স্বাধীনতার ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে এমন কিছু গান রয়েছে যেগুলো মানুষকে দরজা ভেঙে দেশকে মুক্ত করতে অনুপ্রেরণা জাগিয়েছিল। কবি নজরুল, তাঁর সৃষ্টি এমনকি সেই সারা জাগানো ভয়ঙ্কর বিদ্রোহের সব শব্দ, ভারত মাকে মুক্ত করতে এক করেছিল দেশের প্রবীণ নবীন সকলকেই। সেই গান কারার ঐ লৌহ কপাট... তাঁকে নিয়ে এহেন ছেলেখেলা? কীভাবে সম্ভব?
শেষ কিছুদিন ধরেই বিশ্ববিখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক এ আর রহমানকে ঘিরে ভয়ঙ্কর আলোড়ন। বাংলার সঙ্গীত তথা দেশের এক চির শ্রেষ্ঠ গানকে তিনি অপমান করেছেন। এ এমন এক গান যে বাংলার যেকোনও বাচ্চা গাইতে পারে। দেশমাতৃকাকে স্মরণ করে এই গান গাওয়া হয়। তাঁকে কিনা এভাবে বিকৃত করে গাওয়ালেন সুরকার? আর গাইলেন কারা? বাংলার সব চেনা শিল্পীরা। নাম রয়েছে তীর্থ ভট্টাচার্য, রাহুল দত্তের মত শিল্পীদের। বাঙালি হয়ে বিদ্রোহী কবি নজরুলকে এবং তার সৃষ্টিকে নিয়ে চরম ছেলেখেলা করেছেন? এমনই ইঙ্গিত দিলেন বর্ষীয়ান শিল্পী হৈমন্তী শুক্লা।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার তরফে ফোন যেতেই শিল্পীর গলায় ক্ষোভ। দীর্ঘদিন গান গেয়েছেন। এমন একটি গানকে নিয়ে ভয়ঙ্কর সুর - তাল যেন পুরো গানটা শোনাও অস্বস্তিকর হয়ে পড়েছে। শিল্পী বললেন, "আমি আগে তো গানটা শুনিনি। সবাই যখন আলোচনা করছে আমার মনে হল শুনে দেখি। পুরো গানটা একইরকম। মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। প্রকাশ্যে গালিগালাজ করে দিচ্ছি। এই গানটার কত তেজ, যেন সবকিছু ভেঙে ফেলবে। সেখানে কেন উনি সেই ভাবটা নষ্ট করবেন? উনাকে এই অধিকার কে দিয়েছে? উনি যেমন গানবাজনা করেন সেটা নিয়ে থাক না! আমি রহমানকে গুণী হিসেবেই জানি এবং মানি। উনি না হয় জানেন না বাঙালি সম্পর্কে। কিন্তু কবি নজরুলকে নিয়ে নিশ্চই কিছু জানেন। তাঁকে যখন এটা বানাতে বলা হল, রাজি হল কেন?"
আরও পড়ুন - তিলক-গেরুয়া বসন, ‘দেবী চৌধুরানী’ শ্রাবন্তীকে দেখে ‘ওরে ওরে’ রব তারকা বন্ধুদের
এখানেই শেষ না। শিল্পী রহমান সাহেবকে তাও এক ইঞ্চি ছাড় দিলেও বাঙালি যে শিল্পীরা এই গান গেয়েছেন তাদের ক্ষমা করতে নারাজ। বললেন, "বাচ্চারা শুনে বড় হয়েছে এই গান। এই বাংলার শিল্পীরা তাঁরা গেয়ে দিল? কেন? ওরা প্রতিবাদ করবে না? রহমান তো এর আগেও অনেক গান নিয়ে যা খুশি করেছে, এগুলো একটা কথা? আমার ভীষণ মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে"। হৈমন্তী শুক্লা ছাড়াও, প্রচণ্ড তিতিবিরক্ত আরেক শিল্পীও। তিনি শ্রাবণী সেন।
গলা চড়ালেন তিনিও। সাফ বললেন, "আমি পুরো গানটা শুনতে পারি নি। কিছুই না, আমি সকলকে চিনি না কোন শিল্পীরা গেয়েছেন তবে এটুকু বলতে পারি, লোভ! অতিরিক্ত লোভ না হলে এটা হয়? শুধু এ আর রহমান বলে সব মাফ? আজকে দক্ষিণের যদি কোনও স্বাধীনতা সংগ্রামের গান আমরা বাংলায় অদ্ভুতভাবে উপস্থাপনা করি তাহলে নিশ্চয়ই ভাল লাগবে না? আমি তো বলব, বাংলার যে ছেলেমেয়েরা গেয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে অমার্জনীয় অপরাধ। ধিক্কার জানাই।"
প্রসঙ্গত, পিপ্পা ছবিতে নজরুলের কারার ঐ লৌহ কপাট গানটিকে বিকৃতভাবে উপস্থাপনের অভিযোগ উঠেছে। এমন এক গগনভেদি গান কিন্তু তার সঙ্গে এতটা সুর এবং লয়ের অপ্রাসঙ্গিকতা যেন কানে বাঁধছে বেশিরভাগের। সেই নিয়েই উত্তাল সঙ্গীত মহল।