অস্কারের মঞ্চে ভারতীয় সিনেমা-তথ্যচিত্রের জয়জয়কার। ১৪ বছরের খরা কাটিয়ে শেষমেশ ভারতের প্রযোজনা সংস্থার হাত ধরে দেশে জোড়া অস্কার। ডাবল ধামাকায় খুশির ফোয়ারা। সেরা অরিজিনাল সং বিভাগে RRR-এর 'নাটু নাটু' এবং সেরা তথ্যচিত্রের পুরস্কার উঠল 'দ্য এলিফেন্ট হুইস্পারর্স'-এর হাতে। আর সেই প্রেক্ষিতেই দ্রাবিড়ভূমের মতো উচ্ছ্বাস বাংলাতেও। কারণ ৯৫তম অস্কারের মঞ্চে সাফল্যের গল্প বুনেছেন এক বঙ্গকন্যা। সঞ্চারী দাস মল্লিক। যিনি 'দ্য এলিফেন্ট হুইস্পারর্স'-এর সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন।
তামিলনাড়ুর মুদুমালাই জাতীয় অভয়ারণ্যের এক অনাথ হস্তিশাবকের সঙ্গে এক দরিদ্র দম্পতির সম্পর্ক নিয়েই এই তথ্যচিত্র। পাঁচ বছর ধরে পাঁচ জন ক্যামেরাম্যানকে নিয়ে শুটিং হয়েছে। মোট ৫০০ ঘণ্টার ফুটেজ ঘেঁটে একটা স্বল্পদৈর্ঘ্যের তথ্যচিত্রে দাঁড় করিয়েছেন বঙ্গকন্যা সঞ্চারী এবং তাঁর টিম। সোমবার লস অ্যাঞ্জেলসের বিশ্ববন্দিত মঞ্চে উঠে নিজে হাতে অস্কার তুলে নিতে পারেননি ঠিকই। প্রযোজক গুনীত মোঙ্গা এবং পরিচালক কার্তিকী গ্যাঞ্জালভেস-ই 'দ্য এলিফেন্ট হুইস্পারর্স' (The Elephant Whisper's)-এর টিমের হয়ে অস্কার গ্রহণ করেন। তবে অস্কার ছুঁয়ে দেখার স্বপ্নপূরণ হয়েছে কলকাতার মেয়ে সঞ্চারী দাস মল্লিকের।
'দ্য এলিফেন্ট হুইস্পারর্স'-এর অস্কারজয় নিয়ে সঞ্চারী বললেন, "পুরস্কার ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে দর্শকাসনে বসে আমরা লাফিয়ে উঠেছিলাম। চারদিকে কে তাকাল, কে দেখল.. এসব পাত্তা না দিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছিলাম। তবে হ্যাঁ গোটা জার্নিটা মনে থাকবে আমার।"
<আরও পড়ুন: ‘এখনকার বলিউড মিউজিক অখাদ্য! পাতে দেওয়া যায় না..’ বিস্ফোরক কুমার শানু>
এদিকে মেয়ের সাফল্যে গল্ফগ্রীনের বাড়িতে বসে উচ্ছ্বসিত এবং গর্বিত সঞ্চারীর মা শুভা ও বাবা সাধন দাস মল্লিক। ২০২১ সালের ফ্রেব্রুয়ারি মাসে যখন 'দ্য এলিফেন্ট হুইস্পারর্স'-এর সম্পাদনা শুরু করেন সঞ্চারী, তখন মা শুভা তাঁর সঙ্গেই ছিলেন। কাজ কেমন চলছে, তা নিয়ে কথাও হত মা-মেয়ের। তবে অস্কার আসবে, এটা যেন আশাতীত ছিল। তাই সোমবার দিল্লি থেকে শুভাদেবীর এক ছাত্র ফোন করে খবরটা জানালেও প্রথমটায় নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারেননি তিনি। অনলাইনে অস্কার মঞ্চের সেই ঘোষণা ও মেয়ের হাতে পুরস্কার দেখে, তারপর বিশ্বাস হয়।
প্রসঙ্গত, ইতিমধ্যেই সঞ্চারীর হাতে অস্কার নিয়ে এক মতান্তরের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই বলছেন, 'সত্যজিৎ রায়ের পর প্রথম কোনও বাঙালির অস্কার জয় হিসেবে এটা মাইলস্টোন।' তবে সেই তত্ত্বকে একটু শুধরে দিলেন শুভা দাস মল্লিক। বললেন, "এই কথাটা একটু বাড়াবাড়ি শুনতে লাগছে যে, সত্যজিত রায়ের পর দ্বিতীয় বাঙালি হিসেবে সঞ্চারী অস্কার জয় করেছে। মঞ্চে গিয়ে পুরস্কারটা নিয়েছেন পরিচালক-প্রযোজক। তবে হ্যাঁ, এই তথ্যচিত্র সম্পাদনার জন্য মাসখানেক ধরে খাটতে হয়েছে মেয়েকে। তথ্যচিত্র নির্মাতা হিসেবে বলব, আমাদের কলকাতাতেও কিন্তু খুব ভাল ভাল সম্পাদক রয়েছেন। সঞ্চারী খেটেছে এবং ওঁর ক্ষেত্রে ভাগ্য সহায় হয়েছে।" মেয়ের সাফল্যে গর্বিত বাবা সাধন দাস মল্লিকও। বললেন, "প্রচুর ফোন আসছে। সকলে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন।"