Movie : নগরকীর্তন
Director : কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়
Cast : ঋদ্ধি সেন, ঋত্বিক চক্রবর্তী, শঙ্করী, বিদীপ্তা চক্রবর্তী সূজন মুখোপাধ্যায়
Rating : ৪/৫
ব্যক্তিগত সবটা যদি পণ্য হয়ে যায়, সমাজ ও তার অশিক্ষা সেটা মেনে না নিতে পারার দায়ে, যদি একটুকু 'আমি' থাকতে অনেকটা পথ পেরোতে হয়, যদি উন্মুক্ত প্রঃশ্বাস নেওয়ার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে শরীর… বাঁচাটা সত্যিই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তবুও যে এক লহমায় শরীরের ভুলটা শুধরে নেওয়া যায় না। হলে তো 'নগরকীর্তন' অপ্রয়োজনীয় হত। মধু ও পুটির প্রেমের গল্পকে 'কনভেনশনাল' বলা হত।
মানবী হয়ে ওঠার সাধনায় কত পুটি রোজ স্বপ্ন দেখে। কত মধুদা সেই স্বপ্ন কাঁধে করে বয়ে নিয়ে যায়। এরপরই আর পাঁচটা প্রেমের কাহিনি তৈরি হয়। দুটো মনের একান্ত ব্যক্তিগত। সেই গল্পই অত্যন্ত নিখুঁতভাবে বুনেছেন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়। বাড়ির সেকেলে ধারণা, সমাজের টিটকিরি আর এই দুইয়ের মিশ্রণে প্রকট হয়ে ওঠা ভয় নিয়ে নিত্য বাস পরিমলের অর্থাৎ পরির (ঋদ্ধি)। সেখান থেকে পুটির যাত্রা অনেকখানি। পুরুষ শরীরে নারী মন নিয়ে চলার থেকে নারী শরীরে রূপান্তরিত হওয়া ঢের ভালো। অযাচিত পুরুষাঙ্গ থাকলে ঠকতে হয়, লজ্জায় পড়তে হয়। সুভাষদা (ইন্দ্রাশিস) এটা দিব্যি বুঝিয়ে দিয়েছে।
আরও পড়ুন, ঋদ্ধি যেটা করেছে আমি পারতাম না: কৌশিক সেন
মধু (ঋত্বিক) বাঁশি বাজায়, আর পেট চালাতে ডেলিভারি বয়ের কাজ করে। প্রেমের অর্থ তার কাছে নারী-পুরুষের দেহপটের দোলাচল কিনা, সেটা বুঝতে হলে ছবিটা দেখতে হবে। পুটিকে প্রেমে, যত্নে, আশঙ্কায় আগলে রাখা সহজ নয়। ঋত্বিক সত্যিই বারেবারে প্রমাণ রাখেন তিনি জাত অভিনেতা। মধুদার সঙ্গে ঘর বাঁধবে পুটি। নারীমনস্ক পুরুষ পুটির প্রকৃত নারী হয়ে ওঠার আশায় কৃষ্ণনগর উইমেন্স কলেজের অধ্যক্ষার সঙ্গে দেখা করতে যায় দুজনে। উন্মোচিত হতে থাকে বাস্তব ও ইতিহাসের পাতা। যদিও জায়গাটা ছোট করা যেত, শ্রীচৈতন্যের কৃষ্ণপ্রেমের রেফারেন্সটা এত সরাসরি না হলেও ক্ষতি ছিল না।
লড়াইটা বন্ধুর বুঝতে পারে পুটি। মধুদার বাড়িতে গিয়ে নারী শরীর চাক্ষুষ করতে পেরে (বিদীপ্তার কাপড় বদলের দৃশ্য) পুটির চোখে সে কী বিস্ময়। ঋদ্ধির অভিনয় খুব ভাল বললেও কম বলা হয়। নারী মনের পুরুষ যে অস্বাভাবিক নয়, পরতে পরতে বুঝিয়েছেন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন, নগরকীর্তন থেকে প্রেম, কী বললেন ঋদ্ধি?
প্রবুদ্ধবাবুর সঙ্গীত পরিচালনায় কীর্তন অঙ্গে মানব-মানবীর ভাবসুধা বড্ড ভাল আঁকল 'নগরকীর্তন'। ঋদ্ধিকে বড় চুল, শাড়ি, টিপে ভীষণ সুন্দর দেখিয়েছে। শঙ্করী এবং ছবির বৃহন্নলারা অনবদ্য অভিনয় করেছেন। ছবিতে পুটিকে একদল হিজড়ে রাস্তায় উলঙ্গ করে মারে। পেট চালাতে হাততালি দিয়ে টাকা তুলছিল সে। কিন্তু সে তো বৃহন্নলা নয়, সে শারীরিকভাবে পুরুষ। মন কি আর বোঝে আনজনে? নীল রঙ ঢেলে অপমান করা হয় পুটিকে। রঙ যে অনেক না বলা কথা বলে দেয়। বুক নিংড়ে ওঠা হাহাকারকে কৃষ্ণরূপে প্রকাশ্যে আনেন পরিচালক। শীর্ষ রায় ক্যামেরার পেছনে থাকলে ছবি আলাদা মাত্রা পায়। কৃষ্ণপ্রেমে শ্রীচৈতন্যও ঘরছাড়া হয়েছিলেন, প্রেমের আগুনে পুড়লে তাকে ঘরে বাঁধা যায়! নগ্ন সমাজ যত বাধাই আনুক, মধু-পুটির ভালবাসা তো অন্য সুর তুলেছে। তারপর? সেটা বরং হলে গিয়ে জানুন। এ ছবির ভাবরস নিজেকে চেখে দেখতে হবে, রিভিউ পড়ে স্বাদ মিটবে না।