পঞ্চমের জন্মদিনে '১৯৪২: আ লাভ স্টোরি'র না শোনা সুর সামনে আনলেন কবিতা কৃষ্ণমূর্তি

"অন্তরাটা কোনোদিন রেকর্ড হলো না, তবে সুরটা আমার মাথায় বসে ছিল। কবে সেই ১৯৯২-তে রিহার্সাল করেছিলাম, কিন্তু সব মনে ছিল আমার।"

"অন্তরাটা কোনোদিন রেকর্ড হলো না, তবে সুরটা আমার মাথায় বসে ছিল। কবে সেই ১৯৯২-তে রিহার্সাল করেছিলাম, কিন্তু সব মনে ছিল আমার।"

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
kavita krishnamurti

ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডস-এর মঞ্চ, ১৯৯৫। সেবছরের সেরা ফিমেল প্লেব্যাক সিঙ্গার-এর পুরস্কার নিতে মঞ্চে উঠছেন বলিউডের অতি জনপ্রিয় গায়িকা কবিতা কৃষ্ণমূর্তি। ছবির নাম '১৯৪২: আ লাভ স্টোরি', গান, 'প্যায়ার হুয়া চুপকে সে'। জীবনের প্রথম ফিল্মফেয়ার পুরস্কার হাতে নিচ্ছেন, অথচ চোখ জলে ভরে আসছে কবিতার। কারণ যিনি না থাকলে এই গান গাওয়াই হতো না তাঁর, সেই সুরের যাদুকর রাহুল দেববর্মণ আর নেই। মাত্র কয়েক মাস আগে চিরদিনের মতো হারিয়ে গিয়েছেন 'আরডি'। তাঁর জীবনের শেষ ছবির গানের অভূতপূর্ব সাফল্য দেখেছেন পরপার থেকে।

Advertisment

সেই দিনটির কথা মনে রেখেই এবছর আরডি স্মরণে একটি বিশেষ ভিডিও অনলাইনে প্রকাশ করেছেন কবিতা, এবং এই উদ্যোগে পাশে পেয়েছেন গায়ক তথা মিউজ়িক অ্যারেঞ্জার জলি মুখার্জিকে। যোগসূত্র সেই '১৯৪২: আ লাভ স্টোরি'। কবিতার কথায়, "অনেকদিন ধরে আমার মনে ছিল পঞ্চমদার সেই সুরটার কথা, যা আমি প্রথমবার শুনি স্যান্টাক্রুজ়ে ওঁর বাড়িতে 'কুছ না কহো' গানটার রিহার্সাল করতে গিয়ে। গানের একটা অন্তরা উনি আমাকে শিখিয়ে বলেছিলেন, 'দেখ কী ভালো অন্তরাটা, তুই একটা আলাদা গান কর এটা দিয়ে, আমি আলাদা একটা 'কুছ না কহো' বানাই'।"

কিন্তু বাদ সেধেছিলেন রিহার্সালে উপস্থিত ছবির পরিচালক বিধু বিনোদ চোপড়া। বলেছিলেন, "আলাদা ট্র্যাক করলে আমার কোম্পানির সমস্যা হবে দাদা, আপনি শানুর ট্র্যাকেই ফিমেল ভয়েসটা দিয়ে দিন।" অগত্যা তাই করেন আরডি, কিন্তু এই ঘটনার কথা ভোলেন নি কবিতা। "অন্তরাটা কোনোদিন রেকর্ড হলো না, তবে সুরটা আমার মাথায় বসে ছিল। কবে সেই ১৯৯২-তে রিহার্সাল করেছিলাম, কিন্তু সব মনে ছিল আমার। হঠাৎ এবছর ভাবলাম, পঞ্চমদার জন্মদিনে ওই অন্তরাটা আমি গাইব।"

Advertisment

যেমন ভাবা তেমন কাজ। জলি মুখার্জিকে ফোন করলেন কবিতা। ছোটবেলা থেকেই আরডি-র সান্নিধ্য পেয়েছেন যে জলি, আরডি-র দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পী ভানু গুপ্তের আত্মীয় হওয়ার সুবাদে। তাঁকে এই গানের ট্র্যাক বানিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানালেন কবিতা। সানন্দে রাজি হলেন জলি, এবং মাত্র তিন-চারদিনের মধ্যেই তৈরি হয়ে এসেও গেল ট্র্যাক।

