রহস্য, বাঙালি রহস্যের গন্ধ পেলে যে কী পরিমাণ আনন্দ পায়, সেকথা আর বলে দিতে হয় না। বলা বাহুল্য, বাঙালি সবেতেই রহস্য খুঁজে নিতে পারে। আর, যখন খোদ দেব ব্যোমকেশ হিসেবে এই রহস্যের খোঁজ করতে বেড়িয়ে পড়েছিলেন, তখন আর আপামর বাঙালিকে পায় কে? প্রথমবার, গোয়েন্দা গল্পে নিজেকে শুরু থেকে শেষ মুড়ে ফেলতে চেয়েছেন দেব, পারলেন কতটা?
চোখ কান নাক, এবং ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় খোলা রাখলেই যে শুধু ভাল গোয়েন্দা হওয়া যায় এমনটা নয়। বুদ্ধি, এবং সাহস দিয়ে পরখ করে নিতে হয় সবকিছুই। ব্যোমকেশ এবং দুর্গ রহস্যের গল্পের সঙ্গে আদৌ জাস্টিস করতে পারলেন দেব? ছবির শুরু থেকেই টানটান উত্তেজনা বজায় রেখেছেন পরিচালক বিরসা দাশগুপ্ত। যদিও, গল্পের কৃতিত্ব শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের। দূর্গরহস্যের গল্প মোটামুটি অনেকেরই জানা। আলীবর্দী খাঁ এবং তাঁর প্রিয় রাজারাম, জয়রামের দুর্গ তথা সম্পত্তি নিয়ে। এমন একটি রহস্যের মোড়কে ফেলা গল্পে দেব ব্যোমকেশ হিসেবে নিদারুণ চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন এটুকু বলাই যায়। ব্যোমকেশের আরেক নাম মহাদেব, তাই 'গোলন্দাজে' অনির্বাণের মহাদেব সাজের মতোই, এবার দেবকে নীল-ধূসরে ভোলানাথ অবতারেই স্ক্রিনে এন্ট্রি নিতে দেখা যাবে।
ছবির প্রথমার্ধ ঘড়ির কাটা গুনে ১ ঘণ্টার। কিন্তু, এই এক ঘণ্টায় কলকাতা থেকে দুর্গের আনাচে কানাচে, নানা রহস্যের গন্ধ এবং দেব - অজিত, পান্ডেজ্বির সন্দেহ, তথা গোয়েন্দাগিরি অনেকটাই এগোবে। দেবের বাংলা বলার ধরনে যদিও আগের থেকে অনেকটাই উন্নতি ঘটেছে তারপরেও, ডায়লগ এর ক্ষেত্রে আরেকটু হাত পাকানোই ভাল। হালকা অ্যাকশন, এবং অনেকটা অবজারভেশন...নিজেকে ব্যোমকেশ হিসেবে পর্দায় ফুটিয়ে তুলতে খামতি না রাখলেও, বডি ল্যাঙ্গুয়েজে আপ টু দি মার্ক ছিল না বললেই চলে। রহস্য, রোমাঞ্চ, সাপের আনাগোনা থেকে দুর্গের অন্দরে আসল দোষীকে মুখোশ টেনে বের করে আনার যে অদ্ভুত এক গল্পের বাঁধন, সেই উত্তেজনা বিরসা ভালই আটকে রেখেছেন।
অন্যদিকে, রয়েছেন অজিত অর্থাৎ অম্বরিশ। এককথায়, দুর্গরহস্যে অজিতের চরিত্র বেশ অন্যরকম। শুরুর দিকে তাঁকে সত্যবতীর কেয়ারটেকার মনে হলেও, একটা সময় পর সে যে লেখকের সঙ্গে সঙ্গে আদ্যোপান্ত একজন গোয়েন্দাই একথাও ফুটে উঠবে। অভিনেতা হিসেবে অম্বরিশ ফুল মার্কস! কথায় বলে একজন সাহিত্যিকের মধ্যে উত্তম রসবোধ থাকা নিদারুণ প্রয়োজন, এক্ষেত্রে অজিতের চরিত্রকেও বিরসা সেভাবেই বেঁধেছেন। সিনেমা রিলিজের আগে, তাঁর চেহারা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও অজিত নিজের কাজে একদম ফাটাফাটি।
আশা যাক রুক্মিণীর কথায়। অর্থাৎ, নব্য সত্যবতী। সত্য আসলেই ব্যোমকেশের পিলার। গোয়েন্দা গিন্নীই রহস্যের মোড়ক উন্মোচন করলেন। সে সাহিত্যচর্চা করে, কবিতা পড়ে, ইতিহাস নিয়েও কম জ্ঞান নেই তাঁর। রুক্মিণী, চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন এবং একশোয় একশো না হলেও, অন্তত আশি শতাংশ নম্বর তাঁর প্রাপ্য। বেশ কিছু জায়গায়, অতিরিক্ত অভিনয় মনে হলেও, তিনি সামলে নিয়েছেন।
ছবি জুড়ে শুধু এই তিন না, ছিল তারকাদের ছড়াছড়ি। যাদের এই গল্প আগে থেকে জানা নয় কিংবা পড়া নয়, তাদের প্রতি মুহূর্তেই সন্দেহের তীর বদলাতে থাকবে। কিন্তু, অন্যান্য অভিনেতাদের মধ্যে রজতাভ দত্ত, শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়, সত্যম ভট্টাচার্য- স্ক্রিনে কীভাবে দাপিয়ে অভিনয় করতে হয় তার প্রমাণ যেন সিন বাই সিন দিয়ে দিলেন।