/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2019/05/vivek1.jpg)
PM Narendra Modi movie cast: বিবেক ওবেরয়, মনোজ যোশী, প্রশান্ত নারায়ণন, অঞ্জন শ্রীবাস্তব, দর্শন কুমার, জারিনা ওয়াহাব, রাজেন্দ্র গুপ্ত, বোমান ইরানি
PM Narendra Modi movie director: উমঙ্গ কুমার
PM Narendra Modi movie rating: ২/৫
কিছু কিছু ছবি এমন হয়, যেগুলির হলে মুক্তি পাওয়াটাই একটা মাইলফলক। বড় পর্দার জন্য তৈরি 'পিএম নরেন্দ্র মোদী' নাম নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জীবনী এমন দিনে মুক্তি পেল, যেদিন সাধারণ নির্বাচনে তাদের ঐতিহাসিক জনমত এবং দ্বিতীয়বার সরকার গঠনের সুযোগ নিয়ে উল্লাসে মেতেছে বিজেপি।
নির্বাচন চলাকালীন মুক্তির অনুমতি পায় নি বিবেক ওবেরয় অভিনীত এই ছবি। কিন্তু তাতে কিছু এসে যায় না, এবার তো হলে চলেই এলো, এবং নিষ্ঠাবান-নিষ্ঠাবতীরা নিঃসন্দেহে দলে দলে প্রেক্ষাগৃহে উপস্থিত হবেন, আনন্দ-উচ্ছ্বাসে স্নাত, ছবির সঙ্গে গলা মিলিয়ে "মোদী, মোদীইই, মোদী, মোদীইই" বলতে বলতে।
কারণ আর কিছু করার নেই: এই ছবির প্রতিটি মুহূর্তে রয়েছে ছবির প্রধান চরিত্রের প্রতি অগাধ বিস্ময় মাখানো শ্রদ্ধা, বাল্যকাল থেকে প্রাপ্তবয়স পর্যন্ত। বিষয়বস্তু হলো এক চা-ওয়ালার ছেলের চমকপ্রদ উত্থান - প্রথমে আরএসএস-এর প্রচারক, সেখান থেকে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী, সেখান থেকে ২০১৪ সালে দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথগ্রহণ।
আরও পড়ুন: পুলিশি নিরাপত্তায় বিবেক ওবেরয়
যাঁরা এই গোটা কাহিনীটাই হজম করে বসে আছেন, এই ছবি তাঁদের আস্থা আরও জোরদার করে তুলবে। অবিশ্বাসীদের নিয়ে কেউ মাথা ঘামাচ্ছে না, যাঁদের চোয়াল ছবি দেখতে দেখতে এতটাই ঝুলে যাবে যে পরে মেঝে থেকে কুড়িয়ে আনতে হবে। একের পর এক চমকে দেওয়া ঘটনার সমাহার মুখ হাঁ করেই দেখবেন তাঁরা: কেমনভাবে যুবক মোদী আসন্ন বৈবাহিক সম্পর্কের হাত এড়িয়ে হিমালয়ে তপস্যা করতে চলে যান, কেমনভাবে গোধরা-পরবর্তী দাঙ্গা আটকানো যায় নি কারণ কোনও 'পড়শি রাজ্য সাহায্য করে নি', ভুমিকম্প ত্রাণে 'ধর্মনিরপেক্ষ' স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে মোদীর ভূমিকা, ইত্যাদি।
কিছুক্ষণ পর গোনা বন্ধ করে দিতে হয়। এটি জীবনী-ভিত্তিক ছবি শুধু নয়, একটি পুরোদস্তুর, খোলাখুলি, অকুণ্ঠ স্তুতিগান। এছাড়া আর কীই বা হতে পারত?
শুরুতে 'সৃজনশীল স্বাধীনতা' সংক্রান্ত বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলে এই ছবি। যাঁরা 'জয়' মোদী বড় হওয়ার সময়কাল মনে করতে পারেন, তাঁরা মনে করতেই পারেন, অন্য কোনও পৃথিবীতে রাজনৈতিক আঙিনায় নিজের জায়গা করে নিচ্ছিলেন মোদী, সঙ্গে তাঁর 'ভিরু' অমিত শাহ (যোশী, এবং এই ছবিতে 'জয়-ভিরু'র বিশেষ উল্লেখ রয়েছে, ঠাট্টা নয়)।
ছবির মূল সুর-তালের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রধান চরিত্রের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা বজায় থাকে আগাগোড়া। বাল্যকাল থেকেই সে উদারমনা, ত্যাগী, খুব ছোটবেলা থেকে বয়সের তুলনায় অনেক প্রাজ্ঞ এক বালক, ভারত মাতার প্রতি যার ভালবাসা তার নিজের 'বা' (জারিনা) অথবা মায়ের প্রতি ভালবাসাকে ছাপিয়ে যায়। বিরোধীপক্ষ এই ছবিতে দুর্বল, অর্থলোভী (মনমোহন সিং একটা কথাও বলেন না, স্রেফ 'মৌনতা' বজায় রাখেন); মোদীর পতন ঘটাতে এক দুর্নীতিপরায়ণ ব্যবসায়ী (নারায়ণন) গাঁটছড়া বাঁধে এক সাংবাদিকের সঙ্গে; রাহুল-সোনিয়া গান্ধী এবং তাঁদের সাঙ্গোপাঙ্গদের অক্ষমভাবে হাত কচলানো ছাড়া আর বিশেষ কিছু করার নেই।
আরও পড়ুন: ঐশ্বর্য রাইয়ের মিম মুছে ক্ষমা প্রার্থনা বিবেকের
তাঁর নিজের দলের ছবিটাও খুব একটা আলাদা নয়। বাজপেয়ী বাদে আর সবাই তাঁর সাফল্যের শিখরের দিকে অপ্রতিরোধ্য যাত্রাপথে নগন্য মাইলস্টোন। অবশ্য মোদীকে তাঁর লক্ষ্যে পৌঁছে দেওয়া প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে বাংলা থেকে বেরিয়ে গুজরাটে টাটা মোটরস স্থাপন করা পার্সি শিল্পপতির ভূমিকায় বোমান ইরানিকে পর্দায় বেশিক্ষণ দেখা যায়।
মোদী-রূপী বিবেককে ছবির গোড়ার দিকেই বলা হয়, "আপনার অভিনেতা নয়, নেতা হওয়া উচিত ছিল।" এরপর তিনি নিষ্ঠা সহকারে ঢিলেঢালা, মধ্যমানের এক চিত্রনাট্য পড়ে শোনান। পর্দায় মুখ্য চরিত্র ছাড়া একটা ফ্রেমও প্রায় দেখা যায় না, এক্ষেত্রে যা মোটামুটি গত পাঁচ বছরে বাস্তব জীবনেরই প্রতিফলন। এখানেই 'রিল' এবং 'রিয়েলের' সঙ্গম। দু'ঘণ্টার কিছু বেশি সময়ে সূক্ষ্মতার সুযোগ বিশেষ নেই। সবকিছুই চড়া দাগে চলে, সঙ্গে থেকে এই জাতীয় জ্ঞানের বাণী: 'হিংসার কোনও ধর্ম নেই, ধর্মে হিংসা নেই', 'চা বেচতাম, ওদের মতো দেশ না'; 'বাপের কাজ নয়, স্রেফ আপনাদের কাজ', এবং সর্বোপরি, 'মোদী একটি চিন্তাধারা; আপনাদের সবার মধ্যে রয়েছে মোদী'।
ছবিতে কোনও তর্কের বিষয় নেই, কোনও কিন্তু-কেন নেই, কোনও ধোঁয়াশা নেই। 'হিন্দুত্বের' উল্লেখ নেই, হিন্দু ধর্মের উল্লেখ রয়েছে, যেটি আবারও একবার 'একটি চিন্তাধারা'। বায়োপিক বা জীবনীমূলক ছবি হিসেবে তালগোল পাকানো, অর্ধসত্যের জগতের অধিবাসী হলেও স্তুতিগান হিসেবে সম্পূর্ণ সফল 'পিএম নরেন্দ্র মোদী' - ব্যক্তি মোদীর চরণে সমর্পিত, সমালোচনাহীন, প্রশ্নবিহীন আনুগত্যে ভরপুর। এবং এই ছবির কিছুই 'অ্যাকসিডেন্টাল' নয়।