসা পদ্ধতি, যা মানুষের বিশ্বাস করার প্রবণতাকে কাজে লাগায়। অষ্টাদশ শতকে ইউরোপে চালু হওয়া এই পদ্ধতির নৈতিকতা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তবে ছবির চিত্রনাট্যের বাঁধনে তার অবকাশ নেই। ক্যামেরার কারসাজি এবং ঋক বসুর এডিটের করিশ্মায় 'হ্যাপি পিল' মন ভাল করার ছবি। শেষ পর্যন্ত দর্শকের উত্তেজনা ধরে রাখতে সফল মৈনাক ভৌমিক এন্ড বয়েজ।
ছবির মধ্যে নোটবন্দীর মতো সমসাময়িক ইস্যুর ব্যবহার দর্শককে যুক্তি সাজাতে সাহায্য করেছে। ওদিকে ঋত্বিক এবং মীরের অভিনয় নিয়ে কখনওই কিছু বলার থাকে না। কিন্তু পার্নো আশ্চর্য রকমের ভাল। সাংবাদিকের ভূমিকায় সোহিনী সরকারের অভিনয় জোর হাততালি কুড়োবে। সবাইকে ছাপিয়ে ছোট চরিত্রে নিজের ছাপ রেখেছেন চন্দন সেন। কিন্তু চোখে লেগেছে পার্শ্বচরিত্রদের অভিনয়। আর্ট ডেকরও যথাযথ। স্যাভির সঙ্গীত পরিচালনায় অনুপম রায়ের গানও অনবদ্য। হাস্যরস মাপা। মনোরঞ্জনের সমস্ত উপাদান এই ছবির মধ্যে আছে। কমেডি এবং স্যাটায়ারের সংমিশ্রণে আজকের সমাজে মানুষের টিকে থাকার লড়াইয়ে শক্তির রসদ 'হ্যাপি পিল'।