নিপাত যাক ফ্যাসিবাদ। মসনদ দখলের লড়াইয়ে যখন অগ্নিগর্ভ বাংলা রণক্ষেত্র, তখন বহুত্ববাদ রক্ষায় বাংলার নবীন-প্রবীণ বুদ্ধিজীবীরা ভোটপুজো (West Bengal Assembly Election 2021) বোধনের দিন দুয়েক আগেই কণ্ঠ মিলিয়েছিলেন 'একুশের গণসঙ্গীতে'। উত্তপ্ত ভোট-বাংলায় সেই গান যে জাতীয়স্তরে বেজায় ঝড় তুলেছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। ব্যক্তিগত গণতান্ত্রিক অধিকার খর্বের বিরুদ্ধে 'আমরা এই দেশেতেই থাকব' গানটি যেন স্বৈরাচারী শাসনতন্ত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার সমান। নেপথ্যের রূপকার অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্য (Anirban Bhattacharya)। গানটি তাঁরই লেখা। যাতে কিনা কখনও সুর মিলিয়েছেন ঋদ্ধি সেন (Riddhi Sen), সুরঙ্গনা, ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়ের মতো তরুণ তুর্কীরা আবার কখনও বা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় (Parambrata Chatterjee), রূপঙ্কর বাগচী, অনুপম রায় (Anupam Roy), অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়, রেশমি সেন, দেবলীনা, সব্যসাচী চক্রবর্তীরা (Sabyasachi Chakraborty)। ফ্যাসিস্ট-বিরোধী সেই গানই এবার উত্তরবঙ্গের নেপালিদের মুখে।
নিজের মাতৃভাষাতেই তাঁরা গাইছেন- “তুমি পুরাণকে বলো ইতিহাস, ইতিহাসকে বলো পুরানো… তোমার ভক্তিতে দাগ রক্তের তুমি কাউকেই ভালবাসো না… তুমি বেসাতি করতে এসেছ, দেশপ্রেমের কিছুই জানো না…” গানের প্রতিটা শব্দ, প্রতিটা লাইনেই ইঙ্গিত, যে এই গানের নিশানা দিল্লির রাজপাটের দিকে। আরেকটু স্পষ্ট ভাষায় বলতে গেলে মোদী-সরকারের বিরুদ্ধে। সেই গানকেই এখন স্বৈরাচারী শাসনতন্ত্রের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে হাতিয়ার করে নিয়েছেন ভিনভাষীরা। নেপালি ভাষার সেই গানের ভিডিও শেয়ার করেছেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় এবং অনির্বাণ ভট্টাচার্য।
প্রসঙ্গত, উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে বর্তমানে গেরুয়া ঝড়। আর সেই প্রেক্ষিতে সেখানকার নেপালি তরুণ তুর্কীদের মুখে এই প্রতিবাদী সুর বেজায় প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। এবারের ভোটবাক্সে গেরুয়া ঝড় বইলেও ভবিষ্যতের বদল যে তাঁরা চাইছেন, এই প্রতিবাদী সুরই তার প্রমাণ।
উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্সের এক প্রত্যন্ত পাহাড়ি গ্রাম লালিগোরাসের নেপালি তরুণ তুর্কীরা কণ্ঠ ছেড়েছেন- "তোমার কোনও, কোনও, কোনও কথা শুনব না.. আমি এই দেশেতেই থাকব।" দৃশ্যায়নে পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষদের অভাব-অভিযোগও ফুটে উঠল।
প্রসঙ্গত, এই গানের লক্ষ্য ছিল একটাই- বহুত্ববাদ রক্ষা। এই ভূ-ভারত বৈচিত্র ও ভালবাসার দেশ। সর্ব-ধর্ম সমন্বয়-ই যার নীতি। তবে মিথ্যাচার, ঘৃণার স্ফুলিঙ্গ যখন সেই বহুত্ববাদকে খর্ব করে দেশের জনমতের গলা টিপে শ্বাসরোধ করে, তখন সুস্থ শাসনতন্ত্রের দাবিতে প্রতিবাদী কণ্ঠ তোলা নাগরিকদের কর্তব্যই বটে! আর এই গানের মধ্য দিয়েই সেটা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন বাংলার নবীন-প্রবীণ বুদ্ধিজীবীরা। আর তা সার্থক হয়েছে বটে! সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তোলার পর এবার ভিনভাষাতেও এই প্রতিবাদী গান গাইছে নবীন প্রজন্ম।