কিন্তু এখানেই শেষ নয়। আরও একটা জরুরি ফোন বাকি ছিল, গানের গীতিকার জাভেদ আখতারকে। তাঁর কাছে কবিতার অনুরোধ, গানের সেই অংশের কথাগুলো যদি পাওয়া যায়, কারণ কবিতার পক্ষে এখন আর অত বছর আগে লেখা কথা খুঁজে বের করা সম্ভব নয়। দু'দিনের মধ্যে ফোন করে গানের কথা দিয়ে দিলেন জাভেদ আখতার।

সমস্ত গুছিয়ে নিয়ে বুধবার অবশেষে বিধু বিনোদ চোপড়াকে ফোন করেন কবিতা। হাতে সময় নেই, আজই অনলাইনে দিতে হবে গান। বিধু বিনোদের কাছে জানতে চাইলেন, গানের সঙ্গে ছবির কিছু ফুটেজ ব্যবহার করা যাবে কিনা। বিনা বাক্যব্যয়ে সম্মতি দিলেন পরিচালক। "যেভাবে সকলে মিলে কাজটা করে ফেললাম, তাকে পঞ্চমদার আশীর্বাদ ছাড়া আর কী বলব?" প্রশ্ন কবিতার। "আজ এত বছর পরে আমার সুরটা মনে আছে, অথচ আলাদা করে শুনলে মনে হবে, কোনোভাবেই এই মুখড়ার সঙ্গে এই অন্তরা মিলতে পারে না। এটাই ছিল পঞ্চমদার জিনিয়াস।"

আরও পড়ুন: আরডি বর্মণের সুরে সেরা দশ বাংলা গান

কাজের অভাবে জীবনের শেষ কিছু বছর যে অনিশ্চয়তা ঘিরে ছিল পঞ্চমকে, এই গানের প্রসঙ্গে সে কথাও উঠে আসে। কবিতার কথায়, "কত ছোট ছোট স্টুডিওতে আমি ওঁর জন্য গেয়েছি, যখন ওঁর সময় খারাপ যাচ্ছে। বড় বড় ছবির গান, অথচ একটাও ছবি চলে নি। এরকমই একটা স্টুডিওতে আমাকে বলেছিলেন, 'দেখ, তোকে দিয়ে কোথায় কোথায় গাওয়াচ্ছি, কিন্তু মনে রাখবি, একটা ভালো ছবিতে একটা হিট গান তোকে দিয়ে গাওয়াবই'।"

কথা রেখেছিলেন আরডি। কবিতাকে ফোন করে বলেছিলেন, "ভালো ছবি পেয়েছি, বিধু বিনোদ চোপড়ার ছবি, এই ছবিটা আমার সময় বদলে দেবে দেখিস।" তাঁর জন্য যে গানটি ভেবেছিলেন পঞ্চম, তা শুনে প্রথমে ঘাবড়ে গিয়েছিলেন কবিতা। আরডি-কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, আদৌ তিনি এই গান গাইতে পারবেন কিনা। জবাব ছিল, "তুইই গাইবি, কোনও সিনিয়রের কথা ভাববি না।"

সেই গান যে বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল, তা দেখে যেতে পারেন নি পঞ্চম। স্বপ্নের কামব্যাক তাঁর কাছে স্বপ্নই থেকে গিয়েছিল। আশির দশকের মাঝামাঝি মীরাট শহরে একটি শোয়ের পর চোখে জল নিয়ে কবিতা কৃষ্ণমূর্তি, পূর্ণিমা, শৈলেন্দ্র সিংদের পঞ্চম বলেছিলেন, "তোমাদের আমি ভুলব না। আমার খারাপ সময়ে পাশে ছিলে তোমরা। এত অল্প টাকায় আমার সঙ্গে শো করলে।"

ভোলেননি পঞ্চম। ভোলেননি কবিতাও।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন