বাংলায় গ্রাফিক নভেল, মানে বাংলা অক্ষরে লেখা থাকবে, এ চাহিদা অভিজাত বাঙালি অনেকদিন ধরেই পোষণ করে আসছেন। অ্যাস্টেরিক্স, টিনটিনের অনুবাদ যুগ যুগ ধরে সেই স্বাদ মিটিয়ে আসছে। কিন্তু সবই ছোটদের জন্য। অ্যাডল্ট গ্রাফিক নভেল, তাও আবার বাংলায়, দেখলে চোখ ছানাবড়া হওয়ারই কথা। বাংলা সাহিত্যচিত্রে ক্রমবিলীয়মান এই জায়গায় এবার পা রাখলেন পরিচালক কিউ।
২০১১, সাদা-কালোয় 'গাণ্ডু' তৈরি করে উল্টো পথে হেঁটেছিলেন কিউ। বিতর্ক ও জনপ্রিয়তায় ছাপিয়ে গিয়েছিল তাঁর নন-লিনিয়ার গল্প বলার ধরণ। সৃজনশীল পথ ধরেই এবার তৈরি হল 'গাণ্ডুর মুন্ডু', কিউ এবং তাঁর টিমের তৈরি প্রথম অ্যাডাল্ট গ্রাফিক নভেল। ১৫২ পৃষ্ঠার এই উপন্যাসের অলংকরণ করেছেন সম্বরণ দাস, গল্প বেঁধেছেন সুরজিৎ সেন আর ক্যালিগ্রাফি ও ফ্রেমের দায়িত্ব সামলেছেন কিউ।
'গাণ্ডুর মুন্ডু' নভেলের কভার পাতা। অলংকরণ- সম্বরণ দাস
আরও পড়ুন, মহালয়া: ঐতিহাসিক দস্তাবেজের চিত্ররূপই বটে
''ইউরোপ ট্যুরে যাওয়ার আগের রাতে আমি আর কিউ আলোচনা করছিলাম গাণ্ডু ছবির পলিটিক্স (পলিটিক্স বলতে কাউন্টকালচার, অ্যানার্কিজম, অল্টারনেটিভ, আন্ডারগ্রাউন্ড আর্ট চর্চার মিশ্রণ) নিয়ে র্যাপ ছাড়া আর কী করা যায়? গাণ্ডু ছবিটা একটি সরলরেখায় চলেনা। ঠোক্কর খায়, অপমানিত হয়, হুমড়ি খেয়ে পড়ে... যার ক্ষোভ প্রকাশ পায় গানে। তখন আমি আর কিউ ভাবি গাণ্ডুকে সিনেমায় বন্দী না রেখে গ্রাফিক নভেলে মুক্তি দিলে কেমন হয়। তারপরেই গাণ্ডুর মুন্ডুর আইডিয়াটা আমাদের মাথায় আসে'', বলছিলেন সুরজিৎ সেন।
ছবিটা তৈরি হওয়ার আগে সুরজিৎ, কিউর সঙ্গে আলাপ ছিল না সম্বরণের। তারপর প্রায় ছয় বছরের শ্রমে তৈরি হল গ্রাফিক নভেল। সম্বরণের কথায়, ''চরিত্রগুলো ও শহরটাকে অন্যরকমভাবে খুঁজতে চেয়েছে এই নভেল। ছবি আঁকার ক্ষেত্রে কিছু সুবিধে রয়েছে যেটা সিনেমায় করা সম্ভব নয়, সেই জায়গায় অনেক বেশি স্বাধীনতা ও সৃজনশীলতা নিয়ে কাজ করা হয়েছে। বইমেলায় নভেলটা রিলিজ হওয়ার পর একদল মানুষ সন্দেহের চোখে দেখছেন, তবে এই প্রজন্ম উৎসাহী''।
ক্যালিগ্রাফি ও ফ্রেমের দায়িত্ব সামলেছেন কিউ। অলংকরণ- সম্বরণ দাস
আরও পড়ুন, সেলুলয়েডে স্বপ্না বর্মনের চরিত্রে সোহিনী, স্বাগত জানালেন কোচ
তবে সুরজিৎ সেনের মত, ''গাণ্ডু সিনেমাটা যেমন নতুন প্রজন্ম লুফে নিয়েছিল, এই গ্রাফিক নভেলটা থেকেও তারা একটা কিক পেয়েছে, নইলে ২৫ জানুয়ারি থেকে এখনও পর্যন্ত ২০০টা বই বিক্রি হয় কী করে''? এই বই তৈরির নেপথ্য গল্প বলতে গিয়ে সুরজিৎ আরও বলেন, ''একটি আর্ট ইভেন্টে সম্বরণের সঙ্গে আলাপ হয়। সম্বরণ অসম্ভব পরিশ্রম করেছে। বেশ কয়েকটা পাতা ফাইনাল হয়ে যাওয়ার পরও ঠিক জমছে না বলে বাতিল করি। ওর মতো বুদ্ধিদীপ্ত আর্টিস্ট বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। এরপর প্রকাশকরা সুশীল সমাজোচিত নয় বলে পিছিয়ে গিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত নিজেরাই প্রকাশ করলাম। এই হল ৬ বছরের জার্নির টিপ অফ দ্য আইসবার্গ''।
ছবিটা তৈরি হওয়ার আগে সুরজিৎ, কিউর সঙ্গে আলাপ ছিল না সম্বরণের।
কলেজস্ট্রিটে পাওয়া যাচ্ছে 'গাণ্ডুর মু্ন্ডু'। পাওয়া যাচ্ছে দক্ষিণ কলকাতার একটি কাফেতেও। অনলাইনে কেউ বই কিনতে চাইলে we@oddjoint.in এ মেইল করে অর্ডার করতে হবে। এ বইয়ের দাম ৪০০ টাকা।