কলেজ মানেই প্রেম। বই-খাতার ফাঁক দিয়ে আড়ালে-আবডালে পছন্দের মানুষটিকে চুপিচুপি দেখা। চোখে চোখ পড়লেই আলতো হাসি। লাজুক মুখ। চায়ের ভাঁড়ের সঙ্গে কথায়-ভালবাসায় ভেজা বিকেল। সেই নস্ট্যালজিয়া উসকে দিয়েই ভ্যালেন্টাইন উইকে মুক্তি পাচ্ছে 'প্রেম-টেম' ('Prem Tem')। পাবলো, রাজি আর আরশি- তিনমূর্তির বন্ধুত্ব-প্রেমের গল্প। তার প্রাক্কালেই 'পাবলো' সৌম্য মুখোপাধ্যায় আর 'রাজি' সুস্মিতা মুখোপাধ্যায়কে ধরা গেল। তাঁদের টলিউড ডেবিউ থেকে ব্যক্তিগত জীবনে প্রেম, লিভ ইন রিলেশনশিপ… যাবতীয় বিষয় নিয়ে জমে উঠল আড্ডা।
পাবলো আর রাজি এই চরিত্রগুলোর সঙ্গে ব্যক্তিগত জীবনে কী মিল রয়েছে?
সুস্মিতা- অনেকটাই। যেমন, রাজি ভীষণ স্বাধীনচেতা। চুলবুলে। স্পষ্টবক্তা। যে নিজের স্বপ্নে বাঁচে। টমবয়িস গোছের। আমিও ঠিক তাই। ডিপ্লোম্যাসি আসে না আমার। মনে যা আছে, সেটাই মুখে। বাইক-স্কুটি দিব্যি চালাই। আরেকটা বিষয়, রাজি পোষ্য ভালবাসে। আমিও তাই। এই চরিত্রটার জন্য খুব একটা প্রস্তুতি নিতে হয়নি তাই। তবে অমিল একটাই। আমি ছটফটে। কিন্তু রাজি ভীষণ ম্যাচিওরড। তাই একটু শান্ত থাকা প্র্যাকটিস করতে হয়েছিল।
সৌম্য- পাবলোর থেকে আমি একেবারে আলাদা। ও কবি, গীতিকার হতে চেয়েছিল। আমার কোনওদিনই লেখালেখি আসে না। থিয়েটার করার সুবাদেই কবিতা ঘাঁটাঘাঁটি করতে হত। পাবলো যেভাবে বড় হয়েছে, আমার আপব্রিঙ্গিং সেরকম নয়। ও সম্পর্ক নিয়ে কনফিউজড। আমি ব্যক্তিগতজীবনে নই। পাবলোর চলন-বলন একেবারেই আমার মতো নয়। তাই পাবলো চরিত্রের খুঁটিনাটি বোঝার জন্য অনিন্দ্যদার পরামর্শে আমি চন্দননগর স্ট্র্যান্ডে গিয়ে ঘুরেছি। চা খেয়েছি। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মেরেছি। মিল বলতে, পাবলো আর আমি দুজনেই পড়াশোনায় ভাল।
ডেবিউ ছবি দু'জনেরই, মূল চরিত্র, অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের পরিচালনা, এসভিএফের মতো প্রযোজনা সংস্থা, নিঃসন্দেহে বড় ব্রেক। অভিজ্ঞতা কেমন?
সুস্মিতা- আমি আদতে ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়র। সেখান থেকে মডেলিং, তারপর অভিনয়। নামজাদা ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপনে মুখ দেখেই এসভিএফ ও অনিন্দ্যদা ডেকে পাঠান। অডিশন দেওয়ার পরই আমার ডাক আসে। আমার মতো একজন নবাগতার উপর প্রযোজনা সংস্থা ভরসা রেখেছেন, সেক্ষেত্রে দায়িত্বটা তো বাড়েই। একদিকে এসভিএফ, আরেকদিকে অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়-এই কম্বিনেশনে কাজ করার সুযোগ আমার কাছে স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতো।
সৌম্য- মূল চরিত্র হিসেবে ফিল্মে ডেবিউ বটে, তবে এর আগে জুনিয়র আর্স্টিস্ট হিসেবে কাজ করেছি। 'ময়ূরপঙ্ক্ষী' বলে একটা সিরিয়ালও করেছিলাম। তবে এসভিএফের মতো প্রযোজনা সংস্থা, আর অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের পরিচালনায় কাজ করার সুযোগ পাওয়াটা সত্যিই বড় ব্রেক। আদিত্য বিক্রম সেনগুপ্তর পরিচালনায় এক পোশাকের ব্র্যান্ডে কাজ করেছিলাম। সেই বিজ্ঞাপন আর 'ময়ূরপঙ্ক্ষী' ধারাবাহিক দেখেই আমাকে ফোন করেছিলেন অনিন্দ্যদা। যাঁর কিনা আমি এতবড় ভক্ত, তিনি ফোন করে অভিনয়ের প্রস্তাব দিচ্ছেন, আমি হতবাক! এরপর অডিশন দিতেই ডেকে পাঠানো হয় আমাকে।
পোষ্যকে নিয়ে অসুবিধে হয়নি শুটিংয়ে?
সুস্মিতা- বাড়িতে পোষ্য নেই। আসলে আমার বাড়ি কুলটিতে। কলকাতায় একা থাকি বলে কাজের ব্যস্ততায় পোষ্য রাখিনি। কারণ ওদের অযত্ন হোক চাই না। তবে পথেঘাটে ওদের কোনও সমস্যা দেখলে এগিয়ে যাই। প্রথমদিন যখন খগেন (টমি) এসেছিল ওর চিনতে সময় লেগেছিল। কিন্তু অসুবিধে হয়নি। ও আমাদের একমাত্র বম্বে স্টার। দক্ষিণী, বলিউড ছবিতেও ছিল। খাবার খাইয়ে ওর সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে হয়েছিল।
নতুন ছবি, ভিন্ন স্বাদের প্রেম-ভালবাসার গল্প, ভ্যালেন্টাইন উইকে মুক্তি পাচ্ছে কী বলবে?
সুস্মিতা- ভালবাসার ছবি ভালবাসার সপ্তাহে রিলিজ করছে, দেখতে মন্দ লাগবে না। বাস্তবের গল্প। এটা শুধু কাপলদের নয়, যারা সিঙ্গল তাদেরও দেখা উচিত। বিবাহিতরাও কলেজের নস্ট্যালজিয়া ফিরে পাবেন। যারা পোষ্য ভালবাসেন, এই ছবি তাদের জন্যও। নিজেদের জীবনের সঙ্গে দর্শকের রিলেট করতে কোনও অসুবিধে হবে না।
সৌম্য- অতিমারী আবহে মন ভাল রাখার ভ্যাকসিন প্রেম-টেম। মন ভালো করার গল্প। সবাইকে বলব সিনেমাটা দেখার জন্য। এবং ছবিতে সরস্বতী পুজো খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা ফ্যাক্টর। তার আগেই মুক্তি পাচ্ছে। বাঙালির ভ্যালেন্টাইন ডে। 'প্রেম-টেম' মুক্তি পাচ্ছে প্রেমের সপ্তাহে, এর থেকে বড় উপহার আর হয় না।
ব্যক্তিগতজীবনে লিভ-ইন রিলেশনশিপে বিশ্বাসী?
