আমি ভারতীয়, এই আমার পরিচয়... এক বীর সন্তানের গাঁথা অর্থাৎ পর্দায় শেষ শট পর্যন্ত জিইয়ে রাখা খুবই কঠিন। বিশেষ করে, তাঁর চলার ধরণ থেকে কথা বলার স্টাইল কিংবা পোশাক পড়া, সবকিছুতেই থাকতে হয় পারফেকশন। ইতিহাস বলে, তিনি হাত দিয়েই বাঘ মেরেছিলেন, তারপর থেকেই যতীন মুখোপাধ্যায় হয়ে উঠলেন বাঘা যতীন। আর পর্দার বাঘা যতীন দেব, কত নম্বর পেলেন নিজের নতুন ছবির খাতিরে।
শুরুতেই রেল স্টেশন, দেবের এন্ট্রিতেই মারাত্মক উত্তেজনা। অনুশীলন সমিতি থেকে বিশ্বযুদ্ধ, একাধিক চরিত্র। বাঘা যতীনের পাশাপাশি, অরবিন্দ ঘোষ, বারীন ঘোষ, পিংলে সাহেব, কিংবা ক্ষুদিরাম বসু...কাস্ট বাছা হয়েছে বেশ সাবধানী হয়েই। পুজো রিলিজ মানেই উত্তেজনা। দেব এবার এক স্বাধীনতা সংগ্রামীর ভূমিকায়। বডি ল্যাঙ্গুয়েজ হোক কিংবা, ডায়লগ বলার স্টাইল, দেবকে খুব সন্তর্পনে সংলাপ বলতে দেখা গেল। কিছু সময় এমনও মনে হতে পারে, তিনি অতিরিক্ত সতর্ক হয়েই কাজটি করছেন। দেশের মুক্তিযুদ্ধে সামিল হয়েছিলেন বাঘা যতীন। লুকিয়ে, সকলের আড়ালে দেশমাতৃকার সেবায় নিজের প্রাণ পাত করেছিলেন। দেব, যেই যেই মুহুর্তে বলছেন বন্দে মাতরম, তাঁর চোখে এই উজ্জ্বল ভাব স্পষ্ট। অভিনেতা প্রথম দৃশ্য থেকেই সামলে নিয়েছেন বারবার। দেবের অভিনয়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ মেলাতে পেরেছেন সেইসব ইতিহাসের দিনগুলো। বইয়ের পাতায় পড়া বুরিবালাম জঙ্গলের সেই যুদ্ধ হোক কিংবা রোদ্দা রাইফেল লোপাট, প্রতিটা ঘটনা যেন মানুষ মিলিয়ে নিচ্ছিলেন নিজের মত করে।
যেহেতু ঐতিহাসিক ছবি, পার্শ্ব চরিত্রদের ভূমিকা খুবই বেশী। সুদীপ্তা চক্রবর্তী অনবদ্য। ঠিক যেন বাস্তবের বিনোদবালাকে দেখছেন দর্শক। বাঘা যতীনের জীবনে তাঁর দিদির ভূমিকা ছিল অনবদ্য, সুদীপ্তা সেটি যথেষ্ট ফুটিয়ে তুলেছেন। এত সাবলীল অভিনয়, সুদীপ্তার আত্মবিশ্বাসের একটুও অভাব দেখা যায়নি। সঙ্গে রয়েছেন সৃজা দত্ত। তিনি নবাগতা, তাও এত দাপুটে অভিনেতাদের মাঝে নিজেকে মেলে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। ইন্দুবালার কথা সেভাবে কোথাও বর্ণনা করা নেই। তাও, সৃজা যথেষ্ট ম্যাচিওর।
শুটিং লোকেশনের কথা বর্ণনা করতেই হয়। কলকাতার বেশ কিছু জায়গায় শুটিং করা হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে উড়িষ্যার ঘন জঙ্গলেও রয়েছে ক্লাইম্যাক্স এর এক বিরাট ধাপ। গল্পের ধাঁচে, আরেকটু পরিবর্তন আনতে পারতেন পরিচালক। পরপর যেভাবে ঘটনা গুলি দেখানো হয়েছে, তাতে আরেকটু গবেষণা হলে মন্দ হত না। অন্যদিকে রয়েছে VFX। বাঘ মারার দৃশ্যটি আরও জমতে পারত। ছবির মূল একটি জায়গা তবে, বেশ খেলো লেগেছে। দর্শকদের অন্তত এটাই মনে হয়েছিল, এর আগেও সিংহের কোপে পড়েছিলেন দেব। তখন আসল সিংহকে দিয়েই কাজ সারা হয়েছিল। এক্ষেত্রে তেমন হলেই ভাল হতো।
ছবির বেশ গুরুত্বপূর্ন একটি অংশ হল BGM... ছবির স্বার্থে যেকটা BGM ব্যবহার করা হয়েছে, শিহরণ জাগানো। স্পয়লার নয়, তবে এই ছবির এক গুরুত্বপূর্ন ভূমিকায় রয়েছেন মীর আফসার আলী। কীভাবে? সেটি দর্শক পরে দেখবেন। বাঙালিকে উদ্বুদ্ধ করা হোক, কিংবা শাসকদলের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলার আগুনখেকো বাণী, বাঘা যতীন হিসেবে দেব যথেষ্ট চেষ্টা করেছেন। বাঙালি তথা ভারতবাসীর ঝুলি ভরবে এক অনন্য গল্প দেখে।
মতামত এতই, শেষ দৃশ্যে চোখের জল বাঁধ মানবে না। দেব, দর্শককে কাঁদিয়ে ছেড়েছেন। আর এতেই তাঁর জয়। যে চরিত্র তিনি বেছে নিয়েছিলেন, তাতে তিনি উত্তীর্ণ।