Pdt Tejendra Narayan Majumdar: গতকাল ঘোষণা করা হয়েছে, এবছর পদ্ম পুরস্কার পাচ্ছেন সরোদ বাদক পন্ডিত তেজেন্দ্র নারায়ন মজুমদার। দীর্ঘ বহু বছর ধরে, উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত এবং ক্লাসিকাল মিউজিকের এক অনন্য প্রতিভা এই শিল্পী। এবং এত বছর ধরে এই সাধনার ফল পাচ্ছেন তিনি, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার তরফে তার অনুভূতি জানতে ফোন করা হলে ঠিক এমনটাই জানান তিনি।
জীবনে বহু পুরস্কার পেয়েছেন, কিন্তু পদ্ম পুরস্কারের আনন্দ এবং সম্মাননা একদম ভিন্ন। ভারত সরকারের তরফে এই পুরস্কার পাচ্ছেন, কেমন অনুভূতি হচ্ছে তাঁর? শিল্পী বলেন, "পদ্ম পুরস্কারের অন্যরকম মান্যতা আছে। এবং আমি কৃতজ্ঞ নির্বাচন কমিটির কাছে। যারা আমাকে যোগ্য মনে করেছেন এই পুরস্কারের। দীর্ঘ এত বছর ধরে আমার যে সাধনা, বলা যেতে পারে আমার সৃষ্টির যে এমন সম্মান তাঁরা দিচ্ছেন, এর জন্যই আমি খুব কৃতজ্ঞ। এই সম্মাননা এবং পুরস্কার, আমি উৎসর্গ করছি আমার বাবা-মা এবং পরিবারকে এবং আমার গুরুদের। উচ্চাঙ্গ সংগীতের সমস্ত সদস্যকে যারা এত বছর ধরে আমাকে অনুপ্রাণিত করে গিয়েছেন। আমার বাবা এই খবরটা শুনে যেতে পারেননি। কিন্তু আমার মায়ের ৯১ বছর বয়স তার পরেও যে তাকে আমি শোনাতে পারলাম যে আমি পদ্ম পুরস্কার পাচ্ছি, এটাই আমার কাছে অনেক।"
সঙ্গে তিনি এও জানালেন, উচ্চাঙ্গ সংগীতের ৩ স্তম্ভকে বেশ মিস করছেন তিনি। সারা বিশ্বের কাছে সেই তিন মানুষ, ক্লাসিকাল মিউজিকের উজ্জ্বল নক্ষত্র হলেও, পন্ডিতজির কাছে তারা অসম্ভব ভালো বন্ধু ছিলেন। আর আজ তার এই সম্মাননায়, এই তিন বন্ধু যে ভীষণ খুশি হতেন সে কথাও তিনি জানিয়ে দিলেন। শিল্পী বললেন, "আমি তিন জনকে ভীষণ মিস করছি আজকের দিনে। ওস্তাদ জাকির হোসেন, ওস্তাদ রশিদ খান এবং পন্ডিত শুভঙ্কর ব্যানার্জি। আমি বলে বোঝাতে পারবো না এরা তিনজন থাকলে ঠিক কতটা আজকে আমার জন্য খুশি হত। ওদের কথা খুব মনে পড়ছে।" যখন প্রথম জানতে পেরেছিলেন যে পদ্ম পুরস্কার পাচ্ছেন, তখন কার কথা সবার আগে মনে পড়েছিল তার?
পন্ডিতজি আবেগের সুরে বলেন, "আমার পাশে তখন পন্ডিত বিক্রম ঘোষ বসেছিল। আমরা দুজনেই প্রায় একই সময় গান নিয়ে সাধনা শুরু করেছিলাম। যখন ফোনটা এলো আমি আবেগে বিক্রমের হাতটা ধরে ফেলেছিলাম। ও তো খবরটা শুনে উত্তেজিত হয়ে পড়ল। আমার স্ত্রীকে জানালো খবরটা।" তার সঙ্গে সঙ্গে আরও দুজন পাচ্ছেন বাংলা থেকে পদ্ম পুরস্কার। একজন অরিজিৎ সিং, এবং অন্যজন উদয় শংকরের কন্যা মমতা শংকর। তাঁদেরকে নিয়ে কি বললেন পন্ডিত তেজেন্দ্র নারায়ণ?
তার কথায়, "অত্যন্ত ন্যায্য দুজন মানুষের পুরস্কার পাচ্ছেন। অরিজিৎ যেমন সংগীতের দুনিয়ায় অনবদ্য একজন নাম, তেমন মমদিকে নিয়ে আমার নতুন করে কিছু বলার নেই। তার পারিবারিক একটা লিগেসি সবাই জানে। মমদির আরো অনেকদিন আগে এই পুরস্কার পাওয়া উচিত ছিল। যাইহোক উনি এখনও যে পাচ্ছেন এটাই সবথেকে বড় কথা। বয়সটা ফ্যাক্টর নয়। তার অভিনয় তার নাচ, সবকিছুই বাঙালীকে মুগ্ধ করেছে। আসলে আমার মনে হয়, সময়-কাল এসব না মিললে, ভালো কিছু হয় না। তার সঙ্গে সঙ্গে আরেকটা জিনিসও মনে করি, কোন কাজ বা কোন শিল্প যদি প্রতিভার সঙ্গে এবং সততার সঙ্গে করা যায়, তবে, তাঁর একটা ফল অবশ্যই পাওয়া যায়।
পন্ডিতজি দাবি করেন, তিনি এখনও শিক্ষার্থী। তিনি আজও সকলের থেকে কিছু না কিছু শিখছেন। তার সব সময় চেষ্টা থাকে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের একটা ভীষণ সুন্দর দিক মানুষের কাছে তুলে ধরার। তাঁর সঙ্গে সঙ্গে তিনি এও বলেন, "আমার এই চেষ্টার এবং শিল্পের বিশেষ সম্মাননা বা ফল আমার দেশ আমাকে দিচ্ছে, এর থেকে বেশি খুশি এবং আনন্দ বোধহয় আর কিছুতেই নেই। আমি ভারতবাসীর কাছ থেকে এবং আমার সমস্ত উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতপ্রেমীদের কাছ থেকে আশীর্বাদ প্রার্থনা করলাম।"