কেকে-র আকস্মিক প্রয়াণ কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না অনুরাগীরা। মাত্র ৫৩ বছর বয়স যাওয়ার নয়। এত গান, এত দরাজ গলা আর শোনা যাবে না, ভাবতেই পারছেন না সঙ্গীতমহলের দিকপালরা। এদিকে কেকে-র মৃত্যুর পরই শুরু হয়েছে মৃত্যুর নানা দিক নিয়ে উঠে এসেছে চুলচেড়া বিশ্লেষণ। অভিযোগ উঠেছে কনসার্টের আয়োজকদের বিরুদ্ধেও। আসন সংখ্যার তুলনায় অনেক বেশি অনুরাগী এদিনের এই অনুষ্ঠান উপস্থিত ছিল বলেই জানা গিয়েছে। প্রায় ৭ থেকে ৮ হাজার দর্শক নজরুল মঞ্চে হাজির ছিলেন বলেন জানা গিয়েছে। সেই সঙ্গে জানা গিয়েছে প্রেক্ষাগৃহটিতে বাতানুকূল হলেও অতিরিক্ত ভিড় পরিস্থিতিকে বেগতিক করে বলেও জানিয়েছেন কলকাতার মেয়র ফিরাদ হাকিম। বুধবার সংবাদমাধ্যমের কাছে তিনি বলেন, ‘‘প্রেক্ষাগৃহে ক্যাপাসিটি-র (আসনসংখ্যার) থেকে বেশি লোক ছিল। (কেকে-র অনুষ্ঠানে) মানুষের উচ্ছ্বাস আটকানো যায়নি। তবে এসি ঠিক ছিল।’’
অনুষ্ঠানের মাঝে মঞ্চে থাকা স্পটলাইট বারবার বন্ধ করতে বলেছিলেন কেকে। তাঁর শরীরে যে একটা অস্বস্তি হচ্ছিল, সেটা অনেকেরই চোখে পড়ে। কেকের অনুষ্ঠানের পরিচালনার দায়িত্বে থাকা কেউ কেউ বলছিলেন, ‘এদিন মঞ্চে প্রচণ্ড ঘামছিলেন গায়ক। কিছুটা অস্বস্তিও বোধ করছিলেন’। তারপরই শো’ শেষে হোটেলে ফেরার পথেই গাড়িতে শীত শীত ও অনুভব করেন কেকে। গাড়িতে হোটেলে ফেরার পথে গাড়ির এসিও বন্ধ করতে বলেন তিনি। হোটেলে ফিরে যাওয়ার পরই খানিক অসুস্থ হয়ে পড়েন। CMRI হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।
কেকে-র মৃত্যুর পর সামনে এসেছে বেশ কয়েকটি ভিডিও। ভিডিওগুলিতে ধরা পড়েছে অনুষ্ঠানের চরম বিশৃঙ্খলার ছবি। তোয়ালে দিয়ে কেকে-র গা'মুছিয়ে দিতেও দেখা গিয়েছে। অন্য একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে স্টেজ থেকে ক্রু দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন কেকে। অন্য একটি ভিডিওতে দেখা গিয়েছে কিছু লোক অনুষ্ঠানস্থলের ভিতরে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র স্প্রে করছে।
আরও পড়ুন: ‘সবার মতো কেকে-ও উত্তেজিত হয়ে পড়েছিল, নিজেও বুঝতে পারেনি’
কলকাতাতেই নিজের জীবনের শেষ শো করে গেলেন কেকে। সন্ধে ৬.৪৫ টায় নজরুল মঞ্চে প্রবেশ করেন। সাড়ে ৮টা নাগাদ হোটেলে ফিরে যান। সেখানেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপরই হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত ঘোষণা করা হয় তাঁকে।কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ ওরফে কেকে-র আকস্মিক প্রয়াণে স্তম্ভিত দেশের সঙ্গীতমহল। কলকাতায় ২ দিনের জন্য শো করতে এসেছিলেন। সোমবার একটি অনুষ্ঠানও করেন।
প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে কনসার্ট আয়োজকদের ভুমিকা নিয়েও। নজরুল মঞ্চে শো’ দেখার জন্য ৩০০০ আসন বরাদ্দ থাকলেও সেখানে প্রায় সাত হাজার লোকের সমাগম হয় বলেও জানা গিয়েছে। ‘হাম দিল দে চুকে সনম’ দিয়ে যাত্রা শুরু। ‘ঝঙ্কার বিটস’, ‘বজরঙ্গি ভাইজান’ হয়ে অসংখ্য জনপ্রিয় গানের গায়ক। প্রতিটি গান সুপার হিট! দিন কয়েক আগেই আরবে গানের অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি। সঙ্গে অমিত কুমার, রিমা গঙ্গোপাধ্যায়েরাও ছিলেন। সেখানেও নিজস্ব ভঙ্গিতেই মঞ্চ মাতিয়েছেন। মঙ্গলবারের নজরুল মঞ্চও তার ব্যতিক্রম ছিল না। একের পর এক জনপ্রিয় গান গাইছিলেন অবলীলায়। কলেজ পড়ুয়ারা মাতোয়ারা তাঁর গানে। বুধবারেও কেকে-র আরও একটি কলেজ অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। কেকের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই বিশ্ব জুড়েই শোকের ছায়া।