তিনি বাঙালির সেই ভাঁড়ার, যাকে আগলে রেখে আজও বঙ্গজাতি বিশ্বদরবারে সমাদৃত হন। সাহিত্যের প্রাঙ্গণকে যিনি ফুলে ফলে সমৃদ্ধ করে দিয়ে গিয়েছেন এখনও তাঁর অন্বেষণে পাওয়া যায় এমনই কিছু অজানা তথ্য। গান-কবিতা-নাটক-উপন্যাস-প্রবন্ধ-গল্প লিখে আজ থেকে বহু বছর পরেও তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরই থাকবেন। কিন্তু তিনি যে কলম ধরেছিলেন সিনেমার জন্যও তা বোধহয় আমাদের অনেকেরই অজানা।
জার্মানির একটি ফিল্ম কোম্পানি ইউনিভার্সাম ফিল্ম এজি থেকে কবির কাছে একটি অনুরোধ পাঠানো হয় সিনেমার জন্য গল্প লেখার আর সেই অনুরোধের দুটি চিঠি লিখে পাঠিয়েছিলেন জার্মান স্টুডিও প্রধান মিস্টার কউফম্যান। যে চিঠি আজও সংরক্ষিত রয়েছে শান্তিনিকেতনে। এদিকে কলমে যার লেখা তিনি সেই অনুরোধ ফেলে দেনই বা কি করে? রবীন্দ্রনাথও পারেননি। ইংরেজিতেই লিখে ফেললেন সেই গল্প, নাম দিলেন 'দ্য চাইল্ড'।
আরও পড়ুন, অনুমতি না নিয়েই সুর রবির কবিতায়! সিনেমায় রবীন্দ্রসঙ্গীত তাঁরই হাত ধরে
সে সময়ের প্রখ্যাত পরিচালক হিমাংশু রাই এবং তাঁর জার্মান বন্ধু ফ্রানজ অস্টেনের সঙ্গে যৌথভাবে দ্য চাইল্ড পরিচালনা করার কথা ছিল। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। বিশ্বরাজনীতির কাছে থামল বিশ্বকবির কলম। ফ্যাসিজমের জমানায় জামার্ন স্টুডিয়োর মালিকানায় এল বদল। যারা কবিকে গল্প লেখার অনুরোধ জানিয়েছিলেন, পটপরিবর্তনে সে অনুরোধ রইল কেবল চিঠিতেই। তবে শুধু যে রাজনৈতিক পালাবদলেই দ্য চাইল্ডের ভাগ্য নির্ধারিত হল তাই নয়। ১৯২৯-৩০ এই সময়ে নির্বাক থেকে সবাকে আসার সময় ছিল সিনেমাজগতের। অতএব নিয়ম মেনে বদল আনতে হবে চিত্রনাট্যেও। শব্দ, সংলাপ সিনেমায় তাঁর রূপান্তরের জন্য বারংবার হস্তক্ষেপও করা হয় কবির চিন্তাভাবনায়।
সিনে জগতের প্রয়োজন মতোই বদল হল স্ক্রিপ্টে। কিন্তু বন্ধ হয়ে গেল গোটা প্রজেক্টটি। রবীন্দ্রনাথ কিন্তু থেমে থাকলেন না। আদ্যপান্ত ইংরেজি সিনেমার স্ক্রিপ্টকে বদলে দিলেন বাংলা কবিতায়। নাম দিলেন শিশুতীর্থ। যদিও তাঁর গড়ন অনেকটাই চিত্রনাট্যের মতোই। এরপর একাধিক নাটক লিখেছেন কবি। নিজের কবিতায় সুর দিয়ে তাকে উন্নীত করেছেন গানে। কিন্তু সিনেমার জন্য আর কোনওদিনও কলম ধরেছিলেন কি না, সে অন্বেষণ চলুক।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন