বৃহস্পতিবার সকালেই অভিষেক চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। বলেছিলেন, 'প্রতিক্রিয়া দিতে পারছি না, ক্ষমা করবেন।' তবে শেষমেশ বিকেলে বন্ধুর প্রয়াণে নীরবতা ভাঙলেন বুম্বা। টুইটে লিখলেন, 'তোর বিকল্প হবে না কোনওদিন। ভাল থাকিস রে বন্ধু। বিশ্বাস-ই হচ্ছে না যে অভিষেক আর নেইষ কী বলব, কী লিখব… ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।'
আট-নয়ের দশকের দুই জনপ্রিয় হিরো-- অভিষেক-প্রসেনজিৎ। দুই চাটুজ্জের বন্ধুত্ব তখনও অটুট। ‘বকুলপ্রিয়া’, ‘ভাই আমার ভাই’, ‘লাঠি’, ‘আপন হল পর’, ‘ঘরজামাই’ একাধিক সিনেমা করেছেন এক সঙ্গে। তবে তাল কেটেছিল পরবর্তীতে। যখন একের পর এক ছবি থেকে বাদ পড়লেন অভিষেক চট্টোপাধ্যায়। তবে আজ সেই বন্ধু-সহকর্মীর অকালপ্রয়াণে প্রথমটায় স্তম্ভিত হয়ে যান প্রসেনজিৎ। বলেন, 'একের পর এক মৃত্যু দেখে চলেছি। আর প্রতিক্রিয়া দিতে হচ্ছে। কিন্তু সকালে অভিষেকের খবরটা পেয়ে প্রথমে মনে হল সংবাদমাধ্যমের কাছে কোনও রকম প্রতিক্রিয়া দেব না। ওঁর বিয়েতে বরকর্তা হয়ে গিয়েছিলাম। সে দিনের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। আমাদের যা কিছু ভাল স্মৃতি সেগুলোই মনে রেখে দিতে চাই। এর বেশি আর কোনও শব্দ আমি ব্যবহার করতে পারছি না।'
১৪ বছর আগে যখন অভিষেক চট্টোপাধ্যায় সংযুক্তার সঙ্গে বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলেন, তখন তাঁর বরকর্তা হয়েছিলেন স্বয়ং বুম্বা। অভিষেক-সংযুক্তার বিয়ের সমস্ত কাজ করেছিলেন প্রসেনজিতের স্ত্রী অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়। ছাদনাতলায় তদারকি করেছিলেন খোদ ঋতুপর্ণ ঘোষ। যাঁর ফ্রেমে 'দহন', 'বাড়িওয়ালি'র মতো ছবিতে দেখা গিয়েছিল অভিষেককে।
<আরও পড়ুন: Abhishek Chatterjee: ‘ড্যাডি নেই’, অঝোরে কাঁদছেন ‘গুনগুন’! বাবাকে শেষবার রাজার মতো সাজালেন ‘শঙ্খ’>
এক সময়ে বাংলা ইন্ডাস্ট্রির যখন খুব খারাপ পরিস্থিতি, হাল ধরতে এগিয়ে এসেছিলেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, চিরঞ্জিৎ, অভিষেক চট্টোপাধ্যায়, তাপস পালরা। মিঠু-বুম্বা এক সঙ্গে বহু ছবিও করেছেন যেমন, তেমনই একে-অপরের বাড়ির অনুষ্ঠানে যেতেন আগে। বোন পল্লবী চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গেও অভিষেকের সম্পর্ক ভাল ছিল। পল্লবী বলতেন তাঁর তিন দাদা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, অভিষেক চট্টোপাধ্যায় ও কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায়। বুম্বা-পল্লবীর মা-ও নাকি তাঁকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন। দুই তারকার বাড়িতে ফিল্মি আড্ডাও বসত। তবে পরে সেই বন্ধুত্বে ফাটল ধরে। অভিষেক সেই প্রসঙ্গে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের এক টক শোয়ে মুখ খুললেও তার জবাব কখনও দেননি প্রসেনজিৎ।
শাশ্বতকে বলেছিলেন, 'তোদের খুব প্রিয় দাদা আর দিদি, ইন্ডাস্ট্রির টপ হিরো-হিরোইন… তাঁরা দু’জনে জোট বেঁধে যে কত ছবি থেকে আমাকে বাদ দিয়েছে! এমনকী আমার সাইন করা ১২-১৪টা ছবি থেকে বাদ পড়েছিলাম। শুধু তাই না, সদ্য কথাবার্তা হয়েছে এরকম ৫-৬টা সিনেমা থেকেও আমাকে সরিয়ে দেওয়া হল। সব মিলিয়ে ২০ খানা সিনেমা থেকে আমাকে বাদ দেওয়া হয়।' তবে আজ অভিষেক চট্টোপাধ্যায়ের আকস্মিক প্রয়াণেই সে সব বিতর্ক-সমালোচনা মিলিয়ে গেল। প্রসেনজিৎও ভাতৃ-সম বন্ধুর মৃত্যুতে শেষমেশ নীরবতা ভাঙলেন।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন