Advertisment

মৃণাল সেন ছিলেন অ্যানার্কিস্ট: শ্যাম বেনেগাল

মৃণাল সেনের প্রয়াণের খবরে মুহ্যমান চলচ্চিত্র জগতের তাঁর গুণমুগ্ধ মানুষজন। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, মমতা শংকর, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়রা প্রায় কোনও প্রতিক্রিয়াই দিতে পারলেন না।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

এক্সপ্রেস ফাইল ছবি- পার্থ পাল

খারিজ উপন্যাসের লেখক রমাপদ চৌধুরী প্রয়াত হয়েছেন এই কদিন আগেই। এবার জীবনাবসান ঘটল সে উপন্যাসের চলচ্চিত্রকারের। দীর্ঘ জীবন, বহু কাজ ছিল মৃণাল সেনের। সে কাজের সুবাদে বিশ্ব সিনেমার দরবারে উঁচু হয়েছে ভারতের মাথা, বারবার। রোগভোগ করছিলেন বহুদিন। স্ত্রী মৃত্যুর পর ভেঙে পড়েছিলেন অনেকটাই। এই চলচ্চিত্রকারের মৃত্যুতে শোকবার্তা জানিয়েছেন তাঁর সঙ্গে যাঁরা কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন, তাঁর গুণমুগ্ধ- এমন অনেকেই।

Advertisment

চলচ্চিত্র পরিচালক তথা অভিনেতা অপর্ণা সেন এই মৃত্যুকে 'বাংলা সিনেমার শেষ মহীরূহের চলে যাওয়া' বলে মনে করছেন। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে তিনি বললেন, "মৃণালকাকাকে আমি যেরকম  প্রাণবন্ত দেখেছি, তাতে শেষ যেবার দেখতে গিয়েছিলাম, তার সঙ্গে মেলাতে পারছিলাম না। আমার মনে হচ্ছে উনি যেন মুক্তি পেলেন। আমাদের উচিত  ওঁর কাজগুলোকে সেলিব্রেট করা।"

আরও পড়ুন, মৃণাল সেনের জীবনাবসান

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার কাছ থেকেই এই দুঃসংবাদের কথা প্রথম শুনতে পান সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। এ খবর শুনে 'অতীব দুঃখের দিন', এ টুকু বলা ছাড়া আর কোনও প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারেনি বাংলা অভিনয়জগতের এই বর্ষীয়ান নক্ষত্র। একই ঘটনা ঘটে বর্ষীয়ান অভিনেত্রী সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রেও। সৌমিত্র তবু, ওই টুকু প্রতিক্রিয়া দিতে পেরেছিলেন। সে টুকুও পারেননি সাবিত্রী।

publive-image সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে মৃণাল সেন (ফাইল ছবি- পার্থ পাল)

কথা বলার অবস্থায় ছিলেন না খারিজ অভিনেত্রী মমতা শংকর। গলায় কান্না জড়িয়ে বাক রোধ করে দিচ্ছিল তাঁর।

খবর শুনে আক্ষরিক অর্থে আঁতকে উঠলেন মাধবী মুখোপাধ্যায়। কবে কখন এ ঘটনা ঘটল জানতেন না তিনিও। প্রাথমিক আঘাত সামলে নিয়ে তিনি শুধু বললেন, "মৃণাল সেন না থাকলে মাধবী মাধবী হত না। উনি ছিলেন আমার পিতার মত।"

প্রয়াত মৃণাল সেনের বাড়ির সামনে তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত হয়েছেন অনেকে। শ্রীলা মজুমদার, একদিন প্রতিদিন ছবির অন্যতম অভিনেতা তাঁদের মধ্যে অন্যতম।

"সত্যজিত রায়, ঋত্বিক ঘটক, মৃণাল সেন একটা যুগ তৈরি করেছিলেন। মৃণাল সেনের ছবির এখনও সঠিক মূল্যায়ন হয়নি। ওঁর সবচেয়ে বড় গুণ ছিল, বয়স হওয়ার পরও অনেকটা চনমনে ছিলেন। এমনিতেও খুব মজার মানুষ ছিলেন। অনর্গল কথা বলতে ভালবাসতেন। আর একদম টেনশন ফ্রি তাকতেন। ওঁর দীর্ঘ জীবন লাভের চাবিকাঠি সম্ভবত সেটাই।" বলছিলেন বাংলার আর এক দিকপাল চলচ্চিত্র পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত।

"সিনেমা স্বপ্ন দেখতেন, সিনেমায় শ্বাসপ্রশ্বাস নিতেন, সিনেমায় বাঁচতেন মৃণাল সেন।" বললেন ভারতীয় চলচ্চিত্রজগতের আরেক পথিকৃত আদুর গোপালকৃষ্ণণ। "তাঁর মৃত্যুতে শেষ হয়ে গেল ভারতীয় সিনেমার রায়-ঘটক-সেন রাজ। মৃণাল সেন কোনওদিন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে ভয় পাননি। এ জন্য তাঁকে অনেক লড়াই করতে হয়েছে, কিন্তু লড়াই ছেড়ে যাননি তিনি। আমি নিজের ছবি মৃণাল সেনকে দেখাতে উতসুক থাকতাম, এবং তিনিও মতামত দেওয়ার ব্যাপারে কখনও কার্পণ্য করেননি।"

মৃণাল সেনের চরিত্রের দ্বান্দ্বিকতার কথা বললেন শাবানা আজমি। খণ্ডহর, জেনেসিস, একদিন অচানকের মত ছবিতে কাজ করেছেন তিনি। শাবানার কথায়, "সারা দুনিয়া ওঁকে জানে একজন আইকনোক্ল্যাস্ট হিসেবে, একজন দুর্ধর্ষ আত্মবিশ্বাসী মানুষ হিসেবে। কিন্তু খণ্ডহরের সময়ে আমি দেখেছি ওঁর কী পরিমাণ আবেগ রয়েছে, যে মুখটা উনি লুকিয়ে রাখতেন। আমার যে চরিত্রটা ছিল, যামিনী, সেটাতেও ওঁর ছায়া রয়েছে। এই দ্বান্দ্বিকতার মধ্যেউ চলচ্চিত্র পরিচালক হিসাবে মৃণাল সেনের ক্ষমতা লুকিয়ে রয়েছে।"

"সত্যজিত রায় যদি হন ভারতীয় ছবির মানবিক মুখ, তবে মৃণাল সেন হলেন অ্যানার্কিস্ট। অবশ্যই সু অর্থে।" মত শ্যাম বেনেগালের। ভারতীয় সিনেমায় এমন আর কোনও পরিচালক আসেননি বলেই মনে করেন বেনেগাল।

Mrinal Sen
Advertisment