গৌতম বুদ্ধ এবং তাঁর দর্শন মানবসভ্যতার একটি স্তম্ভ। একদিকে যখন সভ্যতা শুধুই আহরণের কথা বলে, ব্যক্তিগত সম্পত্তি অর্জনের কথা বলে, তখন অন্যদিকে যেন ভারসাম্য রাখতেই বুদ্ধ বলেন ত্যাগের কথা, সংযমের কথা। নয়ের দশকেও পৃথিবীর জনসংখ্যার একটা বড় অংশ ছিলেন বৌদ্ধধর্মে বিশ্বাসী। যত সময় এগিয়েছে সেই সংখ্যা কমেছে। ভারতের ইতিহাস যাঁরা পড়েছেন, তাঁরাও জানেন বার বার আগ্রাসনের মুখে পড়েছে এই ধর্ম। তবু আজও শান্তির কথা, ত্যাগের কথা, আত্মঅনুসন্ধানের কথা উঠলে অন্য ধর্মের মানুষও গৌতম বুদ্ধের কথা স্মরণ করেন। তাঁর জীবন অবলম্বনে বেশ কিছু ক্লাসিক ছবি তৈরি হয়েছে। আবার বৌদ্ধ দর্শন অবলম্বনে তৈরি ছবিও আছে বেশ কিছু। তার কয়েকটি নিয়ে আলোচনা রইল নীচে, লিঙ্কও রইল।
গৌতম বুদ্ধকে নিয়ে প্রথম ছবিটি তৈরি হয় এদেশে ১৯২৩ সালে। ভারতীয় চলচ্চিত্রের জনক দাদাসাহেব ফালকে-র তৈরি সেই ছবিটি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। কিন্তু তার দুবছর পরে তৈরি 'প্রেম সন্ন্যাস' হল এই মুহূর্তে বুদ্ধ-কে নিয়ে তৈরি প্রাচীনতম ছবি যা ২০২০ সালে বসে দর্শক দেখতে পারেন।
আরও পড়ুন: ‘শঙ্কু করতে গিয়ে মনে হয়েছে, উনি সত্যজিৎ রায়ের মতোই ছিলেন’
প্রেম সন্ন্যাস
স্যার এডুইন আর্নল্ড-এর লেখা বই 'দ্য লাইট অফ এশিয়া' অবলম্বনে ১৯২৫ সালে তৈরি হয়েছিল নির্বাক ছবি 'প্রেম সন্ন্যাস'। এই ইন্দো-জার্মান ছবিটি যুগ্মভাবে পরিচালনা করেছিলেন হিমাংশু রাই ও ফ্রানজ অস্টেন। ছবিতে সিদ্ধার্থ গৌতমের ভূমিকায় অভিনয় করেন হিমাংশু রাই নিজে আর যশোধারা বা গোপা দেবীর ভূমিকায় ছিলেন সীতা দেবী। এটাই তাঁর প্রথম ছবি। তখন বয়স ছিল ১৬, নাম ছিল রেনে স্মিথ। তাঁকে খুঁজে বার করেছিলেন ফ্রানজ অস্টেন এবং পর্দার জন্যেই তাঁর নামকরণ হয় সীতা। অবিভক্ত ভারতের লাহোরে হয়েছিল এই ছবির শুটিং। সেট ডেকরেশন করেছিলেন হিমাংশু রাইয়ের স্ত্রী এবং ভারতীয় ছবির কিংবদন্তি অভিনেত্রী দেবিকা রানি। ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯২৮ সালে। এই অমূল্য ক্লাসিকটি সৌভাগ্যক্রমে রয়েছে এখন অনলাইনে। দেখে নিতে পারেন নীচের লিঙ্কে ক্লিক করে--
গোতমা দ্য বুদ্ধ
গৌতম বুদ্ধের জীবন অবলম্বনে, ১৯৫৬ সালে তৈরি হয় এই তথ্যচিত্রটি। বিমল রায় প্রযোজিত ও রাজবংশ খন্না পরিচালিত এই তথ্যচিত্র কান চলচ্চিত্র উৎসবে উচ্চ প্রশংসিত হয়। ওই উৎসবের সর্বোচ্চ পুরস্কার অর্থাৎ গোল্ডেন পাম-এর জন্য চূড়ান্ত নমিনেশনেও নির্বাচিত হয়। তবে তার আগে পঞ্চাশের দশকে গৌতম বুদ্ধকে নিয়ে তৈরি আরও একটি ছবি জায়গা করে নিয়েছিল উৎসবের ছবির তালিকায়। সেটি ছিল 'ডেডিকেশন অফ গ্রেট বুদ্ধ'। এই জাপানি ছবিটিও খুব একটা সহজলভ্য নয়।
সিদ্ধার্থ
১৯৭২ সালে তৈরি কনরাড রুকস-এর ছবি 'সিদ্ধার্থ', হারমান হেস-এর উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি। ইন্দো-আমেরিকান এই ছবিটি সেই সময় মুক্তি পায়নি ভারতে। অনেক পরে নয়ের দশকে ছবিটি প্রকাশ্যে আসে। মিলেনিয়ামের পরে ডিভিডিও বার করা হয়। এই ছবিতে গৌতম বুদ্ধের অনুগামীর ভূমিকায় অভিনয় করেন শশী কাপুর। প্রধান চরিত্রে ছিলেন সিমি গারেওয়াল, রমেশ শর্মা, পিঞ্চো কাপুর। ছবিতে ব্যবহৃত সিমি গারেওয়াল-এর নগ্ন দৃ্শ্য নিয়েই মূলত ছিল সেন্সর বোর্ডের আপত্তি। সিদ্ধার্থ থেকে গৌতম বুদ্ধ হয়ে ওঠার যাত্রা নিয়ে যে কয়েকটি ছবি নির্মিত হয়েছে, তার মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কনরাড রুকস-এর এই ছবি। ছবিটি কেমন সেই সম্পর্কে একটা ধারণা হবে নীচের ট্রেলারটি দেখলে--
লিটল বুদ্ধ
বার্নার্দো বার্তোলুচ্চির এই ছবিটির কথা সম্ভবত সবাই জানেন। পৃথিবীবিখ্যাত পরিচালকের এই ছবিতে অভিনয় করেন রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, সুরেখা সিক্রি, অনুপম শ্যাম ও রাজেশ্বরী সচদেব। আর গৌতম বুদ্ধের ভূমিকায় ছিলেন হলিউড তারকা কেনো রিভস। গৌতম বুদ্ধের দর্শনের আলোয় পরিচালক ফিরে দেখেছেন বুদ্ধের জীবনকে। বুদ্ধকে নিয়ে তৈরি ক্লাসিক ছবিগুলির মধ্যে এই ছবিটি তাই সব সময়েই আলোচ্য। ছবির ডিভিডি খুবই সহজলভ্য। দেখে নিতে পারেন ছবির ট্রেলারটি নীচের লিঙ্কে ক্লিক করে--
স্প্রিং, সামার, ফল, উইন্টার... অ্যান্ড স্প্রিং
বৌদ্ধ দর্শন নিয়ে বহু বিখ্যাত ছবি তৈরি হয়েছে। তার মধ্যে 'কিম কি-দুক'-এর এই ছবিটি অন্যতম সেরা ক্লাসিক হিসেবেই পরিগণিত হয়। সুখ, দুঃখ, রাগ ও ভোগের আনন্দ-- মানুষের জীবনের এই চারটি অনুভূতিকেই বৌদ্ধ দর্শনের আলোতে দেখেছেন পরিচালক তাঁর এই ছবিতে। এই চারটি অনুভূতিই চক্রাকারে আবর্তিত হয়। ২০০৩ সালে নির্মিত এই ছবিটি ইংরেজি সাবটাইটেল-সহ মুক্তি পায় আবার ২০০৪ সালে। এই ছবির ডিভিডিও অত্যন্ত সহজলভ্য।
গৌতম বুদ্ধের জীবন নিয়ে আরও অনেক ছবি তৈরি হয়েছে এদেশে এবং বিদেশে। বেশ কিছু অ্যানিমেটেড সিরিজও রয়েছে। আর বৌদ্ধ দর্শন নিয়ে তৈরি ছবির তালিকাও অনেক লম্বা। আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছবি তালিকা থেকে হয়তো বাদ পড়ল। কিন্তু যদি আর্কাইভাল মূল্য, প্রোডাকশন স্কেল সিনেম্যাটিক ল্যাঙ্গোয়েজ বিচার করতে হয়, তবে এই পাঁচটি ছবির প্রসঙ্গ আসবে সবার আগে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন