সাদাত হাসান মান্টো, এই নামটা আরও বেশি করে ভারতীয়দের সামনে এসেছে নন্দিতা দাসের দৌলতে। তিনি এই বিতর্কিত লেখককে নিয়ে তৈরি করেছেন ছবি 'মান্টো'। কান চলচ্চিত্র উৎসব, টরোন্টো ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ঘুরে অবশেষে ভারতে মুক্তি পাচ্ছে এই ছবি। আর প্রচারের জন্য নন্দিতা সবার আগে বেছে নিলেন তিলোত্তমাকে। কলকাতায় নিজের ছবি নিয়ে কথা বললেন পরিচালক। সাক্ষী থাকল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা।
ছবিটা কোন ক্যটাগরির উদ্দেশ্যে তৈরি?
আমি এই পার্থক্যে বিশ্বাস করি না। জানেন, সম্প্রতি বম্বেতে একটা স্ক্রিনিং করেছিলাম শুধুমাত্র ছবিটার কাস্ট আর ক্রু নিয়ে। টিমের জন্য, এবং আমার ড্রাইভারকেও দেখতে বলেছিলাম। একই কাজ 'ফিরাকের' সময়েও দিল্লিতে করেছিলাম। খালি বলেছিলাম, একটাই শর্ত, সত্যি সত্যি বলবে, কেমন লেগেছ? বিশ্বাস করবেন না, যে একটা কথা বলত না, সেই লোকটা ছবিটা দেখে এসে এত কথা বলেছে ভাবতেই পারিনি। বলেছিল, দিদি, ওই সময়েও কথা বলা কতটা মুশকিল ছিল, আজও তো তাই!
আসলে এটা আমাদের অ্যারোগেন্স যে, আমরা মনে করি দর্শক বুঝতে পারবেন না। প্রত্যেকে তাঁর মতো করে বুঝবেন। এই ছবিটা অন্তত তাই বলে।
এখানেই কী আপনার ছবির সার্থকতা, যে সব স্তরের মানুষ ছবিটা দেখে নিজের মতো করে গড়ে নিচ্ছেন?
ঠিক তাই! আসলে আমাদের না, লেভিল প্লেয়িং ফিল্ড থাকে না। আমরা ওভাবে ছবির মার্কেটই করি না। কেউ বলবে 'মান্টো' নিশ (niche) ফিল্ম, আবার অনেকের কাছে এটা ফেস্টিভ্যালের ছবি। আমাদের দর্শকের ওপর ভরসা রাখতে হবে। আমাদের বিশ্বাস করতে হবে, মৌলিকভাবে আমরা আলাদা নই। বাবার (যতীন দাস) পেন্টিং দেখে সবাই মানে জিজ্ঞেস করেন, কিন্তু তাঁদের নিজেদের মত করে মানে খুঁজতে দেওয়া প্রয়োজন।
ছবিতে আর্ট তো ভীষণ জরুরি ছিল?
নিশ্চয়ই! সে কারণেই কারও সঙ্গে দেখা করার আগে আমি লোকেশন দেখতে গিয়েছিলাম। কারণ ছবির প্রেক্ষিতে সেটাই সবচেয়ে জরুরি ছিল। আমি চেয়েছিলাম সুইচবোর্ড থেকে আসবাব, সবটা পারফেক্ট হবে। তারপরে আমাদের আর্ট ডিরেক্টর রীতা ঘোষ অসাধারণ কাজ করেছেন। তবে চাইনি ছবিতে পরিচালনা, আর্ট, মিউজিক, সিনেমাটোগ্রাফি, কিছুই গল্পকে ছাপিয়ে যাক। আবার একইসঙ্গে চেয়েছিলাম অভিনয় থেকে পরিচালনা এতটাই অথেন্টিক হোক, যা সরাসরি দর্শককে আমরা দিতে পারব। তবেই তো মনে হবে এটা সমসাময়িক একটা গল্প। এই সমস্ত কিছুর সঙ্গে আমরা তো আজও লড়াই করছি।
মান্টোর লেগাসি কী আপনার মধ্যেও থেকে গিয়েছে?
সেই আমি তো বলিউডে থেকেও নেই। হয়তো সেই জন্যই ছবিটা করার কথা ভেবেছি। আপনাকে তো রিলেট করতে হবে। আমার বাবাও সেকরম ছিলেন। মান্টোকে চিনতে সুবিধে হয়েছে বাবার জন্যই। যে মূল্যবোধগুলো নিয়ে মান্টো কথা বলেন, সেগুলোর সঙ্গে আমিও খুব নৈকট্য অনুভব করি। আমরা না, কেরিয়ার, প্রফেশন, সাকসেস এই শব্দগুলোর সঙ্গে বড় হইনি। এখন তো কমন হয়ে গেছে। এখনও এগুলো আমাকে নাড়া দেয় না। আর এখানেই 'মান্টোইয়াৎ' শব্দটা আমার কাছে স্পেশাল। আমার মধ্যে সেটা আছে, এমনকি মনে করি, প্রত্যেকের মধ্যে এটা বিভিন্নভাবে রয়েছে।
বাংলা ছবিতে নন্দিতা দাসকে দেখতে পাবেন কি দর্শক?
এই রে! এসেছিল একটা ভাল ছবির অফার। নামটা কিন্তু বলতে পারব না। আমারই বন্ধু করছে ওই চরিত্রটা। আসলে 'মান্টোতে' এতটা মজে রয়েছি, আর কিছু ভাবার সময়ই পাইনি।
আবার কোনও লেখককে নিয়ে ছবি করবেন?
পিরিয়ড ড্রামা তো এখনই আর ভাবব না। সময়টাকে রিক্রিয়েট করতে ভীষণ কষ্ট করতে হয়। আর এই ছবিটা রিসার্চ করে লিখতেই অনেকটা সময় লেগেছে।
মান্টোই কেন?
ছবিটা তৈরির উদ্দেশ্য মান্টোকে লেখক হিসাবেই শুধু দেখানো নয়। মান্টো একটা ভাবনা, সেটাকে সামনে আনা। ৭০ বছর পরেও একই উথালপাথালের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি আমরা। সেই কারণেই তো মান্টো এত প্রাসঙ্গিক।
ঋত্বিক ঘটকের সঙ্গে মান্টোর মিল পান?
এটা নিয়ে না, আমিও ভেবেছি। কিছু মিল তো রয়েইছে। দুজনেই সেনসিটিভ মানুষ, উগ্রতাও একই কিছুটা, ইগো আর (একটু ভেবে) মদ খাওয়া। মান্টো না, আপনাকে নির্ভীক করে তুলবে। যাঁরা কখনও মান্টো পড়েননি, তাঁরাও নিজেদের কানেক্ট করতে পারবেন।
তবে কোন পাঁচটি কাহিনী নিয়ে তিনি মান্টোকে পর্দায় বুনেছেন তা কিন্তু রহস্যেই রাখলেন পরিচালক। শুধু বললেন, ২১ তারিখ হলে এসে দেখবেন।