Sanju movie review
শুভ্রা গুপ্তা
Sanju movie cast: রণবীর কাপুর, পরেশ রাওয়াল, ভিকি কৌশল, দিয়া মির্জা, জিম সার্ভ, মনীষা কৈরালা, অনুষ্কা শর্মা, সোনম কাপুর, বোমান ইরানি।
Sanju movie director: রাজকুমার হিরানি
Sanju movie ratings: ৩.৫/৫
সনজু, বলিউডের চিরাচরিত ব্যাড বয় সঞ্জয় দত্তের গল্প। পুরোটা না হলেও বেশ কিছুটা তো বটেই। সঞ্জয় দত্তের গল্প আমরা কোথা থেকে জানতে পারি? মূলত রোমাঞ্চকর বিশদ এই বর্ণনা পরচর্চা কিংবা নিউজ রিপোর্ট এবং আত্মজীবনী থেকেই উদঘাটিত। কিন্তু তার থেকেও বহুগুণ বেশি সারিয়েল ও উদ্ভট এই চিত্রনাট্য। এককথায় কল্পনাতীত। কখনও কখনও দেখে মনে হতে পারে, এই ঘটনা সত্যি হতে পারে না। সাইকেডেলিক জীবন কোনও মস্তিষ্কহীন ব্যক্তির তৈরি স্ক্রিপ্ট হতে পারে শুধুমাত্র। কারণ একই সময়ে ব্যাড বয় হওয়ার টোপ, গ্ল্যামারের হাতছানি, উদ্ধত, নোংরা জীবনকে কে নিয়্ন্ত্রন করতে পারে?
যে জীবন এখনও চলছে সেই জীবনীকে, জীবনীকারকে সিনেমার পর্দায় ফুটিয়ে তোলাটা দূরূহ। এই চ্যালেঞ্জটাই অপ্রতিরোধ্য।
রাজকুমার হিরানি একমাত্র যা পারেন সেটাই করেছেন। সঞ্জয় দত্তকে 'সনজু' তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। দর্শকের সামনে তুলে ধরেছেন শিশুসুলভ একটা সত্ত্বাকে, যিনি ত্রুটিহীন নন, সবসময় নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। এবং হ্যাঁ, একজন উদ্ধত মানুষকে পুনরুজ্জীবনের সুযোগ দিয়েছেন, নইলে এটা আর যাই হোক রাজকুমার হিরানির ছবি হত না।
আরও পড়ুন, অনলাইনে লিক হল ‘সনজু’, পাইরেসি রুখতে উদ্যোগী রণবীর ভক্তরা
যখন সনজু নিজে তাঁর বম্বে ব্লাস্টের সঙ্গে যোগাযোগ, অন্ধকার জগতকে চেনা নিয়ে বিন্দুমাত্র কৌশলী না হয়ে নিজের সমস্ত চারিত্রিক সত্যতা প্রকাশ করতে পিছপা হননি, তখন সেটা চিত্রায়িত করা ভুল নয়। যেকোন কেউ চোখের নিমেষে হাসতে হাসতে কাজগুলো করতে পারে না। সত্যিই তো তারকা, তবুও মানুষ সঞ্জয় ভুল করেছেন কিন্তু সেটা কোথাও লেখা ছিল না। তিনি কী করছেন সেটা হয়তো পরিস্থিতির গুরুত্ব না বুঝেই। তিনি বন্দুক রেখেছেন নিজের বাড়িতে, কিন্তু শুধুমাত্র নিজের পরিবারকে নিরাপদ রাখতে। তিনি সমাজের চোখে দুষ্কর্ম করেছেন, জেলে গিয়েছেন, জেলের বাতাসহীন শক্ত মেঝের ঘরে উপচে পড়া টয়লেটের মধ্যে থাকার নরকযন্ত্রনা ভোগ করেছেন।
ছবি দেখে কোন কোন সময় মনে হতে পারে, মুন্নাভাই কি 'সনজু'র প্রাথমিক ভার্সন? দুটো ছবির চরিত্রেরই এরকম আবেগঘন বাবা আর একটা 'যাদু কি ঝাপ্পি'। কোনটা কি গুলিয়ে যেতে পারে কিছু মুর্হুতে। একবার যদি নিজেকে বুঝিয়ে নিতে পারেন পর্দায় যে সনজুকে দেখছি সেটাই সত্যি, আর হিরানির ছবি থেকে এর বেশি কিচ্ছু পাওয়ার নেই, তাহলে ছবি আপনার ভাল লাগবে। পর্দায় সঞ্জয় দত্ত হিসাবে চোখ বুজে বিশ্বাসযোগ্য রণবীর কাপুর। শুধুমাত্র সঞ্জয়ের শরীরী ভাষাই নয়, তার আভ্যন্তরীণ সংশয়কেও ফুটিয়ে তুলেছেন অভিনেতা।
আরও পড়ুন, ‘সনজু’ মুক্তির দিন ঘুরে আসা সুনীল-সঞ্জয়ের সম্পর্কের সমীকরণে
সুনীল দত্তের ভূমিকায় পরেশ রাওয়ালের অভিনয়ও দৃষ্টান্তমূলক। রণবীরের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়েছেন তিনি, কিছু সময়ে এগিয়েও থেকেছেন। নার্গিস দত্তের চরিত্রে মনীষা কৈরালাকে দেখে মনে হলো তাঁকে আর একটু বেশি দেখা গেলে ভাল হত। সঞ্জয়ের জীবনে কুপ্রভাব যে মানুষটি, সেই ভূমিকায় জিম সার্ভ অত্যন্ত সপ্রতিভ। আর নিউইয়র্কে সনজুর গুজরাতি বন্ধু যে জীবনের পাঠ পড়িয়েছিলেন, সেই চরিত্রে ভিকি কৌশল অনবদ্য। হিরানি তাঁর পরিচালনার মধ্যগগনে, আত্মজীবনী থেকে উঠে আসা প্রত্যেকটি চরিত্রকে যেন অন্ধ অনুসরণ করেছেন।
ছবির প্রথমার্ধ বেশ স্বতন্ত্র। প্রত্যেকটি পর্বে ব্যাড বয় হিরোর সরল মানসিকতা সামনে এসেছে। মিডিয়ার দোর্দন্ডপ্রতাপ হেডলাইনের ঠেলায় যে মানুষটি কাঁদতে বাকি রেখেছিলেন। কিন্তু শুধু একটা ভুয়ো খবরে জেল হল সঞ্জয় দত্তর? যদিও অভিনেতা কারারূদ্ধ হওয়ার পর সমস্ত জল্পনা থেমে যায়, আসলে যে কোন একটা পক্ষ নিয়ে ছবিটা তৈরির পূর্ণ স্বাধীনতা পরিচালকের রয়েছে। রাজকুমার হিরানি ও অভিজাত জোশীর লেখা চিত্রনাট্যে প্রথমভাগে রণবীর কাপুর তাঁর পার্সোনালিটিকে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। সঞ্জয় দত্তের কিছু সিগনেচার মুভসকে নিজের মতো করে দৃশ্যায়িত করেছেন পর্দায়। সেই উত্তেজনা, তারকা সুলভ আচরণ বেশ আছে ছবি জুড়ে। কিন্তু ছবিটা তাঁর ব্যাড বয় ইমেজের দিকেই ঝুঁকতে থাকে। আর তাতে আমরা অভিনেতার প্রতি সমব্যথী হতে থাকি। হতে পারে সেটা ইচ্ছাকৃত, তবে এই কারণটাই পরে ধরে রাখতে পারেন না হিরানি।
শেষে বলতে হবে, 'সনজু' অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক ছবি। কোনও সময়ে এটা আপনার হাসির কারণ তো কখনও দুঃখের। হিরানি তাঁর সেরাটা দিয়েছেন।