ছবি: মুখার্জী দা'র বউ
পরিচালক: পৃথা চক্রবর্তী
অভিনয়: কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিশ্বনাথ বসু, অনসূয়া মজুমদার, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, অপরাজিতা আঢ্য, বাদশা মৈত্র
রেটিং: ২.৫/৫
এ ছবি আমার আপনার চেনা পৃথিবী নিয়ে। শুধু জানা নেই সমস্যাগুলো থেকে উত্তরণের পথ। নারী দিবসে মেয়েদের লড়াই, সংগ্রাম নিয়ে কত্ত কথা বলা যায়, 'মুখার্জী দা'র বউ' সেক্ষেত্রে অনেকটা সাদামাটা একটা গল্প। চার দেওয়ালের মধ্যেকার যুদ্ধগুলো করতে করতে বাইরের প্রতিবাদটা করা হয়ে ওঠে না। হাঁপিয়ে ওঠে নারীর মনন, কোথাও সে ধরেই নেয় এর বুঝি অন্ত নেই। আর এখান থেকেই পর্দায় অবতরণ পৃথা চক্রবর্তীর চিত্রনাট্যের। নারীমুক্তি নিয়ে বড় বড় তত্ত্ব সামনে না এলেও 'মুখার্জী দা'র বউ' প্রতিনিয়ত সন্ধ্যেবেলার ধারাবাহিকের বাইরে বেরিয়ে আসার প্রয়াস নিঃসন্দেহে।
মধ্যবিত্ত বাড়ির বউ অনসূয়া ও কনিনীকা। ঘটনাচক্রে তাঁদের সম্পর্কটা শাশুড়ি-বৌমার। যে সম্পর্কের সমীকরণ প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে সরলরেখায় চলার নয়, সেখানে তাঁরা আবার বাঙাল ও ঘটি। ফলে, এক বাড়িতে দুটো টিভি থেকে নুন, চিনি, দুধ-চা, সবেতেই উত্তর ও দক্ষিণ মেরুতে তাঁদের অবস্থান। কনিনীকা বাইরে বেরোতে চেয়েছিলেন, স্বনির্ভর হতে চেয়েছিলেন, শাশুড়িও তাই চেয়েছিলেন, কিন্তু মেয়েদের বাড়ির বাইরে পা না রাখাই নিয়তি ভেবে সে বেড়াজাল আর ভাঙেন নি। সুতরাং, অজান্তেই নিজের সব না পাওয়ার দায়ভার চাপিয়ে দেন বৌমার উপর।
আরও পড়ুন, মুখার্জী দা’র বউয়ের থেকে কনীনিকার একটিই প্রত্যাশা
সংসারের অশান্তি বাড়তে থাকে। কিন্তু সমস্যার সমাধান কি সহজ? উত্তর হ্যাঁ হলেও তার রাস্তা কোথায়? সাদামাটা একটা সমাধানের পথ বাতলেছেন পরিচালিকা। আসলে অধিকারের হিসেব নিকেশটা যদি নারীদের হয়, তাহলে সেটা বুঝে নিতে হবে তাঁদেরই। মেয়েরা মেয়েদের পাশে দাঁড়ালেই অঙ্কটা অনেক সহজ হয়ে যায়, বন্ধুত্বের বুনট সবটা ঠিক করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।
পরিচালিকা তাঁর প্রথম ছবি হিসাবে যথেষ্ট পারদর্শীতা দেখালেও, চিত্রনাট্যের যথেষ্ট খামতি চোখে পড়েছে। সোজা বাংলায় বলতে গেলে, বাংলা ধারাবাহিকের যে ফাঁদ এড়াতে চেয়েছেন পৃথা, সেই প্রচেষ্টায় তিনি সম্পূর্ণ সফল হতে পারেন নি। শেষমেশ সাধারণভাবে বলা একটি সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের গল্প হয়েই রয়ে গেল 'মুখার্জী দা'র বউ'। সম্পর্কের চিরাচরিত জটিলতা চিত্রনাট্যকে যে গভীরতা দিতে পারত, তার লেশমাত্র পাওয়া গেল না কোথাও।
কনীনিকা ও অনসূয়া মজুমদার অত্যন্ত সাবলীল, ভাল লাগে বিশ্বনাথ, বাদশা, অপরাজিতাকেও। ছবির গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তও মানানসই। বলতেই হয় ছবির সম্পাদনা বেশ টাইট, কিন্তু দর্শকের ধৈর্য হারিয়ে ফেলার সম্ভাবনা তবুও থেকেই যাচ্ছে। আর খাবারের প্ল্যাটারে টপিংসের কাজ করল গান। প্রয়োজনীয় নয়, তবে দেখতে ভালো। নারী স্বাধীনতার চলার পথ এ ছবি কতটা মসৃণ করতে পারবে জানা নেই, দৈনন্দিন সমস্যাগুলোকে অন্যভাবে দেখতে শেখাবে। কিন্তু কখনও মনে প্রশ্ন উঠতেই পারে, এতটা সহজ কি? হয় তো না!