সুস্মিতা- যদি কাউকে মনে ধরে, তাহলে প্রথমেই বিয়ের পিঁড়িতে যাওয়ার কথা ভাবব না। লিভ-ইন রিলেশনশিপে থেকে আরও সময় কাটাব। আমার বিশ্বাস, এক ছাদের তলায় থাকলে মানুষের খুঁটিনাটি স্বভাবগুলো জানা যায়।
সৌম্য- নিশ্চয়ই। আমাদের প্রজন্মের ক্ষেত্রে একে-অপরের সঙ্গে থাকাটা খুব দরকার। যে আমার সঙ্গে থাকবে, তার জানা উচিত যে আমি ভিজে তোয়ালে বিছানায় রাখি কিনা, কিংবা কতটা অগোছালো। টুথপেস্ট একসাথে শেয়ার করলে বোঝা যাবে আর কী! আমি যেমন গোবিন্দা-শাহরুখের ছবি দেখা পছন্দ করি, অপরজন হয়তো সেটা পছন্দই করে না। আমার তো তার সঙ্গে থাকাই অসম্ভব!
পাবলো আর রাজির বেশ কিছু ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে অভিনয় রয়েছে, ডেবিউ ফিল্ম হিসেবে সেটা করতে অসুবিধে হয়নি?
সুস্মিতা- নার্ভাস ছিলাম একটু। প্রথমেই সিনটা শুনে গোগ্রাসে জল খেয়েছিলাম। কিন্তু, রাজির দৃষ্টিভঙ্গী থেকে দেখে পরে নিজেকে আশ্বস্ত করি। শাওয়ার সিনটা মণি স্যর আর অনিন্দ্যদা আমার কমফর্টের কথা ভেবে ইচ্ছে করেই শেষের দিন রেখেছিলেন। ডিওপি শুভঙ্করদার (ভড়) উপরও ভরসা ছিল। যতটা না সিনের জন্য নার্ভাস ছিলাম, তার থেকেও বেশি কাঁপছিলাম ঠান্ডা জলের জন্য। ফেব্রুয়ারি মাসে শুটিং বুঝতেই পারছ। শুট করার সময় সৌম্য আর সবাই এতটাই সাপোর্টিভ ছিল যে অসুবিধে হয়নি পরে আর। সৌম্য সাহস জুগিয়ে বলেছিল, "চিন্তা করিস না। তুই পারবি।"
সৌম্য- না, না একেবারেই না। সুস্মিতা নিজেই নিজেকে বুঝিয়েছে। তবে হ্যাঁ, অত বড় ইউনিটের সামনে গায়ে তোয়ালে জড়িয়ে কিংবা বক্সার পরে বেরতে একটু লজ্জাই লাগছিল। কিন্তু ক্যামেরা রোল করার পর আর অসুবিধে হয়নি। দুজনেই পাবলো-রাজি চরিত্রের মধ্যে ঢুকে গিয়েছিলাম।
আসানসোলের কুলটি থেকে নামজাদা ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপন, এখন এসভিএফের ছবিতে..
সুস্মিতা- মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে আমি। মা-বাবা দুজনেই চাকুরীরত। ভেবেছিলেন, ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়র হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত হব। অভিনয়কে পেশা হিসেবে বেছে নেওয়ায় প্রথমটায় আপত্তি ছিল। ফিল্মি কেরিয়ারের জন্য আমাকে ২ বছর সময় দেওয়া হয় পরিবারের তরফে। তবে ঈশ্বরের অশেষ ধন্যবাদ, সেই সময়ের মধ্যেই এই ছবিতে ডেবিউ করার সুযোগ আসে। মনে আছে, ট্রেলার দেখে মা আমাকে ভিডিও কল করে কেঁদেছিলেন।
জুনিয়র আর্টিস্ট থেকে ফিচার ফিল্মের লিড রোল..
সৌম্য- যেহেতু ক্রিশ্চিয়ান মিশনারি স্কুল এবং পরে যাদবপুরে পড়েছি। দুটো আলাদা জগত দেখেছি। মনে পড়ে, বাসে, সুমোতে ঠাসাঠাসি করে জুনিয়র আর্স্টিস্ট হিসেবে কাজ করতে যেতাম। সেখান থেকে সিনেমার মূল চরিত্রে। স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতোই।