প্রবীণ অভিনেত্রী মুমতাজ, যিনি একসময় বলিউডের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক প্রাপ্ত এবং জনপ্রিয় নায়িকাদের একজন ছিলেন, অভিনয় জগৎ ছেড়ে দিয়েছিলেন ভালোবাসার টানে। তিনি বিয়ে করেছিলেন উগান্ডার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ময়ূর মাধবানিকে, এবং এরপর পরিবারকে প্রাধান্য দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
এক পুরনো সাক্ষাৎকারে ই টাইমস-কে মুমতাজ বলেছিলেন, "আমি বিশ্বাস করি, প্রত্যেক মহিলার জীবনে একটা সময় আসে, যখন তাকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিতে হয়। আমি সেই সুযোগটা হাতছাড়া করিনি। আমার সময়কার অনেক সহ-অভিনেত্রী আজও অবিবাহিত। আমি ভাগ্যবান ছিলাম যে এমন একজন মানুষকে পেয়েছিলাম, যিনি আমাকে ভালোবাসতেন। তাই আমি সবকিছু ছেড়ে দিয়েছিলাম। আমি সিনেমা দেখে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম।"
স্বপ্নের জগৎ থেকে স্বামীর সংসারে
মুমতাজ যখন বলিউডের শীর্ষে, ঠিক তখনই মাধবানি পরিবার তাঁকে জানিয়ে দেয়- বিয়ের পর আর অভিনয় নয়। "আমার শ্বশুরবাড়ির পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছিল, আমি আর কাজ করতে পারব না। আমি সিদ্ধান্ত নিই- সবকিছু ছেড়ে দিয়ে সংসারেই মন দেব। তখন আমি প্রতি ছবির জন্য সাড়ে সাত লাখ রুপি পারিশ্রমিক পেতাম, যা সেই সময়ে বিরল ছিল।" শুধু তাই নয়, তিনি মাত্র ২৮ বছর বয়সেই অভিনয় থেকে বিদায় নেন। তাঁর পরিবারের বক্তব্য ছিল, নায়িকাদের একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্তই চাহিদা থাকে। পরবর্তীতে কেবল মাসি-মায়ের ভূমিকায় তাঁদের দেখা যায়।
তবে এই সিদ্ধান্তের জন্য পরিবারকে দোষ না দিয়ে বরং কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। বলেন, "আমার পরিবার কখনও লোভী ছিল না। তারা কখনোই আমাকে শুধু টাকার জন্য কাজ চালিয়ে যেতে বলেনি। আমি আজও তাদের সম্মান করি এই জন্য যে, তারা আমার জীবনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করেছিল।"
শ্বশুরবাড়ির নানা ক্ষেত্রে খাপ খাওয়াতে হয়েছিল
গুজরাটি পরিবারে বিয়ে করার পর নিজের জীবনধারায় বড় পরিবর্তন আনতে হয়েছিল মুমতাজকে। তিনি বলেন, "আমি ধীরে ধীরে ডাল-ধোকলি, উন্ধিয়ু, খান্ডভি রাঁধতে শিখে নিই। এখন আমি মোটামুটি ভালই রাঁধতে পারি।"
মাতৃত্বের জন্য কঠিন লড়াই
মুমতাজের মাতৃত্বও ছিল চ্যালেঞ্জে ভরা। কন্যা নাতাশা মাধবানি-র জন্মের আগে একাধিক গর্ভপাতের শিকার হয়েছিলেন তিনি। তাঁর কথায়, "গর্ভাবস্থার ছয় মাস আমি বিছানায় পড়ে ছিলাম, শুধুই সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে থেকেছি। তাই আমার সন্তানরা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ।"
স্বামীর বিশ্বাসভঙ্গ এবং ক্ষমার গল্প
বিবাহিত জীবনে এক সময় আসে যখন স্বামী ময়ূর মাধবানির সঙ্গে সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়। এক পর্যায়ে তাঁর স্বামীর একজন মহিলার সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের বিষয়টি সামনে আসে। তবে দাম্পত্য ভাঙেননি মুমতাজ। "আমার স্বামী একজন সুদর্শন পুরুষ। তিনি একটা ভুল করেছিলেন, কিন্তু আমি জানতাম, সেটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। আমি সম্পর্ক শেষ করার সিদ্ধান্ত নিইনি। বরং তার পাশে দাঁড়ানোকেই শ্রেয় মনে করেছি।"