ঊষার সঙ্গে আমার পরিচয় ওর স্বামীর মাধ্যমে। ওর স্বামী কমলেন্দু গঙ্গোপাধ্যায় এবং আমি, আমরা একসঙ্গে ছাত্ররাজনীতি করতাম। সেই সূত্রেই আড্ডা এবং ওদের বাড়িতে যাওয়া৷ অনেকসময় রাতও কাটিয়েছি। তখন ঊষার সঙ্গে পরিচয়। ঊষার সঙ্গে কমলেন্দুর প্রেম হয়েছিল ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। কমলেন্দু তখন ইউনিয়নের সেক্রেটারি। সেই সময় ওদের চেনা ও প্রেম। নাট্যব্যক্তিত্ব ঊষা গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রয়াণে স্মৃতির পাতা উল্টোলেন রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা যোগাযোগ করায় তিনি বলে চললেন, আসলে ঊষা খুব ভাল নাচত। নান্দীকারের সঙ্গে সম্পর্কের সূত্রপাত বন্ধুত্বের জায়গা দিয়েই। বেশ কিছুদিন ওদের বাড়িতে ছিলাম আমি। সেখান থেকেই পরিচয়। সেই সময় ভোরবেলা উঠে আমি নাটকের কজ করতাম। সেটা দেখে হয়তো নাটক নিয়ে উৎসাহিত হয়েছিল। যদিও এটা নিছকই আমার মনে হওয়া। আমি কোনওদিন ওকে জিজ্ঞাসা করিনি। তবে নাচ আর খুব বেশিদিন করেনি। চলে আসল থিয়েটার করতে।
আরও পড়ুন, বাঙালিরা যে বিশেষ ৩টি কারণে দেখবেন নেটফ্লিক্স-ছবি ‘এক্সট্র্যাকশন’
ঊষা, ওম পারেখ বলে একটি ছেলে, ঊষার দু-তিন জন ছাত্রী, উষা নিজে, কমলেন্দু এবং আমি, সকলে মিলে বসে আলোচনা করে ওদের দলটি তৈরি করি। নাম দেওয়া হয়- রঙ্গকর্মী। সেই দলটিই এখনও আছে।
রঙ্গকর্মীর প্রথম নাটকটি ছিল আমারই একটা নাটক 'যখন একা'র হিন্দি অনুবাদ 'পরিচয়'। নান্দীকার থেকেই অর্থসাহায্য, স্টেজ তৈরির সরঞ্জাম সব দিয়েছিলাম। পরিচালনা আমিই করেছিলাম।
এরপর 'পরিচয়' অনেকদিন চলার পর একদিন ঊষা বলল রুদ্রদা ''এটা তো অনেকদিন হল এবার আরেকটা গল্প ঠিক করে দিন।'' আমি বলেছিলাম, 'নো নো ঊষা, সরি। আমি সর্বক্ষণ তোমার দল দাঁড় করিয়ে দিতে পারব না। আমার নিজের দল আছে। তুমি নিজে যা পারো করো। ওর নিজেরও অভ্যেস চলে যেত নইলে।"
আরও পড়ুন, বাংলা থিয়েটারে পুরুষতন্ত্রের বিপ্রতীপে দাঁড়িয়েছিলেন ঊষাদি: দেবেশ
তারপর আসতে আসতে নিজেই চেষ্টা শুরু করল। নাম-ডাক হল। আসলে ওর পাবলিক রিলেশন খুব ভাল ছিল। দেশ বিদেশেও প্রচুর শো করেছে। খুবই উদ্যমী মহিলা ছিলেন।
বন্ধু থেকে থিয়েটার কর্মী, সম্পর্ক কী আগের মতোই আছে? একটু থামলেন রুদ্রপ্রসাদ। বললেন, সেদিন একটা অনুষ্ঠানে দেখা হয়েছিল। স্বাতী আর ও পাশাপাশি বসে গল্প করছিল। কাজের ব্যাপারে আর যোগাযোগ ছিল না৷ কারণ ওই যে সেই বলেছিলাম।
তবে গোধূলিমাখা আলোয় আজ অস্তমিত ঊষা। কিন্তু তাঁর কাজ, রঙ্গকর্মী, উদ্যমী ভাবনা... সবেরই শেষ হল! 'নো নো ঊষা, সরি', আপনাকে আজ স্মৃতি থেকে যেতে দেওয়া যাবে না৷
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন