Sitara Movie Review: শব্দমালা গেঁথে একজন ঔপন্যাসিক যে দৃশ্যকল্প তৈরি করেন পাঠকের মনে, তার কোনও ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য অবয়ব নেই। কিন্তু তার অর্থ এই নয়, যে কোনও ছাঁচেই তাকে ঢেলে ফেলা যায়। পরিচালক আশিস রায়, সাহিত্যিক আবুল বাশারের উপন্যাস 'ভোরের প্রসূতি' অবলম্বনে যে 'সিতারা'-র নির্মাণ করেছেন সিনেমায়, তা দেখার পরে উপন্যাসটাই বরং একবার পড়ে ফেলা ভাল।
উপন্যাসটি লেখা হয়েছে প্রায় ৪০ বছর আগে। তাই পিরিয়ড নির্মাণ একটি চ্যালেঞ্জ ছিল। কিঞ্চিৎ কঠিন হলেও সেখানে সফল পরিচালক কারণ ছবির সিংহভাগ শুটিং হয়েছে চর এলাকায়। কিন্তু জাতীয় স্তরের সেরা কয়েকজন অভিনেতা-অভিনেত্রী, দক্ষ চিত্রগ্রাহক সত্ত্বেও 'সিতারা' পিছিয়ে যায় মূলত দুর্বল চিত্রনাট্য ও পার্শ্বচরিত্রের দুর্বল অভিনয়ের কারণে। চরের মানুষের ক্রাইসিসের সঙ্গে মুখ্য চরিত্রের ব্যক্তিগত জীবনের ট্র্যাজেডি মিলেমিশে যায় যে ছবিতে, সেই ছবির রাশ বার বার কেমন যেন ফসকে যায় পরিচালকের হাত থেকে।
আরও পড়ুন: আর একটি খুনের গল্প নয়, ‘৭ নম্বর সনাতন সান্যাল’ একটা আয়না
'সিতারা' এক নারীর গল্প যে নারী চায় একনিষ্ঠ প্রেম, সম্পর্কের ওম এবং সাংসারিক স্থিরতা। ঠিক যেমন রাষ্ট্রের পরিচয়হীন চরের মানুষ নাগরিকত্ব চায়। কিন্তু এই গল্পের কোনও চরিত্রই একমাত্রিক নয়। এই বহুমাত্রিকতা যতটা ভাল বোঝেন পাঠক উপন্যাসটি পড়ে, যাঁরা সেটি পড়েননি, শুধুমাত্র সিনেমাটি দেখে কিন্তু তা পুরোপুরি অনুধাবন করা সম্ভব হবে না দর্শকের পক্ষে।
চিত্রনাট্যটি দুর্বল হওয়ার কারণেই বেশিরভাগ চরিত্রই পুরোপুরি গড়ে ওঠেনি। তাই বেশ কিছু জায়গায় এক সিকোয়েন্স থেকে পরের সিকোয়েন্সে চরিত্রের চলনটি খাপছাড়া লাগে। নাসের, সুব্রত দত্ত, রায়মা সেন, বাংলাদেশের ফজলুল রহমান বাবু ও জাহেদ হাসান-এর অভিনয় ও ভাল চিত্রগ্রহণের কারণেই ছবি দেখার অভিজ্ঞতাটি অতটাও অসহ্য হয়ে উঠবে না হয়তো দর্শকের কাছে।
আরও পড়ুন: নতুন মোড়কে পুরনো আনন্দ ফিরিয়ে ‘লায়ন’-ই ফের ‘কিং’
পরিচালক হয়তো অনেক পরিশ্রম করেই নির্মাণ করেছেন 'সিতারা' কিন্তু ছবির বিষয়বস্তু, আবুল বাশারের উপন্যাসের রেফারেন্স, স্টারকাস্ট যতটা আশা তৈরি করে মনে, ছবি দেখার অভিজ্ঞতার সঙ্গে তা ঠিক মেলে না। সাহিত্যিক নিজে যদিও খুশি। তাঁর বক্তব্য, এত বৃহৎ প্রেক্ষাপট ২ ঘণ্টার ছবিতে আনাটা কঠিন এবং সেটা পরিচালক করে দেখিয়েছেন। দুর্ভাগ্যবশত, সিনেমার ক্ষেত্রে, একটি বড় জিনিসকে ছোট বাক্সে পুরে ফেলা মানেই তাকে ভাল বলা যায় না।
ছবির ডাবিং আরও একটি বড় সমস্যা। ১৯ জুলাই মোট পাঁচটি প্রদেশে একযোগে মুক্তি পেয়েছে এই ছবি। একাধিক ভাষার মানুষের কাছে ছবিটি পৌঁছে দিতে অনেক চেষ্টা করেছেন পরিচালক তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু বাংলায় দর্শক যখন ছবিটি দেখবেন, তখন বেশ কয়েকটি চরিত্রের সংলাপ বেশ অসহনীয় মনে হবে।
রাইমা সেনের অভিনয়েও তাল কেটেছে বেশ কিছু জায়গায়। চরের এক প্রান্তিক নারীকে কোনও কোনও দৃশ্যে শহুরে শিক্ষিত, সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চিত মনে হয়েছে। তবে যে দর্শক নেহাতই বাণিজ্যিক ছবি দেখে অভ্যস্ত, আন্তর্জাতিক ছবি সম্পর্কে কোনও ধারণাই নেই, বর্তমান সময়ের দেশী-বিদেশী চলচ্চিত্রের ভাষা কতটা বদলেছে, সেই সম্পর্কে অবহিত নন, তাঁদের কাছে 'সিতারা' নিঃসন্দেহে একটি অন্য রকম ছবি।
সেদিক থেকে দেখতে গেলে, উইকএন্ডে ছকে বাঁধা নায়ক-নায়িকার প্রেম-বিরহ-নাচাগানা না দেখে 'সিতারা' দেখতেই পারেন তাঁরা।