ইন্ডাস্ট্রির স্বজনপোষন প্রসঙ্গে মুখ খুলতে গিয়ে একবার নাম না করেই অভিষেক চট্টোপাধ্যায় তোপ দেগেছিলেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের উদ্দেশে। বলেছিলেন, "ইন্ডাস্ট্রির এক দাদা-দিদি মিলে জোট বেঁধে আমাকে ২০টা ছবি থেকে বাদ দিয়েছিল।" আট-নয়ের দশকের দুই জনপ্রিয় হিরো- অভিষেক-প্রসেনজিৎ। দুই চাটুজ্জ্যের বন্ধুত্ব তখনও অটুট। 'বকুলপ্রিয়া', 'ভাই আমার ভাই', 'লাঠি', 'আপন হল পর', 'ঘরজামাই' একাধিক সিনেমা করেছেন একসঙ্গে। তবে তাল কাটল পরবর্তীতে। যখন একের পর এক ছবি থেকে বাদ পড়লেন অভিষেক চট্টোপাধ্যায়। তবে আজ সেই বন্ধু-সহকর্মীর অকালপ্রয়াণে স্তম্ভিত প্রসেনজিৎ। বললেন, "ওঁর মৃত্যুতে কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে পারছি না, ক্ষমা করবেন।"
১৪ বছর আগে যখন অভিষেক চট্টোপাধ্যায় বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলেন, তখন তাঁর বরকর্তা হয়েছিলেন স্বয়ং বুম্বা। আজ সেই স্মৃতি ফিরে এল প্রসেনজিতের মনে। তাঁর মন্তব্য, "একের পর এক মৃত্যু দেখে চলেছি। আর প্রতিক্রিয়া দিতে হচ্ছে। কিন্তু সকালে অভিষেকের খবরটা পেয়ে মন হল এইপ্রথম সংবাদমাধ্যমের কাছে কোনওরকম প্রতিক্রিয়া দেব না। ওঁর বিয়েতে বরকর্তা হয়ে গিয়েছিলাম। সেদিনের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। আমাদের যা কিছু ভাল স্মৃতি সেগুলোই মনে রেখে দিতে চাই। এর বেশি আর কোনও শব্দ আমি ব্যবহার করতে পারছি না।"
একসময়ে বাংলা ইন্ডাস্ট্রির যখন খুব খারাপ পরিস্থিতি, হাল ধরতে এগিয়ে এসেছিলেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, চিরঞ্জিৎ, অভিষেক চট্টোপাধ্যায়, তাপস পালরা। মিঠু-বুম্বা একসঙ্গে বহু ছবিও করেছেন। একে-অপরের বাড়ির অনুষ্ঠানেও যেতেন আগে। দুই তারকার বাড়িতে ফিল্মি আড্ডাও বসত। তবে পরে সেই বন্ধুত্বে ফাটল ধরে। অভিষেক সেই প্রসঙ্গে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের এক টক শোয়ে মুখ খুললেও তার জবাব কখনও দেননি প্রসেনজিৎ।
কী বলেছিলেন সেদিন অভিষেক চট্টোপাধ্যায়? শোয়ের উপস্থাপক শাশ্বত তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, এক সময়ে পরপর হিরোর চরিত্রে অভিনয় করে সুপারহিট ছবি উপহার দিতে, সেই অভিষেককেই পরবর্তীতে আর দেখা গেল না কেন?
এই প্রশ্নের জবাবে অভিষেক বলেছিলেন, "ভাগ্য তো বটেই আর ইন্ডাস্ট্রির ভয়ঙ্কর রাজনীতি। তোদের খুব প্রিয় দাদা আর দিদি, ইন্ডাস্ট্রির টপ হিরো-হিরোইন… তাঁরা দু'জনে জোট বেঁধে যে কত ছবি থেকে আমাকে বাদ দিয়েছে! এমনকী আমার সাইন করা ১২-১৪টা ছবি থেকে বাদ পড়েছিলাম। শুধু তাই না, সদ্য কথাবার্তা হয়েছে এরকম ৫-৬টা সিনেমা থেকেও আমাকে সরিয়ে দেওয়া হল। সবমিলিয়ে ২০খানা সিনেমা থেকে আমাকে বাদ দেওয়া হয়। আমি অভিষেক চ্যাটার্জি, তখন ইন্ডাস্ট্রির প্রায় নম্বর ওয়ান হিরো। হঠাৎ দেখল, তাঁর হাতে একটাও কাজ নেই। এই ঘটনার পর টানা ১ বছর আমি বাড়ির বাইরে বেরইনি। লক্ষ্মীর ভাঁড় ভেঙে আমাকে খেতে হয়েছিল।"
এরপরই শাশ্বত প্রশ্ন করেন, কখনও জানতে চাওনি কেন এমন হয়েছে? অভিষেকের উত্তর, "না, কখনও না..।" নাম না করেই অভিষেক চট্টোপাধ্যায় যে বুম্বা-ঋতুপর্ণার কথাই বুঝিয়ে দিতে চেয়েছিলেন, তা ইন্ডাস্ট্রির অন্দরে সকলেরই জানা। তবে আজ মিঠুর প্রয়াণে শোকস্তব্ধ প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন