Rashid Khan Passed Away: জন্ম উত্তরপ্রদেশের বাদায়ুঁতে। তবে সুরের টানেই এ রাজ্যে চলে এসেছিলেন তরুণ অবস্থাতেই। সেই থেকে বাংলার মাটিতেই তাঁর অবাধ বিচরণ। এই বাংলাই শিক্ষার্থী রশিদ থেকে উস্তাদ রশিদ খান হয়ে ওঠার সাক্ষী। আর এই বাংলাতেই চির ঘুমে শায়িত থাকবেন ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের নক্ষত্র উস্তাদ রশিদ খান।
বাংলার প্রতি নিজের ভালবাসার কথা বারে বারে অকপটে বলেছেন শিল্পী রশিদ। ২০১২ সালে 'পদ্মভূষণ' পেয়ে এই বাংলাকেই সেই সম্মান উৎসর্গ করেছিলেন তিনি। বলেছিলেন, 'পশ্চিমবঙ্গ আমাকে অসম্ভব ভালবাসা দিয়েছে। আমাকে ভালবাসায় ভরিয়ে দিয়েছেন রাজ্যের মানুষ। আমিও ওঁদের খুব ভালবাসি। এই পুরস্কার আমার জন্য নয়, এই পুরস্কার পশ্চিমবঙ্গের, রাজ্যের মানুষের। তাঁদেরকেই এই পুরস্কার উৎসর্গ করলাম।'
তাঁর কণ্ঠের জাদুতে বুঁদ থাকে গোটা দুনিয়া। আর সেই রশিদ খান আগাগোড়াই ছিলেন বাংলার ভক্ত। রবীন্দ্র-নজরুলের বাংলায় যেমন সাম্প্রদায়িকতার কোনও স্থান নেই। তেমনই ছিল রশিদ খানের হৃদয়। ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী হলেও উস্তাদজি ছিলেন নিখাত সর্বধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এক মানুষ। তাঁর বাড়িতেই ঘটা করে হত সরস্বতী পুজো। নাকতলার সেই বাড়িতে প্রতিটি সঙ্গীত অনুরাগীর ছিল অবারিত দ্বার।
আরও পড়ুন- শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের জগতে নক্ষত্র পতন, চিরঘুমের দেশে উস্তাদ রশিদ খান
উস্তাদ রশিদ খানের গানের তালিম শুরু মামা ওস্তাদ নিসার হোসেন খানের হাত ধরে। এরপর কাকা গোলাম মুস্তফা খান ভাইপো রশিদের সঙ্গীত প্রতিভা লক্ষ্য করে রশিদ খানকে সাংয়িকভাবে মুম্বাইতে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। মাত্র ১১ বছর বয়সে রাশিদ তাঁর প্রথম সঙ্গীতানুষ্ঠান করেন। ১৯৭৮ সালে তিনি দিল্লিতে একটি আইটিসি কনসার্টে পারফর্ম করেন। তারপর ১৯৮০ সালের এপ্রিল মাসে ১৪ বছর বয়সে কলকাতায় চলে আসেন তরুন রশিদ। সেসময় তাঁর মামা নিসার হুসেন খান আইটিসি সঙ্গীত গবেষণা অ্যাকাডেমিতে যোগ দিয়েছিলেন। ইনায়েত হুসেন খাঁ-সাহিব প্রতিষ্ঠিত রামপুর-সাসওয়ান ঘরানার শিল্পী রশিদ খান৷ মূলত শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের শিল্পী রশিদ খান।
একাধিক পুরস্কার রয়েছে উস্তাদ রশিদ খানের ঝুলিতে৷ ২০০৬ সালে তিনি পদ্মশ্রী, পাশাপাশি সঙ্গীত নাটক আকাদেমি পুরস্কারে ভূষিত হন। তারপর ২০১০ সালে গ্লোবাল ইন্ডিয়ান মিউজিক অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডস, ২০১২ সালে বঙ্গভূষণ পুরস্কার, ২০১২ সালে মহাসঙ্গীত সম্মান পুরস্কার, ২০১৩ সালে মির্চি মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস, ২০২২ সালে শিল্পকলার ক্ষেত্রে ভারত সরকার কর্তৃক ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার পদ্মভূষণে ভূষিত হন রশিদ খান৷
মূলত শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের শিল্পী হলেও ফিউশন, বলিউড এবং টলিউডের একাধিক সিনেমায় রয়েছে রশিদ খানের প্রতিভার সাক্ষর। তার মধ্যে 'যব উই মেট' সিনেমার 'আওগে যব তুম ও সাজনা' প্রবল জনপ্রিয়। এছাড়া, 'হাম দিল দে চুকে সনম', 'মাই নেম ইজ খান', 'রাজ ৩'-র মতো বলিউড ছবিতেও সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন উস্তাদজি। টলিউটে 'মিতিন মাসি', 'বাপি বাড়ি যা', 'কাদম্বরী'-র মতো বাংলা ছবিতেও গানে মাত করেছেন এই নক্ষত্র। এছাড়াও রয়েছে তাঁর একাধিক গজলের অ্যালবাম। গেয়েছেন রবীন্দ্রনাথের গান। তাঁর কণ্ঠে উস্তাদ বড়ে গুলাম আলির ঠুংরি 'ইয়াদ পিয়া কি আয়ে' যেন এক ইতিহাস।