'খবর লহেরিয়া' উত্তরপ্রদেশের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে এক আঞ্চলিক মিডিয়া হাউজ চালান এক দলিত মহিলা সাংবাদিক। তবে এই মিডিয়া হাউজ তৈরির নেপথ্যের কাহিনিটা অত সুখরকর ছিল না। মীরাদেবীকে বহু কাঠ-খড় পুড়িয়ে খবর লেহেরিয়ার প্রতিটা তরঙ্গ পৌঁছে দিতে হয়েছে জনসাধারণের কাছে। আর এই লড়াকু সাংবাদিককে নিয়েই সুস্মিত ঘোষ তৈরি করে ফেলেছেন এক তথ্যচিত্র 'রাইটিং উইথ ফায়ার'। সুস্মিতের সঙ্গী তাঁর স্ত্রী রিন্টু। স্বামী-স্ত্রীর তৈরি এই তথ্যচিত্র দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হওয়ার পর এবার পৌঁছে গিয়েছে অস্কারের মঞ্চে।
Advertisment
মঙ্গলবার সন্ধেবেলা এই খবর পেয়ে বাঙালি ছেলে সুস্মিতের বাড়িতে আনন্দের জোয়ার। টেলিভিশনের পর্দায় মুখ রেখে একমনে অপেক্ষারত স্ত্রী অস্কার মনোনয়নে 'রাইটিং উইথ ফায়ার'-এর নাম শুনেই আনন্দে লাফিয়ে উঠেছেন। তিনিও এই তথ্যচিত্রে সহ-পরিচালক। তাঁদের ডকু-ফিচার জায়গা করে নিয়েছে শেষ পাঁচে। সুস্মিত অবশ্য বাঙালি হলেও থাকেন দিল্লিতে। তাঁর বেড়ে ওঠাও কলকাতায় নয়। তবে এই শহরে তাঁর বেশ কয়েকজন আত্মীয়ের বাস। কেমন ছিল এক দলিত মহিলা সাংবাদিকের কাহিনি 'রাইটিং উইথ ফায়ার' তৈরির নেপথ্যের গল্প?
সালটা ২০১৬। মীরাদেবীর জার্নির গল্প ক্যামেরাবন্দি করতে উত্তরপ্রদেশে পৌঁছে যান রিন্টু-সুস্মিত। সেখানে মীরাদেবীর পাশাপাশি তাঁর তত্ত্বাবধানে কাজ করা আরও দুই তরুণীর সঙ্গে আলাপ হয় তাঁদের। শ্যামকলি, সুনীতা। বর্তমান মিডিয়া হাউজের গ্ল্যামার আর ঝাঁ চকচকে উপস্থাপনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় 'খবর লহেরিয়া' এঁটে উঠবে কী করে? উপরন্তু এখন ডিজিটাইজেশনের যুগ। এক ক্লিকেই খবর হাতের মুঠোয়। অতঃপর মীরাদেবীদের মোবাইলের দ্বারস্থ হতে হয়। টেকনলজি নিয়ে অতটা সড়গড় নন কেউই। আবার গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো 'দলিত' তকমা। খবর জোগাড় করতে গিয়েই তো হিমশিমের জোগাড় হতে হত এই দলিত মহিলাদের। কীভাবে হল তারপর এই অসাধ্যসাধন? সেই উত্তরণের গল্প বলে সুস্মিত-রিন্টু থমাসের 'রাইটিং উইথ ফায়ার'। যে ডকু-ফিচার এবার জায়গা করে নিল ২০২২ সালে অ্যাকাডেমির মনোনয়ন বিভাগে।
Advertisment
উল্লেখ্য, ভারত থেকে এই একটিমাত্র কাজ এবার অস্কারে মনোনয়ন পেয়েছে। এর আগে 'জয় ভীম' আশা জাগালেও পৌঁছতে পারেনি শেষ পাঁচে। 'মাদার ইন্ডিয়া', 'সালাম বম্বে', 'লগান'-এর পর ফের কোনও ভারতীয় কাজ অস্কারের শেষ পাঁচে পৌঁছতে পেরেছে। গোটা দেশের চোখ এখন 'রাইটিং উইথ ফায়ার'-এর দিকে।
২০২১ সালে সানডেন্স ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রিমিয়ারের পর দুটো পুরস্কার জিতেছিল এই তথ্যচিত্র। মোট ২০টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার রয়েছে 'রাইটিং উইথ ফায়ার' নির্মাতার ঝুলিতে। মীরাদেবী এখন অবশ্য তাঁর মহিলা টিম নিয়ে পুরোদস্তুর উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনের কভারেজে ব্যস্ত।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন