ছবি: মাটি
পরিচালক: লীনা গঙ্গোপাধ্যায় ও শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায়
অভিনয়: পাওলি দাম, আদিল হুসেন, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, চন্দন সেন, অপরাজিতা আঢ্য, মনামি ঘোষ।
রেটিং: ২.৫/৫
শিকড়ের টান ভোলা যায় না। প্রজন্মের পর প্রজন্মে প্রবাহিত হয় ভিটে মাটি ছেড়ে আসার গল্প। বলা ভাল নস্ট্যালজিয়া। তবে কল্পনার দেশ থেকে বাস্তব যে যোজন দূরে তা বোঝার প্রয়োজনই বোধ করেন না অনেক। পরিচালক লীনা গঙ্গোপাধ্যায় ও শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায় সেই বোধেরই পূর্ণমূল্যায়ন করেছেন তাঁদের চিত্রনাট্যে।
দেশভাগের গল্প। তবে ১৯৪৭-এর ইতিহাস নয়। ইতিহাসকে সঙ্গী করেই ২০১৮-তেও ভারত-বাংলাদেশ নিয়ে দুপারের মানুষের যে ভাবাবেগ, তাতেই নাড়া দেয় 'মাটি'। ওপারের এক বন্ধুর নাতনি জিনিয়া (মনামি) এপারে থাকা বন্ধুটির (চন্দন সেন) খোঁজে কলকাতায় আসে। হাতে সেই বন্ধুটির স্ত্রীর (অপরাজিতা আঢ্য) ডায়েরী। যে কিনা দেশভাগের সময় থেকে গিয়েছিল ওপার বাংলাতেই। সেই ডায়েরী ফেরৎ দিতে আসার সঙ্গে সঙ্গে নিজের বিয়ের নিমন্ত্রনও সেরে যায় সে। আর এদিকে মেঘলা (পাওলি) ইতিহাসের ছাত্রী, তার ঠাকুমা এবং ওপার বাংলায় চৌধুরী বাড়ি নিয়ে ভীষণ পজেসিভ, নস্ট্যালজিকও বটে। বন্ধুর বিয়েতে প্রথমবার বাংলাদেশ পাড়ি দেয়। বিমানবন্দরে নিতে আসে জামিল ভাই (আদিল)। ঘটনাচক্রে তিনি মেঘলাদের বাংলাদেশের বাড়িটায় থাকেন। যে বাড়ি মেঘলার ঠাকুমাকে মেরে তাদেরই ভৃত্য জবরদখল করে বলে মেঘলা এবং তার পরিবারের ধারণা। জামিল ভাই সেই বংশেরই উত্তরসূরি। এরপর ঘটনা কোনদিকে এগোয়? মেঘলার এই দেশ সম্পর্কে জাজমেন্টাল হওয়া কোনদিকে গল্পের মোড় ঘোরায়, সেটাই 'মাটি'।
বড় পর্দায় লীনা গঙ্গোপাধ্যায় প্রথমবার। চিত্রনাট্যে জোর থাকলেও ছোটপর্দার গল্পবলার ধরণ থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি তিনি। প্রত্যেকটা দৃশ্যে মাত্রাতিরিক্ত সংলাপ কানে লেগেছে। ভয়েস ওভারে চিত্রনাট্যের অধিকাংশ বলে দেওয়া। মনে হবে তিনদিনের যাত্রায় অতিরিক্ত ঘটনার ভিড়। মেগা শিল্পীদের নিয়ে তৈরি এই ছবিতে কোথাও সেই অযাচিত রিয়্যাকশন দেওয়া থেকে আটকানো যায়নি তাদের। পাওলি বাংলাদেশে আসার পর তো আদিল ছোটখাটো ট্যুর করিয়ে ফেলেছেন তাঁকে।
এত বছর পর পাওলির ধারনা সেই চৌধুরী বাড়ি তাদের, এই বিষয়টাই তো শিশুসুলভ। সবটা আগের মতোই অক্ষত আছে বা থাকবে, এটা ভাবাও সমীচীন নয়। চিত্রনাট্য এত ইমোশনাল যে সেখানে যুক্তি ম্লান। তবে বাহবা দিতে হয় ডিটেলিং এবং সিম্বলিজমের। বাড়ির মাটিতে বড় হওয়া ক্যাকটাস গাছ উপহারস্বরূপ দেওয়াটা বাংলাদেশকে এক অন্য আঙ্গিকে দাঁড় করায়। পাওলি, আদিল এবং সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয় ও শীর্ষ রায়ের সিনেমাটোগ্রাফির জন্য দাঁড়িয়ে গেছে 'মাটি'। দেবজ্যোতি মিশ্র তাঁর গানে দেশাত্মবোধ জাগাতে ব্যর্থ। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক আপনার ইমোশনকে হাতুড়ি দিয়ে ঠুকছে মনে হতে পারে। বলা চলে, দর্শককে সবটা গুলে খাইয়ে দেওয়ার প্রবণতাতেই ফিকে হল 'মাটি'র রঙ।